সোলার প্যানেল স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদনের আগে বিল প্রদান করেছেন ডোমার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা!
https://www.obolokon24.com/2020/06/solar.html
নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় প্রকল্প অনুমোদনের আগেই বিল প্রদানের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে।
২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ডোমার উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির সোলার হোম সিস্টেম, সোলার স্ট্রীট লাইট ও অন্যান্য সোলার সিস্টেম স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদনের আগে একটি প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান করেছেন ওই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, ডোমার উপজেলার জন্য এসব প্রকল্পের সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য ইডকল ‘সাসটেইন’ নামের প্রতিষ্ঠানটিকে নির্বাচন করে পত্র প্রদান করেন চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারী। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারী প্রকল্প তালিকা অনুমোদনের জন্য উপজেলা থেকে জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। জেলা কমিটি সেটির অনুমোদন দেয় ৫ মার্চ। ওই প্রকল্প অনুমোদনের আগে উপজেলা এবং জেলা কমিটির সভাপতিকে অবগত না করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ওই কাজের বরাদ্দ ৮১ লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ৪১ লাখ টাকা প্রদান করেন তার পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে (সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড)। এরপর তিনি উপজেলা কমিটির সভাপতিকে অবহিত বা ফাইলনোট অনুমোদন ছাড়াই গত ১০ মার্চ জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা বরাবরে এ সংক্রান্ত একটি পত্র প্রেরন করেন ।
নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নে সহযোগী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করে দেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পাণী লিমিটেড (ইডকল)। ডোমার উপজেলার ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইডকল ‘সাসটেইন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে সহযোগী নির্বাচন করে দেয়। কিন্তু ডোমার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান নির্দেশনার ব্যাত্যয় ঘটিয়ে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে (সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড) দিয়ে কাজ করান। এমন অনিয়মে গত চলতি বছরের ১০ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন সাসনেইনের নিবার্হী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আজিম উদ্দীন সরকার।
উল্লেখ্য যে, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) ও গ্রমীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির প্রকল্প গ্রহন ও বাছাই করে অনুমোদনের জন্য উপজেলা কমিটি জেলা কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের জন্য দাখিল করবেন। জেলা কমিটি অনুমোদনের পর উপজেলা কমিটি এসব প্রকল্পের অধীনে সোলার সিস্টেম স্থাপনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পাণী লিমিটেড (ইডকল) অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করবেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতি সাপেক্ষে বিল প্রদান করা যাবে। এসবের কিছুই মানা হয়নি ডোমার উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুরের ‘সাসটেইন’ নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আজিম উদ্দীন সরকার বলেন, ‘ইডকল থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরও আমাকে কার্যাদেশ প্রদান করেননি পিআইও। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইডকলকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছি। ইডকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হয়ে এর বেশী কিছু আর বলতে পারি না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বিধিমোতাবেক ফাইলনোট অনুমোদনের মাধ্যমে বিলের চেক প্রদান করা হয়েছে’।
বিষয়টির ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা এসএ হায়াৎ বলেন,‘এটি একটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা শবনম বলেন,‘এবিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানকে গত ১ জুন কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। তিন দিনের সময় দিয়ে নোটিশ প্রদান করা হলেও তিনি বিলম্বে উত্তর প্রদান করেছেন। তার প্রদত্ত উত্তর পর্যালোচনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
প্রকল্প অনুমোদনের আগে কোনভাবেই চেক প্রদান করতে পারেন না উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অনুমোদনের আগে চেক কিভাবে দিতে পারেন ? আমরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার ওই বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছি’।