নীলফামারীতে ক্যাপরি পক্স লাম্ফি স্কিন রোগে সহস্রাধীক গরু॥৯ গরুর মৃত্যু
https://www.obolokon24.com/2020/06/cow.html
নীলফামারী প্রতিনিধি॥ ক্যাপরি পক্স ভাইরাজের সংক্রমনে গবাদি পশুর মাঝে ব্যাপক হারে লা¤িপ স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে নীলফামারী জেলাজুড়ে সহস্রাধীক গরু আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি মারা গেছে ৯ টি গরু। বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমনের মধ্যেই গরুর ওই ভাইরাস জনিত রোগে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গরু খামারী ও কৃষকরা। বিশেষ করে কোরবানীর ঈদ ঘিরে গরুর এই রোগ বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় প্রাণী সম্পদ সুত্র বলছেন, গবাধী পশুর রোগের এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিস্কার হয়নি। মশা-মাছিবাহিত ওই রোগটি মূলত ছড়িয়ে পড়েছে। আজ সোমবার(২২ জুন/২০২০) জানা গেছে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর গ্রামে ৫টি, জেলা সদরের বাহালিপাড়া গ্রামে ২টি ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিতাই গ্রামে ২টি সহ ৯টি গরু মারা গেছে।
খামারী ও কৃষকরা বলছেন গবাধী পশুর শরীরে ক্যাপরি পক্স ভাইরাজের লাম্ফি স্কিন রোগে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। অথচ এ রোগের কোন ঔষধ পাওয়া যাচ্ছেনা।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া সরকার পাড়া গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী জানায়, আমার তিনটি গরু ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও এই গ্রামের প্রত্যেক বাড়ীতে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে শতাধিক গরু। তার গরু তিনটির পিছনে ১০ হাজার টাকার খরচ করেও সুস্থ হয়ে উঠেনি। একই পাড়ার আশরাফ আলী জানান, খামারীসহ ব্যাক্তি পর্যায় কোরবানীর জন্য পালন করা গবাদী পশুর মধ্যে নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমন দেখা দিয়েছে। আবার অনেকেই বাধ্য হয়ে আক্রান্ত পশু বিক্রিও করছে। তিনি জানান, এই পাড়ায় কিছুদিন আগে মঞ্জুরুল নামে এক কৃষকের ৭০ হাজার টাকা দামের শাহী ওয়াল জাতের একটি গরু ও সুবল চন্দ্র রায়ের একটি বকনা বাছুর মারা গিয়েছে। তারা গরু মরার শোকে কাতর হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রাণী সম্পদের লোকজনকে খবর দিলেও পাওয়া যায় না।
উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের গৃহিনী আনোয়ারা বেগম, লতিফুর রহমান জানান, কোন বাড়ী বাদ নেই সবার গরুর অসুখ হইছে। জানতে চাইলে বলেন, প্রথমে জ্বড় হয় তারপর গুটি গুটি হয়ে ফুলে যায়। তারপর ঘা হয়ে পেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়। সাথে কাঁপুনি জ্বড় ও ব্যাথা অনুভব হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকারী ডাক্তারকে ফোন দিলে বলে, কোন দিকে যাব ভাই, সবদিকে একই অবস্থা। বারবার ফোন দিয়েও দেখা মেলিনি সরকারী ডাক্তারের।
উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দিঘলটারী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রতিটি বাড়ীতে এই রোগ দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতে টাকা পয়সা হাতে না থাকায় আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশুর মালিককে। দেখা মেলেনি সরকারী চিকিৎসকের।
জেলার সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক মুঠোফোনে জানান, এবারে নতুন এই ‘লাম্ফি স্কিন’ রোগটি দেখা গিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে মেডিকেল টিম কাজ করছে। পাশাপাশি গোট-টিস্যু ভ্যাকসিন পশুর ওজন ভেদে প্রতিটি গরুকে ২-৩ মিলিঃ করে দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত পশুকে লক্ষন দেখে চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়।
সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম জানান, জনবল সংকটের কারনে কিছুটা বিলম্ব হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনটি ভ্যাটেনারী মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এতে তিনজন ডাক্তারের নেতৃত্বে উপজেলার পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে গোট-টিস্যু ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, নীলফামারী সদরে ১ লাখ ৫০ হাজার গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৫টি গরুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোনাক্কা আলী মুঠোফোনে জানান, প্রায় এক মাস ধরে এই ক্যাপরি পক্স ভাইরাসটি গ্রাম অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অসুখটিকে ‘ল্যাম্ফি স্কিন ডিজিস বলা হয়। তিনি জানান, রোগ প্রতিরোধে মশা, মাছি থেকে গবাধী পশুকে নিরাপদে রাখার জন্য মশারী ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। #