সৈয়দপুরে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের টাইলস্ ভাঙচুর এবং জায়গায় দখলের অপচেষ্টার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা ঃ স্মারকলিপি প্রদান
https://www.obolokon24.com/2020/05/saidpur_14.html
নীলফামারীর সৈয়দপুরে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ চত্বরে ক্রিকেট খেলার জন্য একটি পাকা পিস তৈরি, টাইলস্ ভাঙচুর এবং আশপাশের জায়গায় টিনের ঘেরা দিয়ে দখলের অপচেষ্টার প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সঙ্গে এ সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে সৈয়দপুর উপজেলা নিবাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। বৃহম্পতিবার দুপুরে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটি ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা সৈয়দপুর উপজেলা নিবাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাসিম আহমেদের কাছে ওই স্মারকলিপিটি প্রদান করেন।
শহরের শহীদ ক্যাপ্টেন মীঢ়ধা সামশুল হক সড়কের নির্মাণাধীন শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের অফিস চত্বরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভা বক্তব্য রাখেন শহীদ স্মৃতি স্মম্ভ বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মহসিনুল হক মহসিন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত মো. রফিকুল ইসলাম বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা একেএম রাশেদুজ্জামান রাশেদ, সংস্কৃতি কর্মী আতাউর রহমান ময়না, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ আলী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহসিন মন্ডল মিঠু প্রম‚খ।
সভায় বক্তারা শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ চত্বরে ক্রিকেট খেলার জন্য পাকা পিচ তৈরি, স্মৃতি স্তম্ভে লাগানো টাইলস্ ভাঙচুর এবং এর আশেপাশের জায়গায় টিনের ঘেরা দিয়ে ক্রমান্বয়ে দখলের অপচেষ্টার ঘটনার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে এ সব ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানানো হয়।
পরে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে ইউএনও বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদ শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটির স্মারকলিপিটি গ্রহন করেন।এ সময় তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
প্রসঙ্গত, মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে অবাঙ্গালী (উদর্‚ভাষী) অধ‚্যষিত উত্তরের জেলা নীলফামীর সৈয়দপুর শহরের প্রেক্ষাপট ছিল সম্প‚র্ণ ভিন্ন (আলাদা)। এখানে ম‚লতঃ দুইটি পক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। এর একটি পাকবাহিনী এবং অপরটি তাদের এদেশীয় দোসর স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। দীর্ঘ নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে সৈয়দপুরে ঠিক কত দিন মানুষ শহীদ হয়েছেন তা সঠিত কোন হিসেবে নেই। তারপরও বিভিন্ন স‚ত্রে মতে এদের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। সৈয়দপুরে এমনও অনেক পরিবার রয়েছে তাদের কোন সদস্যকে সেদিন বাঁচাতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার দীর্ঘদিনেও সৈয়দপুর শহরে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ কিংবা স্মৃতি সৌধ নির্মাণ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। যদিও বিভিন্ন সময়ে এ শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। অবশেষে বিগত ১৯৯৬ সালে শহরের শহীদ ক্যাপ্টেন মীঢ়ধা সামশুল হক সড়কে (বিমানবন্দর রোড) ডাকবাংলোর বিপরীতে এটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। যদিও এ শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের কাজ পুরোপুরি সম্প‚র্ণ হয়নি অদ্যাবধি। কিন্তু তারপরও গেল দুই বছর যাবত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এবং ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে নির্মাণাধীন শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্যদিয়ে শহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি স্বাধীনতা বিরোধী একটি কুচক্রী মহল রাতে আঁধারে নির্মাণাধীন শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে লাগানো ম‚ল্যবান টাইলস্ ভেঙ্গে ফেলছে। সেই সঙ্গে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে ক্রিকেট খেলার জন্য একটি পাকা পিচ। শুধু তাই নয়, শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের আশেপাশে বসবাসকারী কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের জায়গায় টিনের ঘেরা দিয়ে নিজেদের দখলের নেওয়া অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এতে শহীদ স্তম্ভের জায়গায় সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে।