কুড়িগ্রাম অভুক্ত পরিবারের ঘরে রাতে খাবার পৌছে দিলেন সদর থানার ওসি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : 
তখন সন্ধা ৭টা। শুক্রবার হলেও নিজ অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন কুড়িগ্রাম সদর থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজার রহমান। এমন সময় তার মোবাইল ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটি কল আসল। কলটি রিসিভ করতেই এক ব্যক্তি তাকে জানাল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের খয়রুল্লাপুর স্কুলের পাশের এক বাড়িতে দিনমজুর দম্পতি না খেয়ে ঘরের ভিতর পড়ে আছে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই অন্যের বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে সংসারের অন্য জোগায়। করোনা পরিস্থিতিতে কয়েকদিন ধরে তাদের কাজ বন্ধ থাকায় খাবার জোগাড় করতে পারেনি। না খেয়েই ঘরের ভিতর পড়ে আছে। ওসি ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন সে ঐ দম্পতির প্রতিবেশি।
খবরটি শোনার পর আর স্থির থাকতে পারলেন না সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান। সব কাজ ফেলে নিজেই থানা থেকে বের হয়ে ২০ কেজি চাল, ১০ কেজি আলু, ২ কেজি তেল, ১ কেজি লবন, ১ কেজি করলা, ২ কেজি বেগুন, ২ কেজি টমেটো আর ২টি সাবান নিয়ে গাড়িতে করে রওয়ানা দিলেন হলোখানা ইউনিয়নের সেই খয়রুল্লাপুর স্কুলের দিকে।
দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মোবাইলকারী ব্যক্তির সহায়তায় শুক্রবার রাত ঠিক ৮টায় পৌঁছালেন সেই দম্পতির বাড়ির ভিতরে। দম্পতির কর্তা ব্যক্তির নাম শুনে নিয়ে কনছার ভাই বলে ডাক দিলেন। ডাক শুনেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন দিন মজুর কনছার আলী ও তার স্ত্রী দুলালী বেগম। ঘর থেকে বের হয়েই বাড়ির ভিতরে কয়েকজন মানুষের হাতে চাল, ডালসহ অন্যান্য খাবার দেখে অবাক হলেন। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই জানতে পারলেন তাদের না খেয়ে থাকার খবর পেয়ে থানার ওসি নিজেই খাবার নিয়ে এসেছেন। এ অবস্থা দেখে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই হত বিহবল হয়ে পড়েন। দু’জনেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। ঘরে কোন চেয়ার না থাকায় তাদের বসতে দিতে না পারায় আপসোস করতে থাকলেন।
এসময় ওসি মাহফুজার রহমান ঐ দম্পতিকে কোন প্রশ্ন না করেই দুলালী বেগমকে চালের বস্তা দেখিয়ে দিয়ে রান্না উঠাতে বললেন। ওসির কথা মতো দুলালী বেগম বস্তা থেকে চাল বের করে চুলায় ভাতের হাড়ি উঠিয়ে দিলেন।
পরে ঐ দম্পতির চুলায় ভাত রান্না হতে হতে আরো আধা ঘন্টা তাদের সাথে গল্প করে ফিরে আসেন থানার ওসি মাহফুজার রহমান।
করোনা ভাইরাস রোধে সচেতনতায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিবারের প্রধান কর্তা ব্যক্তি কনছার আলী জানান, সে এবং তার স্ত্রী দু’জনই অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। কোন কোন দিন তার নিজের কাজ চলেতো স্ত্রীর কাজ থাকে না। আবার কোন কোন দিন তার স্ত্রীর দুলালীর কাজ চলেতো কাজ না জোটায় তাকে বসে থাকতে হয়। এর মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে কোন কাজ খুঁজে পায়নি কনছার আলী বা তার স্ত্রী। ঘরে টুকটাক যা ছিল তা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) পর্যন্ত চলছিল। তারপর আর কোন উপায় করতে পারেনি। রিলিফতো পাননি বরং প্রতিবেশি অনেকের কাছে ধারদেনা করতে চাইলেও কিছুই মেলেনি। ঘরে খাবার না থাকায় ১৪ বছর বয়সী একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলেকে তার নানার বাড়িতে রেখে এসেছেন বলে জানান তারা।
এব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজার রহমান জানান, থানার ওসি হিসেবে নয় একজন মানুষ হিসেবে কেউ না খেয়ে থাকার বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারি না। তাও আবার এই সময়ে। তাই খবর শোনার পরপরই আমি নিজেই সামান্য খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এই পরিবারের কাছে গিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এর আগেও সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের অনাহারী বৃদ্ধা জিন্না বেগমের বাড়িতে রাতে খাবার পৌছে দেন ওসি মাহফুজার রহমান।
অনাহারী মানুষের ঘরে খাবার পৌছে দেয়ার বিষয়ে নিউজ করার জন্য ওসি মাহফুজার রহমানের বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন ভাই আমি প্রচার বিমুখ মানুষ। নিউজ করে নিজেকে প্রচার করতে চাই না। আমি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি এটাই ভাগ্যের ব্যাপার। আপনারা এমন অসহায় মানুষের খবর পেলে আমাকে জানাবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাবো।     


পুরোনো সংবাদ

কুড়িগ্রাম 4569926939571675448

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item