করোনার প্রভাবে নাগেশ্বরীতে কর্মহীন শ্রমজিবী মানুষ অপ্রতুল ত্রাণ সহায়তা
https://www.obolokon24.com/2020/03/Kurigram_30.html
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। করোনার প্রভাবে লকডাউন হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ বালাদেশের বিভিন্ন এলাকাও। দেশব্যাপী বন্ধ হয়েছে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন দোকানপাট। ফলে তেমন নেই মানুষের আনাগোনাও। এতে করে কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজিবী মানুষ। কাজ না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর ঘরে খাবার না থাকায় অতি কষ্টে দিন যাপন করছেন স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। নিম্নবিত্ত এসব খেটে খাওয়া মানুষ বলছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাবার আগে যেনো তাদের না খেয়েই মরতে হবে। বিশেষ করে ভ্যান চালক, রিকশা চালক, পানের দোকান, চায়ের দোকানদাররা পড়েছেন মহা বিপাকে। এছাড়াও হোটেল শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকরাও কাজের অভাবে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে মহা কষ্টে দিন যাপন করছেন। এদিকে সরকার কর্তৃক ত্রাণ বিতরণ হলেও তা অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গরিব ও অসহায়দের অভিযোগ যাদের ঘরে খাবার আছে শুধু তারাই পাচ্ছেন এসব ত্রাণ, বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের অসহায় পরিবারগুলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং বেসরকারি সং¯'াগুলো শুধু মাস্ক, সাবান, সেনিটাইজার, হ্যান্ডগ্লোভ্স বিতরণ করলেও তাদের পেটের খাবার কেউ দিচ্ছেন না বলেও জানান খেটে খাওয়া মানুষগুলো। নাগেশ্বরী উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে জানা যায় এমন অনেক কষ্টের কথা। পৌর শহরের কলেজ মোড়, বাস্ট্যান্ড, ব্যাপারীহাটসহ বিভিন্ন মোড়গুলোতে দেখা যায় রিকশা চালকরা ভাড়ার আশায় সারিবদ্ধ হয়ে বসে আছেন রিকশা নিয়ে। পথে-ঘাটে লোকজন না থাকায় ভাড়া পাচ্ছেন না বলে জানান তারা। তারা আরও জানান তাদের স্ত্রী সন্তানদেরকে খাবার দেয়ার মতো ঘরে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ নেই। করোনা রোধে সরকার নিয়ম করলেও এসব নিয়মকে উপক্ষো করে পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে ভাড়ার খোঁজে ঘরের বাইরে বের হতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
আশার মোড় এলাকার রিকশাচলক আক্কাছ আলী, আতাউর রহমান, বালাটারীর আবুবক্কর সিদ্দিক, শফি মিয়া, বল্লভপুরের আব্দুস ছামাদ, মালভাঙ্গার আলম মিয়া জানায়, তারা পেটের দায়ে ঘরের বাইরে বেরোনোর নিয়মকে উপক্ষো করে রিকশা নিয়ে বের হলেও সারা দিনে মাত্র ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০টাকা পর্যন্ত আয় করেন। মাঝে মাঝে খালি পকেটে বাড়ি ফিরতে হয়। যা আয় হয় তা দিয়ে বাজার খরচও হয়না। ভাসানীমোড়ের মিজানুর রহমান বলেন সারাদেশে এটা-ওটা দিতে শুনি, কিন্তু নাগেশ্বরীতে কোনোদিন কিছুই পাইনি। চাকরিজিবীরা তাও মাস গেলে বেতন পায়। আমাদের দেখার কেউ নাই। সাপখাওয়া এলাকার ছোট বাচ্চু জানায় তার ১ মেয়ে ইন্টারে পড়েন। এছাড়াও তার ২ ছেলে রয়েছে। তার বাবাও অসু¯'। ছেলে মেয়েদের খাওয়া খরচ এবং বাবার ওষুধ কেনার টাকাও নেই তার। কাজ কাম না থাকায় এখন মহা বিপদে রয়েছেন। মোস্ত মিয়া নামের এক রিকশাচালক বলেন, পুলিশের মাইরের ভয়ে রিকশা নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হন না তিনি। স্ত্রী ও ৩ মেয়েসহ সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে তার। এমন অভিযোগ হাজারও খেটে খাওয়া মানুষের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, প্রথম ধাপে সাড়ে ৬ মেট্টিকটন চাল এবং ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে তা মুচি, সুইপার, নরসুন্দর এবং হোটেল শ্রমিকসহ মোট ৬শ ৫০ জনকে চাল, মশুর ডাল, আলু, লবণ, সাবান দিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৩০ মেট্টিকটন চাল বরাদ্দ পেয়ে একটি পৌরসভা এবং ১৪টি ইউনিয়নের ২ টন করে বিতরণ করা হয়েছে। এসব চাল সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যরা তাদের এলাকার কর্মহীন মানুষদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করবেন। এছাড়াও নির্মাণ শ্রমিক, ইজিবাইক, লোড-আনলোড বা মটর শ্রমিক, রিকশা চালক, ভ্যান চালকদের তালিকা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তাদেরকেও ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে।
আরও বলেন, আসলে চাহিদা তো অনেক। আমরা আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করছি যাতে অসহায় এবং গরিব লোকগুলো ত্রাণ সয়ায়তা পান। তাছাড়া সরকার এ ব্যাপারে বেশ আন্তরিক আছেন।