ঢাকা মেডিকেল ও ঢাকা বোর্ডের মেধাবী ছাত্র রাজকুমার এখন দিনমজুর !

মেহেদী হাসান উজ্জল,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
মেধাবী ছাত্র রাজকুমার শীল (৫৬)। দারিদ্রতার কষাঘাতে বেড়ে উঠলেও নামের সঙ্গে রয়েছে রাজকীয় ভাব,চেহারাতেও রয়েছে সেই ছাপ। মেধার খেলায় চমক দেখিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পাড়ি দিয়েছেন বেশ কয়েকটি কঠিন ধাপ। কিন্তু নিয়তির কি পরিহাষ! অবশেষে স্বাস্থ্য বিড়ম্বনায় যাত্রা থেমে যায় ।
ঢাকা বোর্ড থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সম্মিলিত মেধা তালিকায় উচ্চ স্থান পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন রাজকুমার শীল। তবে স্বাস্থ্য বিড়ম্বনায় জীবনের করুণ পরিণতিতে পড়েন তিনি। সেই বিড়ম্বনা এড়াতে পারলে, হয়ত তিনি হতে পারতেন মানবসেবার অন্যতম সেরা পেশার একজন মানুষ, দেশ বরেণ্য একজন চিকিৎসক।
চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করে একদিন পরিবারের অস্বচ্ছলতা ঘোচাবেন এমনই স্বপ্ন ছিলো রাজ কুমার শীলের চোখে। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে বর্তমানে তার ঠাঁই হয়েছে এক ভুষির কারখানায়। সেখানে তিনি কাজ করছেন দৈনিক ৩০-৫০ টাকা মজুরিতে।
রাজ কুমার শীল (৫৬) দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পৌর শহরের ঘাটপাড় গ্রামের নগিন শীলের ছেলে। পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়।
তার অবিশ্বাস্য মেধা অর্জন ও করুণ পরিণতির কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকে ‘‘আমাদের বন্ধু রাজকুমার শীল’’ শিরোনামের একটি লেখায় তুলে ধরেন বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বেলায়েত হোসেন ঢালী তার ফেসবুক প্রোফাইলে। উঠে আসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (কে- ৪০) ব্যাচের মেধাবী একজন শিক্ষার্থী রাজকুমার শীলের জীবনের গল্প। এর পর বিষয়টি ফেইস বুকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
চিকিৎসক বেলায়েত হোসেন ঢালী তার ফেসবুকে লিখেছেন,প্রতিদিনের ন্যায় বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃ বিভাগে কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ডিউটি রুমে বসে ছিলেন। রোগী আসা প্রায় শেষের দিকে। হঠাৎ এমন সময় প্রায় ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা তার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে আসলেন। সমস্যার কথা জানতে চাইলে বৃদ্ধার হাতে থাকা কাগজগুলো এগিয়ে দিলেন। জানা গেলো সঙ্গে থাকা ওই বৃদ্ধা তাদের মা পার্বতী রাণী শীল, ছেলেদের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার দরখাস্ত করবেন। সে কারনে মায়ের সঙ্গে নিজের শিক্ষা জীবনের সাটিফিকেটগুলো সত্যায়িত করতে এসেছিলেন রাজ কুমার শীল ও তার ভাই। প্রয়োজন প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। তার মায়ের দেয়া অনেক কাগজের সঙ্গে পাবনা মানসিক হাসপাতালের দুটি ছাড়পত্র দেখতে পেলেন চিকিৎসকরা। প্রথমে কে রোগী বুঝতেই পারেননি তারা। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য দুই ছেলের জন্যই দরখাস্ত করবেন বলে জানান রাজকুমার শীলের মা পার্বতী রাণী শীল ।
দুইজনেরই একই রোগ। এর পর একজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্বাক্ষর দেখে কিছুটা আশ্চর্য হলেন ডা, বেলায়েত। পরিচয়পত্রে নাম লেখা ছিল রাজকুমার শীল। অবাক হয়ে হাতের লেখার সঙ্গে চেহারা মেলাচ্ছিলেন তিনি। সুন্দর লেখা দেখে তখন পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলে, রাজ কুমার জানায়,সে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন ছাত্র ছিলো।

এ কথা শুনে ডা. বেলায়েত নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না। একে একে সব ঘটনা খুলে বললেন তার মা পার্বতী রাণী শীল। তার মা পার্বতীশীল বলেন,ছোটবেলা থেকেই রাজ কুমার শান্ত এবং খুবই মেধাবী ছিলো। প্রাথমিক ও জুনিয়ার বৃত্তি পরীক্ষায় সে বৃত্তি পেয়েছিল । ১৯৮০ সালে বিরামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করে সে। এর পর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয় সে। তার মা আরো বলেন, প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলেও দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজিতে অকৃতকার্য হওয়ার পর দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভাল রেজাল্ট করতে না পেরে গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় (সিজোফেনিয়া) আক্রান্ত হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর ধরে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় রাজ কুমার শীল। এর মধ্যে এক বছর পাবনা মানষিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। ২০০৭ সালে সে নিজেই বাড়িতে ফিরে আসে। অসুস্থতার পর বর্তমানে সে কথাবার্তায় কিছুটা স্বাভাবিক।

ছেলের এমন দুঃখের কথা বলতে গিয়ে পার্বতী রাণীর দু’চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগলো। মা পার্বতী রাণী একজন গৃহিনী। তার বাবা নরসুন্দর হলেও চার ছেলে মধ্যে তিন ছেলেকে নিজের পেশায় আনেননি। চার ছেলে মধ্যে বড় ছেলে গণেশ চন্দ্র শীল (৬০) শুধু সে এ পেশায় কাজ করে। এক ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে আরেক ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। ছেলেদের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন তিনি। আজ যদি ছেলে রাজ কুমার শীল ডাক্তারি পাশ করতো সংসারে এতো অভাব থাকতো না।

রাজ কুমারের আরেক ভাই আনন্দ শীল (৫০) সেও একই রোগে আক্রান্ত। রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু সংস্কৃতি ও পালি বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি।

অভাবের সংসারে স্বল্প আয়ে তাদের খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হয় তাদের, তাই দুই ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য দরখাস্ত করছেন ৭০ বয়সী মা পার্বতী রাণী শীল। তিনি বলেন,অসুস্থ হওয়ায় তারা তেমন বড় কোন কাজ করতে পারে না। সে কারনে তিনি সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন।

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচিত 8363364300632922375

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item