ঘন্টা বাজিয়ে আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসবের উদ্বোধঙন॥ ছবি আঁকা নিয়ে ব্যস্ত ক্ষুদে শিল্পীরা
https://www.obolokon24.com/2020/02/nilphamari_28.html
ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, বিন্ন্যাদিঘি থেকে॥ আনন্দঘন পরিবেশে ছবি এঁকে নীলফামারীর নীলসাগর বিন্ন্যাদিঘিতে আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসবের দ্বিতীয় দিনটি পার করলো ক্ষুদে,তরুণ শিল্পীরা। রং-তুলি দিয়ে ছবি আঁকা কাগজে রুপ দিল রঙ্গের ছোঁয়ায়। কেউ আঁকলো ফুল আর ফুলের বাগান। আবার কেউবা গ্রামীণ দৃশ্য। আবার কেউ কেউ পশু, পাখি, গাছ, গরুর গাড়ি, গ্রামীণ ঘরবাড়ি নানা দৃশ্যে এঁকে প্রকাশ করলো নিজের প্রতিভা।
গতকাল বুধবার(২৬ ফেব্রুয়ারি/২০২০) শুরু হওয়া উৎসবটির ঘন্টা বাজিয়ে আজ বৃহস্পতিবার(২৭ ফেব্রুয়ারি/২০২০) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঘন্টা বাজিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।
উদ্বোধনী ওই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উৎসব আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে, এম খালিদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলিম, জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান(বিপিএম,পিপিএম), নীলফামারী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক প্রমুখ।
এসময় আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিশুরা উৎসবে এসে গুণি শিশুদেরসাথে যুক্ত হয়ে আনন্দভরে যেভাবে ছবি আঁকছে তারা ভবিষ্যতে যে শিল্পী জয়নুল আবেদীন বা রফিকুন্নবী হবেনা সেটি বলা অসম্ভব। হয়তো তারা তাঁদের থেকেও বড় শিল্পী হতে পারবে। আমি অভিভাবকদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি তাদেরকে বাধা না দিয়ে এ কাজে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে,এম খালিদ বলেন, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শিল্প চর্চায় যেভাবে এগিয়ে আছে এই উৎসবের মধ্যদিয়ে উত্তরবঙ্গও এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি এখানে এসে জানতে পেরেছি আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে ৩০ হাজার খুদে কবি এ জেলায় রয়েছে। আমি মনে করি তিনি চেষ্টা করলে ৫০ হাজার চিত্র শিল্প এ জেলায় তৈরি হবে।
উদ্বোধক বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী বলেন, ছবি এঁকেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধে শিল্পী কামরুল হাসান ছবি এঁকে প্রতিবাদ করেছিলেন। শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদীন ব্রিটিশ শাসনামলে দূর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি কাটুন করে প্রবিতাদ করেছিলেন। যা বিশ্বের মধ্যে আলোলড় সৃষ্টি হয়েছিল। আজকের এই উৎসবে বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা এসেছেন। তোমরা তাদেরকে জানতে পারবে যে একটি ছবি এঁকে ইতিহাস বলা যেতে পারে।
এদিকে শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজম্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্ষুদে, তরুণ আর গুণি শিল্পীদের এই উৎসবের মাধ্যমে মিলন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। যা আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি/২০২০ সমাপ্ত হবে।
অন্যদিকে ছবি আঁকার ফাঁকে থেমে ছিলনা শিশু শিল্পীদের হৈ-হুল্লা। তারা উৎসবে অংশ নিতে পেরে উৎফুল্ল। তাদের মধ্যে অষ্ঠম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অদিতি রায় বলে, এমন একটি বড় আয়োজনে অংশ গ্রহন করতে পেরে খুশি আমি। আমার জীবনে এটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। জীবনে আর এমন সুযোগ পাবো কিনা ভাবতে পারছি না। অন্যদিকে ফুল বাগানের পাশে বসে দেখা গেছে ফুলের ছবি আঁকতে দেখা মিলেছে একই শ্রেণীর নূরে রাহেনা আক্তার। অনুভুতি প্রকাশ করে সে বলে, ছবি আঁকতে আমাকে অনেক ভালো লাগে। বড় শিল্পীদের সান্নিধ্যে থেকে ছবি আঁকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এককই অনুভুতি প্রকাশ করে ক্ষুদে শিল্পী তমালিকা রায়, মীর উর্ষিতা, ইফসাত জেরিন অপ্সরা, রুম্মান রহমান, সাদিক আনোয়ারসহ অনেকে।
জানা যায়, প্রথম দিন সকাল ১০টা থেকে নীলসাগর চত্ত্বরে জমায়েত হতে থাকেন ক্ষুদে ও তরুণ শিল্পীরা। সেদিন বেলা ১১টায় গোটা নীলসাগর চত্ত্বর পরিণত হয় শিল্পীর মিলন মেলায়। উৎসব সফল করতে বিভিন্ন শিল্পককর্ম দিয়ে তারা সাজিয়ে তোলে উৎসবস্থল। দ্বিতীয় দিনে যে যার মত করে ছবি এঁকে বিকালে যোগ দেয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
সুত্র মতে, চারুকলা উৎসবটির আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস এবং কিউরেটর সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ টুটুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গুণি শিল্পী, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সাংস্কৃতিমনা কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে উৎসবটি। সেটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে স্থানীয় সংগঠন ভিশন-২০২১ এবং ঢাকার আর্ট বাংলা।
আয়োজক কমিটির কিউরেটর ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ টুটুল জানান, শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে রুচিশীল ও সংস্কৃতিমনস্ক প্রজম্ম গড়ে তোলা এবং কয়েক প্রজম্মের শিল্পীদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন সৃষ্টির উদ্দেশ্য উৎসবের আয়োজন। বাংলাদেশের বরেণ্য ও তরুণ শিল্পীবৃন্দ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, রুমানিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, জার্মানী ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২ জন স্বনামধন্য শিল্পী অংশগ্রহন করেছেন। তাদের সান্নিধ্যে নীলফামারী জেলা ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী টানা চার দিন শিল্পকর্ম নির্মানের সুযোগ পাবে। ওই উৎসবে রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্টক্যাম্প, কনটেম্পোররি আর্ট প্রজেক্ট, শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারুশিল্প মেলা ও লোক সংস্কৃতির বৈচিত্রময় উপস্থাপন। এর আগে জয়পুরহাট এবং গাজিপুরে ওই উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, কারু শিল্প প্রদর্শিত হচ্ছে ২০ স্টলে। উৎসবে অংশগ্রহন করেছেন ১৬০ জন শিল্পী। এর মধ্যে ১০০ জন তরুণ। উৎসবে আঁকা চিত্রকর্মগুলো নিয়ে নীলসাগরে প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হবে ২৯ ফেব্রুয়ারী। এরপর ২৫ থেকে ৩০ এপ্রিল দ্বিতীয় প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে।
উৎসবের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, শিল্পচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিবাচক কাজের দিকে ধাবিত হবে এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। উৎসবের ল্য শিার্থীদের শিল্পী বানানো নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্ম যেন শিল্পমনার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হয়।
সেচ্চাসেবী সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী ও উৎসব আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ওয়াদুদ রহমান জানান, উৎসবটি বাস্তবায়নে সংগঠনের ১৫০ সেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।