বিন্ন্যাদিঘি ক্ষুদে,তরুণ ও গুণি শিল্পীর মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে॥আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ২০২০

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, বিন্ন্যাদিঘি থেকে॥ পরিযায়ী পাখীদের অভ্যায়ারন্য নীলফামারীর নীলসাগর বিন্ন্যাদিঘি এখন ক্ষুদে, তরুণ আর গুণি শিল্পীদের এক মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজম্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে বুধবার(২৬ ফেব্রুয়ারি/২০২০) থেকে শুরু হয়েছে চার দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব/২০২০। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আগামীকাল বৃহস্পতিবার(২৭ ফেব্রুয়ারি/২০২০) বিকাল ৩টায় ও সমাপ্ত হবে ২৯ ফেব্রুয়ারী রাত ৯টায়।
সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি ও বাতাসের কারনে আজ বুধবার উৎসবের কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অংশগ্রহনকারীদের ভেন্যুতে বেলা ১২টার পর রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে উৎসবের প্রথম পর্বের কাজ শুরু করা হয়।
সকাল ৯টা থেকে নীলসাগর চত্ত্বরে জমায়েত হতে থাকেন স্থানীয় ক্ষুদে ও বহিরাগত শিল্পীরা। এরপর বেলা ১১টায় দিকে গোটা এলাকা পরিণত হয় শিল্পীর মিলন মেলায়। উৎসব সফল করতে বিভিন্ন শিল্পককর্ম দিয়ে তারা সাজাতে শুরু করেন নীলসাগর চত্ত্বর।
উৎসবের প্রস্তুতিতে ক্ষুদে শিল্পীরা দলে ভাগ হয়ে বড়দের সান্নিধ্যে দিনভর আঁকলেন বিভিন্ন ছবি। বিকালে শিশুরা খেললো গ্রামীণ ঐতিয্যের বিভিন্ন খেলা। দিন শেষে মিলিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। সেখানে প্রজ্জলিত ক্যাম্প ফায়ারে পক্ত করা হয় কাচা মাটি দিয়ে শিশুদের তৈরী পুতুলসহ পশু-পখির প্রতিকৃতি।
এদিকে উৎসবে অংশ নিতে পেরে উৎফুল্ল ক্ষুদে শিল্পীরা। তাদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী বর্ষা রায় বলেন, এমন একটি বড় আয়োজনে অংশ গ্রহন করতে পেরে খুশি আমি। আমার জীবনে এটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। জীবনে আর এমন সুযোগ পাবো কিনা ভাবতে পারছি না। এককই অনুভুতি প্রকাশ করে অংশগ্রহনকারী ক্ষুদে শিল্পী মীর উর্শিতা, তমালিকা রায়, শাহরিয়ার রাফাত, শিফাত ইসলামসহ অনেকে।
আয়োজক কমিটির আহবায়ক ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হারুন অর রশিদ টুটুল জানান, শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে রুচিশীল ও সংস্কৃতিমনস্ক প্রজম্ম গড়ে তোলা এবং কয়েক প্রজম্মের শিল্পীদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন সৃষ্টির উদ্দেশ্য উৎসবের আয়োজন। বাংলাদেশের বরেণ্য ও তরুণ শিল্পীবৃন্দ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, রুমানিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, জার্মানী ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২ জন স্বনামধন্য শিল্পী অংশগ্রহন রয়েছে। তাদের সান্নিধ্যে নীলফামারী জেলা ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী টানা চার দিন শিল্পকর্ম নির্মানের সুযোগ পাবে।
তিনি জানান, কারুশিল্প প্রদর্শিত হবে ২০ স্টলে। উৎসবে অংশগ্রহনকারী ১২০ জন শিল্পীর মধ্যে রয়েছেন ৮০ জন তরুণ এবং ২০ জন আধুনিক কনটেম্পেররি শিল্পী। উৎসবে আঁকা চিত্রকর্মগুলো নিয়ে নীলসাগরে প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হবে ২৯ ফেব্রুয়ারী। এরপর ২৫ থেকে ৩০ এপ্রিল দ্বিতীয় প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে। এছাড়াও এই উৎসবে থাকবে আন্তর্জাতিক আর্টক্যাম্প, কনটেম্পেররি আর্ট প্রজেক্ট, শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারুশিল্প মেলা ও লোক সংস্কৃতির বৈচিত্রময় উপস্থাপন। এর আগে জয়পুর হাট এবং গাজিপুরে ওই উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও এবরই প্রথম আন্তর্জাতিক পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে।

আযোজকরা জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে,এম খালিদ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান(বিপিএম,পিপিএম), নীলফামারী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা আঃলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মমতাজুল হক, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদ মাহমুদ প্রমুখ।
চারুকলা উৎসব ২০২০ নীলফামারী আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস জানান, গুণি শিল্পী এবং সাংস্কৃতিমনা কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে উৎসবটি। সেটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন ভিশন-২০২১ এবং ঢাকার আর্ট বাংলা। তিনি জানান, শিল্পচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিবাচক কাজের দিকে ধাবিত হবে এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। এ উৎসবের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের শিল্পী বানানো নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্ম যেন শিল্পমনার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হয়।
সেচ্চাসেবী সংগঠন ভিশন-২০২১’এর প্রধান সমন্বয়কারী ও উৎসব আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ওয়াদুদ রহমান জানান, উৎসব বাস্তবায়নে ১৫০ সেচ্ছাসেবী কাজ করছে তার সংগঠনের। ক্ষুদে, তরুণ এবং গুণী শিল্পীসহ অংশগ্রহন করেছেন ৩৫০ জন শিল্পী। #

পুরোনো সংবাদ

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি 3972442444001668530

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item