নীলফামারীতে অভাবের তাড়নায় নবজাতক দত্তক॥ নাটকীয়ভাবে পুলিশের হস্তক্ষেপে হাসপাতালে ভর্তি

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১৩ ফেব্রুয়ারি॥ নীলফামারীতে পরিবারের দৈন্যতায় নবতাজক কণ্যাকে দত্তক দিয়েছেন শাপলা বেগম(৪০) নামের এক মা। পরে পুলিশ ওই নবজাককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। ঘটনাটি গতকাল বুধবার(১২ ফেব্রুয়ারি/২০২০) রাত সাড়ে আটটার দিকে জেলা শহরের ডাকবাংলো এলাকায় ঘটে। জেলা সদরের ইটাখেলা ইউনিয়নের কানিয়ালখাতা গাবেরতল গ্রামের কৃষি শ্রমিক আমিনুল ইসলামের (৭০) মেয়ে ওই নবজাতক।
পুলিশ জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় ডাকবাংলো এলাকার একটি লিচু বাগানে ওই নবজাতককে পাওয়ার কথা জানায় নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা নূরুল হুদা মিন্টু। নবজাতককে তিনি সেখান থেকে তুলে নিজ বাড়িতে নিয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালের শিশু নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করায়।
শিশুটির মা শাপলা বেগম জানান, বুধবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে জেলা শহরের মৌন জেনারেল হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে তার কণ্যা শিশু ভুমিষ্ট হয়। এরপর পূর্ব পরিকল্পণা অনুযায়ী নূরুল হুদা মিন্টু ও আইরিন দম্পত্তিকে ওই শিশুকে দত্তক দেওয়ার জন্য সন্ধ্যায় ওই লিচু বাগানে রেখে আসেন। সেখান থেকে তারা বাড়িয়ে নিয়ে যায় শিশুটিকে। তিনি বলেন, আমার স্বামী বয়স্ক মানুষ হওয়ায় তেমন কাজ করতে পারেন না। ফলে পরিবারের অভাব অনটন লেগে আছে। এরই মধ্যে ওই সন্তান গর্ভে এলে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর ওই দম্পত্তির কাছে পাঠাই।
সন্তানের সুখের কথায় তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ খাওয়াইতে পারবো না। বাচ্ছাটা তাদের কাছে যেন ভালো থাকে।
শাপলার বড় বোন খালেদা বেগম (৪৫) জানান, স্বামীর মানষিক প্রতিবন্ধীতায় প্রথম বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটে শাপলার। প্রথম বিয়ের ১০ বছরের এক কণ্যা সন্তানসহ দ্বিতীয় বিয়ের স্বামী কৃষি শ্রমিক আমিনূল ইসলামের সঙ্গে থাকেন। দ্বিতীয় বিয়ের পাঁচ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। উক্ত আমিনূলের প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন।
ওই স্ত্রীর দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে। অভাবের সংসারে আরেক সন্তানের জম্মে বিব্রত হয়ে পড়ে ওই দম্পত্তি। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা সন্তানকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

আমিনূলের পারিবারিক সূত্র জানায়, পরিবারের বড় স্ত্রীর দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। পরিবারে দ্বিতীয় স্ত্রীর এক মেয়ে এবং এক ছেলের ভরণপোষনের দায় মেটান কৃষি শ্রমিকের আয়ে। বয়সের ভারে শ্রম দিতে না পারায় অভাব তার নিত্য সঙ্গী। এর মধ্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরে চালের একটি কার্ড রয়েছে তার।

সন্তান দত্তক নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে নূরুল হুদা মিন্টু বলেন, লিচু বাগানের পাশ দিয়ে হাটার সময় আমার স্ত্রী শিশুর কান্না শুনতে পায়। সেখান থেকে শিশুটিকে তুলে বাড়িতে নিয়ে পুলিশে খবর দেই। এরপর পুলিশ শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করায়। আমরা  শিশুটির নিরাপত্তার কথা ভেবে সেটি করেছি।
অপরদিকে মিন্টুর স্ত্রী আইরিন শিশুটিকে দত্তক নেওয়া এবং দুই হাজার টাকা সহায়তা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ওই হাসপাতালে গিয়ে শিশুর মায়ের দেখা করে এসেছি।
নীলফামারী মৌন জেনারেল হাসপাতালের প্রতিনিধি এরশাদ আলী বলেন, বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ওই নারীর অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে কণ্যা শিশুটির জন্ম হয়। রাতে শিশুটিকে তাদের কাছে না দেখে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় শিশুটিকে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ আসার পর বিষয়টি আমরা জানতে পারি।
নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদ উন নবী বলেন, শিশুটিকে তারা বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমে তাদের প্রতিবেশিরা আমাদের খবর দেয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে অজ্ঞাত পরিচয়ে শিশুটিকে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করি। পরে তদন্তে তার মা বাবার পরিচয় এবং দত্তক দেয়া নেয়া নাটকের বিষয়ে নিশ্চিত হই। দারিদ্রতার কারণে শিশুটিকে দত্তক দেয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে।
নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রের জেষ্ঠ স্টাফ নার্স জেসমিন নাহার বলেন, শিশুটিকে বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এখানে ভর্তি করা হয়। শিশুটি এখন সম্পুর্ণ সুস্থ্য আছে।
সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন বলেন, শিশুটি নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের নিবির পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য আছে। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5227068550252367903

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item