নীলফামারীতে স্কুলে স্কুলে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী প্রতিনিধি ॥ যেন স্থানীয় কিংবা জাতীয় কোন নির্বাচন। দেখলে কোন ভাবেই মনে হবে না, এটি বিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন। ভোটার ¯ি¬প নিয়ে বসেছেন কিছু শিক্ষার্থী। প্রার্থীদের নামে প্রচারণার লিফলেট, পোস্টারও সাঁটানো হয়েছে কেন্দ্রে। নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছে বিএনসিসি ও স্কাউট। নির্বাচন কমিশনারও ছিলেন। প্রিজাডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসাররাও কাজ করছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালনকারীরাও ভোট কক্ষ ঘুরে দেখছেন। যে শ্রেনী কক্ষে প্রতিদিন পাঠদান চলে সেই শ্রেনী কক্ষে ভোটের বাক্স, ব্যালট পেপার। প্রিজাইডিং অফিসার শিক্ষার্থী ভোটারদের তালিকা ধরে ধরে ব্যালট পেপার এগিয়ে দিচ্ছেন। গোপন কক্ষে ক্ষুদে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীদের সীল মেরে আবার তা ভোট বাক্সে জমা করছে। শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। এই ভোট ঘিরে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসায়বাঁথভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছিল।

শিশুকাল থেকে গণতন্ত্রের চর্চা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা শেখাতেই সারা দেশের ন্যায় নীলফামারীতেও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদ্রাসা) 'স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন-২০২০' অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (২৫ জানুয়ারি/২০২০) সকাল ৮ থেকে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ভোটগ্রহণ। দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে চলে ভোট। ভোট শেষে ভোট গননা এবং ফলাফল জানতে প্রার্থী ও শিক্ষার্থী ভোটাররা এক কাতারে বসে অপেক্ষা করছিল।

ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় হারজিৎ কে, তারা কোন ফ্যাক্ট মনে করেনি। বরং একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ভোটের উৎসব পালন করে তারা। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক বিদ্যালয়েই ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ১ জন করে এবং আরো ৩ জন যে কোন শ্রেণি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। নির্বাচিত ৮ জন প্রতিনিধি প্রথম সভায় বসে প্রধান প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। অন্যরা হবে কেবিনেট সদস্য। পঞ্চমবারের মতো স্টুডেন্ট  কেবিনেট নির্বাচন হওয়ায় জেলার স্কুলগুলোতে ছিল উৎসবের আমেজ।

ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ভোট উৎসব দেখতে বড়রাও ভোট কেন্দ্রের বাইরে সমবেত হয়। ভোট কেন্দ্রের আশপাশ জুড়ে চায়ের ও খাবারের দোকানও বসেছিল।  শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায়  কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছিল সে কারনে। স্কুল কেবিনেটের ক্ষুদে ভোটারদের ভোট দেখতে আসা ইটাখোলা  গ্রামের রমজান আলী বলেন, এতো সুন্দর ভোট অনুষ্ঠান দেখে খুব ভালো লাগছে। আমাদের বড় ভোটারদের এ থেকে মনে হচ্ছে অনেক কিছু শেখার আছে।
নীলফামারী সদর উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়নের পলাশবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব হিসেবে পালন করা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী গৌরি রায় বলে, সপ্তম শ্রেণির নেতা নির্বাচন করা হয় আমার কক্ষে। এই শ্রেণিতে ৫৯ জন ভোটার রয়েছে। আমরা তিনজন দায়িত্ব পালন করছি ভোটগ্রহণে। অত্যান্ত চমৎকার পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বর্ষা আকতার বলে, এবার নিয়ে দুইবার এই দায়িত্ব পালন করেছি। শিক্ষার্থী অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব পালনে নিজেকে আরো দায়িত্বশীল হতে শিখছি। নিশ্চয়ই এর অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবো।
ভোট দেওয়া ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পুর্ণিমা বলে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমি ভোট দিয়েছিলাম। অনেক ভালো লেগেছিলো। পছন্দ করতে শিখছি। ভালো প্রার্থী নির্বাচন করার ব্যাপারে সচেতন হচ্ছি এখন থেকে।
ভোট চলাকালে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান সোহানা আখতার এবং অপর দুই সদস্য রোখসানা আখতার ও শারমিন আখতার। এছাড়া সার্বিক পর্যবেক্ষণ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম রায় বাদল।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, যারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছে তারা পরিবেশ সংরক্ষণ, পুস্তক ও এবং শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, পানি স¤পদ, বৃক্ষ রোপন ও বাগান তৈরি, দিবস ও অনুষ্ঠান উদযাপন এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন এবং আইসিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবে। এই বিদ্যালয়ে নির্বাচিতরা হলো জয়শ্রী রায়, পিংকি সরকার, দেবী শর্মা, রাজিয়া সুলতানা, আখিঁ আখতার, রতনা দাশ, স্বপ্না দাশ ও বৃষ্টি রায়।
পলাশবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, নির্বাচনে ১৪ জন অংশগ্রহণ করে।
তিনি বলেন, এনিয়ে পাঁচবার স্টুডেন্টস কেবিনেটের ভোট হলো এখানে। শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি বোধ তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা নিজেদেরকে তৈরি করে নিতে পারবে।
নীলফামারী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বললো, যারা যারা প্রার্থী হয়েছে, সবাই এসে বলেছে আমাকে ভোট দিলে তোমাদের খেলাধুলার সকল সরঞ্জাম যাতে ঠিকমত পাও, টিফিন যাতে ভাল পাও সে ব্যবস্থা করবো, ক্লাসের বা তোমাদের নিজেদের যে কোন সমস্যায় আমি তোমাদের পাশে থাকবো, আমরা সকলের কথাই শুনেছি, কিন্তু যাকে সৎ এবং মিথ্যা কথা বলে না বলে মনে হয়েছে, পাশাপাশি ভাল ছাত্র এবং সকলের সঙ্গে ভাল আচরণ করে তাঁদেরই ভোট দিয়েছি।সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএনসিসি ও স্কাউটের বন্ধুরা সহায়তা করেছে।এই স্কুলে প্রভাতী শাখায় ১০জন ও দিবা শাখায় ১১ জন প্রার্থী ছিল। ভোটে জিতেছে প্রভাতি শাখায় ফায়িম আরাফাত, রায়হানুল ইসলাম,ফায়িম ফয়সাল,আবু ফিয়ান,ফারুক ইসলাম। দিবা শাখায় নির্বাচিত হয় ছামীন শাফক্বাত,আইমান জারিফ বর্ণ, স্বিথীত আল জন, তৌফিক আহমেদ ও নিয়াজ আহমেদ জয়।

নীলফামারী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শির্ক্ষার্থী তনিমা বললো,আমরা খুবই আনন্দিত,  আমাদের আনন্দের দিন, ভোট কীভাবে হয়, সেটি শেখা হয়ে গেছে। এই স্কুলে প্রভাতী শাখা ১৫ জন ও দিবা শাখায় ১৩ জন প্রার্থী ছিল। প্রভাতী শাখায় নির্বাচিত হয় আদ্রিতা রহমান সৃস্টি,মমতা দিফ,মিতু আক্তার,সায়মা তাসনিম তাসিন ও মৃত্তিকা ফাইরুজ মাহি। দিবা শাখা নির্বাচিত হন অহনা, মিম তাজ নবী, বোহাইরা তানজিম সিলভীয়া, সুলতানা আরফিন লাবন্য,হৈমন্তি রায় তিথি ও আইরিন সরকার সৌমি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার ২০০ টি স্কুল ও ১০৫ মাদ্রাসায় এই নির্বাচন হলো। ২০১৫ সাল হতে এই নির্বাচন হচ্ছে। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
তিনি জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গণতন্ত্র চর্চা। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্রকে আরও সুগঠিত করা সম্ভব। তিনি জানালেন এই নির্বাচন অনেক গুরুত্ব বহন করে, এর মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের চিন্তনের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হলো। তিনি জানান ভোট শেষে প্রতিটি স্কুলে ভোটগননার পর ফলাফলা প্রকাশ করা হয়।#

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 1684469887582091030

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item