উত্তরাঞ্চলের নবান্নের বাজারে নতুন আলুতে ভরেছে
https://www.obolokon24.com/2019/11/potato_17.html
এখন হাটবাজারে নতুন আলুর ছড়াছড়ি।
গত সপ্তাহে স্বল্প পরিমানের নতুন আলু বাজারে পাওয়া গেলেও চলতি সপ্তাহের আজ রবিবার (১৭ নভেম্বর) নীলফামারী কিশোরীগঞ্জ উপজেলা সহ ৫ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নতুন আলুতে ভরে উঠেছে। গত সপ্তাহে নতুন আলু ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সেই আলুর দাম কমে এসে এখন পাওয়া যাচ্ছে ৫০/৫২ টাকা কেজি দরে। তবে দাম যাই হোক নবান্নের আমেজে নতুন ধানের চালের ভাতের সাথে নতুন আলুর ভর্তা বা তরকারির এক নতুন স্বাদতো মিলছে। তাই নতুন আলু পেয়ে ভোক্তারাও বেশ খুশী। শীতের সব্জী বলে কথা আছে। যেমন বাজারে নতুন ফুলকপি, পাতাকপি, ছিম, বরবটি পাওয়া যাচ্ছে ঠিক তেমনি নতুন আলু পাওয়া গেলো এবার। দুই ধরনের নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে দেশী লাল ও হল্যান্ড জাতের বড় সাদা আলু।
নীলফামারীর জেলা সদরের সিংদই,রামনগর,কচুকাটা,চড়াইখোলা, কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও ঢাকা চট্রগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ক্ষেত থেকেই সরাসরি নতুন আলু ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করছে। সেই আলু আবার স্থানীয় বাজার ছাড়াও ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকার কাওরান বাজারে।
এদিকে ক্ষেত থেকে আগাম জাতের এই নতুন আলু উত্তোলনে ধুম পড়েছে। দলবেধে ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে।
জেলা সদরের সিংদই গ্রামের আলু কৃষক ইউনুছ আলী(৪৫) জানালেন ৩ বিঘা জমিতে তিনি আগাম আলু চাষ করেছেন। পাইকারের কাছে ক্ষেতেই আলুর কেজি তিনি গত সপ্তাহে বিক্রি করছেন ৫৫/৫৭ টাকা দরে। এখন বিক্রি করছেন ৫০/৫২ টাকা কেজি দরে। শুরুতেই এমন দাম পেয়ে তিনি বেজায় খুশী। নবান্নে নানা ধরনের সবজির সঙ্গে নতুন আলু মিশিয়ে বাহারি তরকারির কদরও বেশি।
কচুকাটা গ্রামের আলু চাষী কালাম হোসেন (৪০) বললেন আলুর আগাম বাজার ধরতেই তিনি আগাম আলু চাষ করেছেন ৪ বিঘা জমিতে। অগ্রহায়নের শুরুতেই তার ক্ষেতের আলু উঠে এসেছে। তাকে ক্ষেত থেকে আলু তুলে বাজারে নিয়ে যেতে হচ্ছেনা। পাইকারা কাড়াকাড়ি করে এসে ক্ষেতের আলু ক্ষেতেই ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। আলু ব্যবসায়ী রোস্তম আলু বললেন আগাম আলু চাষ কোন কোন এলাকার কৃষক করছেন তার খোঁজ তাদের কাছে রয়েছে। তাই ভোরে উঠেই আলূ ক্ষেতে দৌড় দিতে হয়। ক্ষেত থেকে আলু উঠিয়ে আলুর ওজন করে আলু চাষীকে নগদ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে আলু বাজারে নিয়ে আসছেন। তিনি বললেন চাহিদা অনুযায়ী এখন প্রচুর আলু পাওয়া যাচ্ছে। তাই এই আলু ট্রাকে তুলে ঢাকা বা অন্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। নীলফামারীর বড়বাজারে নতুন আলুর ভোক্তা আব্দুর রশিদ বললেন দাম যাই হোক। নতুন আলুর স্বাদ আলাদা। হিমঘরের আলু বেশী মিষ্টি হওয়ায় নতুন আলুর প্রতি কার না মনটানে।
উল্লেখ যে, উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা এখন কোন জমি আর পতিত ফেলে রাখছেন না। হাল আমলের আগাম ও স্বল্পমেয়াদী জাতের আমন ধান কর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা আলু রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। মধ্য আশ্বিন ব্রি-৩৩, ব্রি-৩৯, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫৬ ও বীণা-৭ জাতের ধান কেটে ঘরে তুলে সেই জমিতে আগাম আলুর বীজ বুনেছিল কৃষক । ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে এই আলু বাজারে আসার কথা থাকলেও তার আগেই চলে এসেছে এই আলু।
রংপুর অঞ্চলে রবি মৌসুমে অর্থকরী ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আলু।চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় আলু চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৯১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে নীলফামারী জেলায় ২২ হাজার হেক্টর,রংপুরে ৫০ হাজার হেক্টর, গাইবান্ধায় ৮ হাজার ৬০০ হেক্টর,কুড়িগ্রামে ৬ হাজার হেক্টর ও লালমনিরহাটে ৪ হাজার ৬০০ হেক্টরে। অপর দিকে উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৮ মেট্রিকটন। এদিকে একমাত্র আগাম আলু চাষ হয়েছে নীলফামারী জেলায় ১০ হাজার হেক্টরে। এই আলু এখন বাজারে উঠেছে। #