পুলিশ স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা-পীরগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা!
https://www.obolokon24.com/2019/10/rangpur_21.html
ক্যাপশনঃ রংপুরের পীরগঞ্জে কনস্টেবল মাইদুল ইসলাম (লাল শার্ট) তার স্ত্রীকে হত্যার চেস্টা করে। এ সময় তার স্ত্রীকে বেদম পেটায় কনস্টেবলের ভাতিজা বিপ্লব (হাফহাতা গেঞ্জি)। |
পীরগঞ্জে পুলিশ কনস্টেবল মাইদুল ইসলামের একাধিক পরকীয়া প্রেমে বাঁধা দেয়া এবং যৌতুকের দাবী পুরন না করায় স্ত্রী সুবর্না আক্তার (২৩) কে বেদম পিটিয়ে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ওই কনস্টেবল এবং তার এক ভাতিজা। গতকাল সোমবার এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিত ওই গৃহবধু।
মামলা ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জের রায়পুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ী গ্রামের মৃত. আনিছার রহমানের ছেলে মাইদুল ইসলাম রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল (কং নং- ১৪০৪) পদে ২০১১ সালে যোগদান করে। সে বিগত ২০১৩ সালে একই ইউনিয়নের ধুলগাড়ী গ্রামের আবুল কালাম মিয়ার একমাত্র মেয়ে সুবর্নাকে বিয়ে করে।
এখন পর্যন্ত তাদের সংসারে সন্তান নেই। বিয়ের পর থেকেই ওই কনস্টেবল ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজশাহীতেই স্ত্রী সুবর্নাকে কয়েকদফা মারপিট করে। এছাড়াও ওই কনস্টেবল রাজশাহীতে একাধিক মহিলার সাথে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হলে সুবর্না বাঁধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুবর্নাকে কয়েকদফায় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করলে রাজশাহী পুলিশ লাইনে ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ৩/৪ বার বিভাগীয় বিচার হয়।একপর্যায়ে কনস্টেবল মাইদুলকে ২০১৭ সালে বরিশাল র্যাবে সংযুক্ত করা হয়। সেখানেও ওই কনস্টেবল আবারো একাধিক পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হলে প্রতিবাদ ও বাঁধা দেয় স্ত্রী। ফলশ্রুতিতে সুবর্নার উপর নির্যাতনের খড়গহস্ত নেমে আসে। কনস্টেবল মাইদুলের অপরাধের ব্যাপারে বরিশাল র্যাব অফিসেও ২ বার শালিস হয়। গত ২ অক্টোবর সুবর্নাকে মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতন করায় তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলে। এ ব্যাপারে বরিশালে স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি হলে সম্প্রতি তাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে পাঠানো হয়।
গত ৯ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত কনস্টেবল মাইদুলের ছুটি শুরু হলেও সে তার স্ত্রীকে যৌতুকের টাকা আনার জন্য বাড়ীতে পাঠায়। একপর্যায়ে মাইদুল গত ১৮ অক্টোবর বাড়ীতে এসে যৌতুকের টাকা না পেয়ে ওইদিন রাত ২ টার দিকে তার ভাতিজা বিপ্লবসহ বেদম মারপিট করে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখে। পরদিন দুপুরে সুবর্নার অবস্থা আশংকাজনক হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পীরগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। এ সময় বড়আলমপুর ইউনিয়নের মমিন মার্কেট নামকস্থানে কনস্টেবল মাইদুল তার পথরোধ করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা আবারো কনস্টেবলের হাত থেকে তাকে রক্ষা করে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের এফ-১৬ নম্বর বিছানায় অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন সুবর্না। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এবং গলায় জখম দেখা গেছে। কর্তব্যরত ডাক্তার বকুল মিয়া বলেন, এ রোগীর (সুবর্না) অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। চিকিৎসাধীন সুবর্না জানায়, আমি ওর (স্বামী) নির্যাতন সহ্য করে আসছি। আমাকে সন্তানও নিতে দেয় না। চাকরীতে পদোন্নতির কথা বলে লাখ লাখ টাকা নিয়েছে। আরও দাবী করছে। আর কত টাকা দিবো? সে ১৮ অক্টোবর ছুটিতে এসে তার বাড়ীতে আমাকে গভীর রাতে সে এবং তার ভাতিজা বিপ্লব যৌতুকের জন্য আমাকে মারধর করে। চিকিৎসা নিতে আসার সময়ও রাস্তার মধ্যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচান। এ ব্যাপারে সে বাদী হয়ে থানায় স্বামীসহ কয়েকজনকে আসামী করে মামলা (নং-২৩ (২১/১০/১৯) করেছেন। ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, সরকারী চাকরীজীবির বিরুদ্ধে মামলা হলে গ্রেফতারে নির্দেশ প্রয়োজন হয়। আমরা নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেব। তবে অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বর্তমানে সুবর্নার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।