ডিমলায় দুর্যোগসহনশীল গৃহনির্মানের তালিকা করার নামে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি॥ নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায় দুর্যোগসহনশীল গৃহনির্মান বরাদ্দের নামের তালিকা তৈরী করনে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান  বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
জানা যায়, জমি আছে ঘর কিন্তু দুর্যোগ মোকাবেলা করার মতো গৃহ নেই এমন দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নগদ টাকায় গৃহনির্মান করে দিচ্ছেন। ডিমলা উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৩৬ পরিবার দুর্যোগ সহনশীল ঘর পেয়েছে। তালিকা অনুযায়ী দেখা যায় পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নে ৩টি,বালাপাড়া ইউনিয়নে ৪টি,ডিমলা সদর ইউনিয়নে ৫টি,খগাখরিবাড়ি ইউনিয়নে ৩টি ,গয়াবাড়ি ইউনিয়নে ৩টি,নাউতারা ইউনিয়নে ৪টি,খালিশাচাপানী ইউনিয়নে ৫টি,ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নে ৩টি,টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে ৩টি ও পূর্বছাতনাই ইউনিয়নে ৩টি সহ ৩৬ পরিবারের তালিকা করা হয়।
গত বছরের নবেম্বর মাসে এই তালিকা করা হয়েছিল। এই তালিকা করার সময় টাকা আদায় করা হয়। অথচ সরকারের পক্ষে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা ব্যয়ে প্রতিটি গৃহ নির্মান করে দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায় টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলোনী পাড়া গ্রামে পঙ্গু জয়েন উদ্দিনের বাড়িটি কুড়ে ঘর। দুই বছর আগে জটিলরোগে তিনি বিছানায় পড়ে গেলে আর হাটাচলা করতে পারেনা।   তার দুটো মেয়ে স্কুলে পড়াশুনা করে। স্ত্রী মেরিনা বেগম(৪৫) অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে। জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার পরও ঘর দেওয়া হয়নি তাকে। একটি কুড়ে ঘরে কষ্টে কেটে যাচ্ছে কোন রকম। মেরিনা বেগম বলেন, বসতবাড়ীর ৫শতক জমিতে একটি কুড়ে ঘরে দুই মেয়ে আর পঙ্গু স্বামীটাকে নিয়ে অনেক কস্টে দিনাতিপাত করি। গত বছরের নবেম্বর মাসে ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হককে  জমি আছে ঘর নাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার জন্য তালিকায় নাম দিতে অনুরোধ করি। এ জন্য তিনি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। অবশেষে ঋণ করে তাকে  ৪ হাজার টাকা দেই। কিন্তু আরও ৬ হাজার টাকা দিতে না পাড়ার কারনে আমাকে ঘর দেয়নি। স্বামীটা দুই বছরের বেশি সময় হাটতে পাড়ে না। যেটুকু জমি ছিল বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি। অন্যের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে দুই কন্যা সোমা আক্তার ও খুশি আক্তারের পড়াশুনা করছে। সোমা আক্তার জটুয়াখাতা উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী। সে বিদ্যালয় থেকে বর্তমানে উপবৃত্তিও পান না। অপরদিকে ছোট মেয়ে দক্ষিন খড়িবাড়ী মুক্তা নিকেতন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী। আমরা স্বামীর নামে নেই বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। এটিও কেউ করে দেয়না। কার্ড করে চাইলে ৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়। দিতে পারিনা তাই কার্ড হয়না। জয়েন উদ্দিন (৬০) বলেন, সরকারী কোন সুযোগ নাকি আমাদের জন্য নাই, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতার জন্য টাকা লাগে, টাকা দিতে না পারায় চেয়ারম্যান ঘর দেয়নি।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের মশিয়ার রহমানের পুত্র মজিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, দুর্যোগ সহনশীল ঘরের জন্য টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের তেলির বাজারের মৃত আব্দুস সাত্তারের পুত্র স্বপনের হাতে ১৪ হাজার টাকা প্রদান করেন। স্বপন উক্ত টাকা ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হককে দেন। এ ব্যাপারে স্বপনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি ১০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এর মধ্যে চেয়ারম্যানকে রেজিষ্টারে মাধ্যমে ৭ হাজার টাকা প্রদান করি। এ সময় সে অভিযোগ তালিকার নামে  তিনশত জনের নিকট টাকা নেয়া হয়েছিল। টেপাখড়িবাড়ী গ্রামের বিমল চন্দ্র রায়ের পুত্র দয়াল চন্দ্র রায় (২৫) বলেন, সরকারীভাবে ঘর দেয়ার কথা বলে ১ বছর আগে ইউপি চেয়ারম্যান ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল্ এখন ঘরও দিচ্ছে না । টাকাও ফেরত চাইলে বলে অপেক্ষা করেন ঘর দেয়া হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ টেপাখড়িবাড়ীর ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক, তথ্য কেন্দ্রে উদ্দোক্তা মিজানুর রহমান ২২০টি পরিবারকে ঘর দেয়ার নামে প্রতিটি পরিবারের নিকট ৪ থেকে ১৪ হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেয়। ইউপি চেয়ারম্যান ২৫টি পরিবারকে ঘর দেয়ার সুপারিশ করে ইউএনও অফিসে তালিকা পাঠায়। তার মধ্যে অধিকাংশ অবস্থাশালী। ৩ বিঘা জমি থাকার পরও গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মান করে দেয়া হচ্ছে টেপাখড়িবাড়ীর মৃত ভানু মিয়ার পুত্র ইদ্রিস আলীকে। ইদ্রিসের স্ত্রী গোলাপী বেগম অভিযোগ করে বলেন বাড়ীটি নির্মানে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে এই ইউনিয়নে তিনটি পরিবার ঘর পায়। এরা হলো উক্ত  ইদ্রিস আলী , নহিরমুদ্দিনের ছেলে জহুরুল ইসলাম ও মইনুদ্দিনের ছেলে লালচাঁদ।
টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের তথ্য কেন্দ্রের উদ্দোক্তা মিজানুর রহমান বলেন, রেজিষ্টার না দেখে কিছু বলা যাবে না কত পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তবে আরও নতুন ঘর আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তালিকা তৈরি করা হচ্ছে আগামীতে আরোও ঘর দেয়ার জন্য। জয়েন উদ্দিনের স্ত্রী টাকা দেয়ার অভিযোগের বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন আমি তাকে চিনি না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলায় আরো ৪২টি গৃহ নির্মানের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এবার বরাদ্দের টাকা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি গৃহ নির্মানে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা। যা প্রথম পর্যায়ের চেয়ে ৪০ হাজার টাকা করে বেশী। এটি এখনও উপজেলার ১০ ইউনিয়নের বিভাজন করা হয়নি।
জানা যায়, উপজেলা পর্যায়ে দুযোর্গ সহনশীল এই ঘর নির্মান প্রকল্পে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা(পিআইও)। সদস্য রয়েছে সহকারী ভুমি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা,উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি),উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা,উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা, উপজেলা জনস্বাস্থ প্রকৌশলী, ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। কমিটিতে উপদেস্টা রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠেছে ঘর কিভাবে নির্মান হচ্ছে কমিটির অনেক সদস্যই কোন সময় তদারকিতে জাননি। অথচ এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রকল্প।
এই ঘর নির্মানে যে তালিকা প্রনোয়নে অনিয়ম করা হয়েছে তার প্রমান হিসাবে এলাকাবাী অভিযোগ করে জানায় ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট মৌজার আমিনুল ইসলাম ঘর পেয়েছেন। তার ছেলে রেজাউল  ইসলাম অস্থায়ী ভাবে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারী গাড়ী চালক। স্থানীয়রা জানায় রেজাউলের বাবার ৩ বিঘার উপর জমি রয়েছে। তার ছেলে ইউএনওর গাড়ী চালক বলে ছয় নয় করে গৃহ বরাদ্দ পেয়েছে। তার বাড়ির গৃহ নির্মান শেষ হলেও রং করা বাকি রয়েছে।
এদিকে উপজেলার তালিকায় দেখা যায় ৩৬টি গৃহনির্মানের মধ্যে ৩৩টি  উদ্ধোধনের জন্য প্রস্তুত দেখানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে অনেক ঘরের পলেস্তারা করা হয়নি। করা হয়নি ঘরের রং।  খোঁজ নিয়ে জানা যায় উপজেলার ৩৬ পরিবারের গৃহনির্মান তৈরী করার চ্যুক্তি নেয় নির্মান শ্রমিক আব্দুস সামাদ। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান প্রতিগৃহ নির্মানে ইউএনও স্যারের সঙ্গে তার চ্যুক্তি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা করে। নির্মান সামগ্রী কিনে দেন ইউএনও স্যার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইদ্রিস আলীর বাড়ির নিচু এলাকায়। সেটি উচু করে তৈরী করতে গিয়ে ৫০০ ইট বেশী খরচ হয়েছে। এ ছাড়া সে ঘরের ভেতর অতিরিক্ত সানসেট তৈরী করে নিয়েছে। এখন ঘর নির্মানে তার আরো ৫০০ ইট লাগবে। সেটি তাকে কিনে দিতে বলা হয়েছে। ইদ্রিসের কাছে রড বালু ও সিমেন্ট পেরেক কেন কিনে নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন লিনটন সহ সানসেট তৈরীতে তার এই খরচ করতে হয়। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5614829249784956332

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item