সৈয়দপুরে পবিত্র আশুরা পালিত

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ॥ ধর্মীয় ভাবগার্ম্ভীর মধ্য দিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরে পালিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা। কারবলার শোকাবহ ঘটনাবহুল এই দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয় ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপুর্ণ।
মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয়।
মঙ্গলবার(১০ সেপ্টেম্বর) জেলায় অবাঙালী অধ্যুষিত সৈয়দপুর শহরে আশুরার নানা অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে বিট্রিশ আমলে দক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য হাজার হাজার মানুষকে ভারতের বিহার রাজ্য থেকে আনা হয় এ জেলায়।
আশুরা উপলক্ষে, শহর জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় নির্মান করা হয় বড় বড় তোরণ।
আলোকসজ্জা করা হয় হরেক রকমের বাতিতে। আলাদা ভাবে ঈমাম বাড়ায় ইমাম হোসেনের মাজারকে স্বরণ করে মিনার সাদৃশ্য তাজিয়া নির্মাণ করা হয়। তাকে ঘিরে করা হয় আলোকসজ্জা। তালে তালে বাজানো হয় ঢোল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বসানো হয় মেলা। মেলায় হরেক রকমের পণ্য পাওয়া যায়। সেখানে নারী, পুরুষ, বয়োবৃদ্ধ সকলের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গন। আয়োজন করা হয় বিশাল তাজিয়া মিছিলের।
শহরের গুরুত্বপর্ণ জায়গা গুলোতে চলে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। আশুরার বেদনা দায়ক মূহুর্তে বলে হায় হোসেন, হায় হোসেন মাতম ও অন্যরকম নিয়মকানুন পালনের আয়োজন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের পাব্বর্তীপুর সড়কের সিয়া মসজিদ থেকে শোভা যাত্রা ও মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিন করে। এ সময় সকলের পরনে থাকে কালো পোশাক। ঢোলের তালে তালে দুহাত দিয়ে সজোরে বুকে আঘাত করে। একই সাথে মুখে উচ্চারিত হয় ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন। কেউবা অঝোর নয়নে কাঁদে আর হোসেনের মৃত্যর স্বরণে মাতম গীত গাইতে থাকে।
মাতমকারী দলের জালাল উদ্দিন (৫৫) জানান, ছুড়ি, ব্লেড দিয়ে শরীর জখম করে রক্ত ঝরিয়ে মাতমের রীতি পালন করা হয়। (প্রশাসন থেকে এবারে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে)। স্থানীয় হাতিখানা কবরস্থানের কাছে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা জায়গার মাঝে নির্মান করা হোসেনের কল্পিত মাজার, যা কারবলা নামে পরিচিত। দুলদুল ঘোড়ার আদলে সাজা পাইকরা কারবলায় মান্নত করা পোশাক খুলে ফেলেন। সেখানে সম্মিলিতভাবে সিন্নির আয়োজন করা হয়।
ঈমামবারা কমিটির সাধারন সম্পাদক এরশাদ হোসেন পাপ্পু (৫৫) জানান, আলোচনা ও দোয়া মাহফিল শেষে প্রিয় নবী (সাঃ) এর দৌহিত্র হাসান ও হোসেন (রাঃ) এর জীবনী আলোচনা করে তাদের রেখে যাওয়া পথ অনুসরণের মাধ্যমে মুসলিম জাতির ইহ ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এসময় ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে মহররম তথা পবিত্র আশুরা পালনের জন্য অনুরোধ জানান।
আয়োজক কমিটির সভাপতি, সহিদ হোসেন চিশতী (৬৫) জানান, মহরমের ৭ তারিখে কারবলা থেকে কিছু মাটি আনা হয়। বিশেষ নিয়ম অনুযায়ী সে মাটি একটি পাত্রে করে তাজিয়ার নিচে সংরক্ষিত রাখা হয়। এর পর তাজিয়াকে কেন্দ্র করে চলে অন্যান্য রীতিনীতি পালন।
শহর জুড়ে দর্শনার্থীরা দেখতে আসেন, দোয়া পড়েন, ভক্তি করেন। ১০ তারিখ অর্থাৎ আশুরার দিন মাটি যেখান থেকে আনা হয়েছিল সেখানেই রেখে আসা হয়। সে মাটি রাখার জন্য যেতে হয় শোকাবহ মিছিল সহকারে। কারও কারও শরীর রঙিন রশি, জরির ফিতা এবং ছোট ছোট ঘুন্টির মালা দিয়ে পেঁচানো। প্রত্যেকের মাথা সাদা ও সবুজ কাপড়ের টুকরো দিয়ে ঢাকা। হাতে লাল সবুজ আর সাদা রংয়ের পতাকা। হাজার হাজার লোকের মিছিলে প্রতীকি কারবলায় (সৈয়দপুর শহরে) তিল ধরনের জায়গা থাকেনা।
সৈয়দপুর থানা ওসি শাহজাহান পাশা জানান, সকাল থেকে শহরের প্রতীকি কারবালা প্রান্তরে হাজার হাজার দর্শনার্থী ও ভক্তরা এসে জমায়েত হয়। তিনি বলেন, শহরে ৪৬টি ঈমামবারা কমিটি রয়েছে। এখানে সাম্প্রদায়িক কোন সংঘাত নেই। ফলে শান্তিপুর্ণভাবে পালিত হয়েছে আশুরা। নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব টহল দিচ্ছে। সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি করা হচ্ছে। ফলে এ বছর সৈয়দপুরে আশুরায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4464986531400272732

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item