কিশোরগঞ্জে সঠিক মনিটরিং না থাকায় ভেঙ্গে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা
https://www.obolokon24.com/2019/09/kisargang.html
মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য বর্তমান সরকার যেখানে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছে সেখানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় দিন দিন ভেঙ্গে পরেছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাবস্থা। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসারদের সঠিক মনিটরিং না থাকার কারনে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক অনুপুস্থিত এবং ক্লাস ফাঁকির কারনে পাঠদানের ক্ষেত্রে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় মোট ১৭৫ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে মোট ছাত্রছাত্রী রয়েছে ২৯ হাজার ৩৭৩ জন। প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৭৫টি এর মধ্যে ২০টি প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে ৮৪৮ টি এর মধ্যে শুন্য রয়েছে ৬৩ টি।
গত বুধবার ৪ সেপ্টেম্বর বেলা সারে ১১ টার সময় সরেজমিনে বড়ভিটা ইউনিয়নের উত্তর মাষ্টারপাড়া আর্দশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেনীতে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছেন কিন্তু ক্লাসে কোন শিক্ষক নেই। এসময় বিদ্যালয়ের দুইজন সহকারী শিক্ষিকাকে রুমে বসে গল্প করতে দেখা গেলেও প্রধান শিক্ষক পারুলরানীসহ অন্য কোন শিক্ষক চোখে পড়েনি। সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষিকা পারুল রানী স্কুলে এসে সরাসরি ক্লাসে প্রবেশ করেন।
এসময় প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কোন তথ্য দিতে পারবেননা বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এসময় প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কোন তথ্য দিতে পারবেননা বলে সাফ জানিয়ে দেন।
বেলা ২ টা ১৪ মিনিটে রণচন্ডি ইউনিয়নের রণচন্ডি কুঠিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়টির একটি ভবনে তালা ঝুলছে এবং অপর একটি ভবনে ১০ থেকে ১৫জন শিক্ষার্থী খেলাধুলা করছে।
এসময় দুই থেকে তিনজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানায় স্যারেরা বিদ্যালয় ভবনে তালা লাগিয়ে সবাই বাড়িতে দুপুরের খাবার খেতে গেছেন। এসময় শেফালি বেগম নামে এক সহকারী শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষকের কক্ষের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। এর ৫ মিনিট পর বিদ্যালয়ে আসেন রবিউল ইসলাম নামে অপর এক সহকারী শিক্ষক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার ১০ থেকে ১৫ জন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়টিতে মোট ৬ জন শিক্ষক রয়েছে তাদের সকলের বাড়ি বিদ্যালয়ের কাছাকাছি এর মধ্যে আবার স্বামী স্ত্রীও রয়েছে। তাই শিক্ষকরা সকাল ৯ টার পরিবর্তে ১০ টা আবার কেউ কেউ ১১ টায় বিদ্যালয়ে আসেন আবার চলে যান দুপুরের পর।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর গাড়াগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী ইউনুছ আলী প্রথম শেনীর শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন।
এবং অন্য ক্লাসে ক্লাস নিচ্ছেন আরো দুইজন সহকারী শিক্ষক। এসময় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আরজুমানন্নাহার চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ ৬ টি , ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৩২ জন। গত কয়েক মাস আগে তিনজন শিক্ষক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার কারনে আমি বাচ্চাদেরকে সঠিকভাবে পাঠদান করাতে পারছিনা তাই বাধ্য হয়ে নৈশ প্রহরীকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি।
বার বার ক্লাস্টার অফিসারকে আমার বিদ্যালয়ের সমস্যার বিষয়ে বললেও তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। এছাড়াও উপজেলার বাহাগিলি, পুটিমারী, নিতাই,চাঁদখানা ইউনিয়নসহ অন্যন্য ক্লাস্টার ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে।
বার বার ক্লাস্টার অফিসারকে আমার বিদ্যালয়ের সমস্যার বিষয়ে বললেও তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। এছাড়াও উপজেলার বাহাগিলি, পুটিমারী, নিতাই,চাঁদখানা ইউনিয়নসহ অন্যন্য ক্লাস্টার ঘুরে একই চিত্র পাওয়া গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শরিফা আক্তার বলেন, যে সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সময়মত বিদ্যালয়ে আসেননা এবং ক্লাস ফাঁকি দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানউন্নয়নের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছে। বিষয়টি আগামী শিক্ষা কমিটির মিটিংয়ে তুলে ধরা হবে।