পাট চাষে ভাগ্য বদল ঠাকুরগাঁওয়ের চাষীদের

আব্দুল আউয়াল,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
বিগত বছরগুলোর তুলনায় বাজারে অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে পাটের। তাই পাট আবাদ করে উৎপাদনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় এবার খুশি ঠাকুরগাঁওয়ের পাট চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসসহ সংশ্লিষ্ট ধারণা করছেন ধান ও গমের ন্যার্য না পাওয়ায় পাট চাষেই দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে জেলার চাষীদের।
যদিও জেলার জুমিগুলো উঁচু হওয়ার কারণে জলাশয়ের অভাবে পাট পচানো নিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে পাট আবাদকারী চাষীদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, গেল মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলায় ৫ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়। চলতি বছর তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর। এরমধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হয়েছে ১ হাজার ৬০০  হেক্টর জমিতে, রানীশংকৈল উপজেলায় হয়েছে  ৯৫০ হেক্টর জমিতে, পীরগঞ্জ উপজেলায় হয়েছে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে, হরিপুর উপজেলায় হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে।


পাট মানে কৃষকের গলার ফাঁস-এক সময়ের এই প্রবাদ এখন পুরনো হতে শুরু করেছে বলে জানান কৃষকরা। এবার দেশি, তোষা ও মেশতা ছাড়াও উঁচু মাটিতে কেনাফ এইচ বি-৯৫ জাতের পাট আবাদ করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের চাষীরা।

ফলনে খুশি হলেও মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাট বিক্রি করতে গিয়ে তারা হতাশ হয়েছেন চাষীরা। ফলন ভালো হলেও কাম প্রথম অবস্থায় কম দামের কারণে উৎপাদন খরচই ওঠেনি বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। তবে পরবর্তীতে ১৭০০-১৮০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হওয়ায় তারা খুশি।

সদর উপজেলার আউলিয়া পুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক ফইম উদ্দীন বলেন, এক একর জমিতে ৪২ মণ পাট হয়েছে। নিজস্ব জলাশয়ে পচিয়ে আশও ভালো পেয়েছি। প্রতিমণ পাট ১৮শ টাকা বিক্রি করে ৩০ হাজার লাভ করেছেন তিনি।

জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, মৌসুমের শুরুতে বাজার দর কম থাকায় পাটগুলো বিক্রি করিনি। এখন বাজার দর ভালো। রোদ্রের অভাবে অল্প পাট শুকাতে পারিনি। কড়া রোদ্র হলে পাট শুকিয়ে একসাথে বিক্রি করবো। আশা করছি মোটা অঙ্কের একটা টাকা লাভ হবে।

রায়পুর ইউনিয়নের আমিনুল ইসলাম বলেন, পুকুরে পাট পচানো নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবার। পাট পচালে সেই পুকুরের মাছ চাষ করা যায় না। মাছ থাকলেও পাটের দুগন্ধে সেগুলো মারা যায়। এ জন্য বর্ষার শুরুতে ডোবাগুলোকে পাট পচানোর জন্য ব্যবহার করেছি।

অন্যদিকে পাট কাটা থেকে শুরু করে আঁটি বাঁধা, পানিতে ফেলা, পচলে আঁশ ছাড়ানো ও ধুয়ে শুকাতে দেওয়া থেকে বাজারে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অনেক কাজ থাকে। এ কারণে পাট উঠানোর সময় অনেকে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজের সুযোগ পান।

শ্রমিকরা বলছেন, আমন রোপা লাগানো শেষ হয়ে যাওয়ার পরও পচানো পাট থেকে আশ ছাড়াতে প্রায় দুমাস কাজ পাওয়া যায়। ৪-৫শ টাকা প্রতিদিনি আয়ের একটা সুযোগ হয়। যদি জেলার চাষীরা পাট আবাদ বন্ধ করে দেয়। অনেক শ্রমিক কাজ থেকে বঞ্চিত হবে।


ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, লক্ষ্যমাত্র অনুযায়ী পাট চাষে জেলার চাষীদের ভাল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে পাটে পোকার আক্রমণ করলেও তেমন কোন ক্ষতি হয় না। সঠিক সময়ে পাট বাজারে উঠলে কৃষক ন্যার্য মূল্য পাবে। সময়ের বিবর্তনে “সোনালী আশ” হিসেবে পরিচিত পাট তার নিজস্ব ঐতিহ্য ফিরে পাবে।

পুরোনো সংবাদ

কৃষিকথা 2902360267869866640

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item