দুই শিক্ষকের ক্ষমতা নেওয়ার দ্বন্দ্বের জাতাকলে ১৯ শিক্ষক কর্মচারীর বেতন বন্ধ ৫ মাস ধরে।


লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত ২৬৩ শিক্ষার্থী


আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি) ,স্টাফ রিপোর্টার ঃ  নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মটুকপুর ভোকেশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট হওয়ার দ্বন্দের জাতাকলে পড়েছেন ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত ১৯ শিক্ষক কর্মচারীসহ ২৬৩ শিক্ষার্থী।
ওই দুই শিক্ষকের দ্বন্দের কারণে পাঁচ মাস ধরে বেতন ভাতা বন্ধ আছে প্রতিষ্ঠানটির। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সেখানে কর্মরতরা। প্রশাসনিক কাজের জন্য নিদিষ্ট ব্যক্তির অভাবে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। পাঠ দানের অচলাবস্থায় কমেছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার।
সরেজমিনে গত  রবিবার দুপুর একটা ৫০ মিনিটে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে নবম শ্রেণীতে ১৯০ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক জন ছাত্র উপস্থিত ও  এবং দশম শ্রেণীতে ৭৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জনকে উপস্থিত পাওয়া যায়।তবে মেয়েদের কমনরুমে ১০ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় ।
ওই দুই শ্রেণীতে মোট ২৬৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যায় ২১ জনকে। অপরদিকে ২১ শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে কাগজে কলমে ১৯ জন উপস্থিত দেখোনো হলেও বিদ্যালয় চত্ত্বরে পাওয়া দেখা যায় ৪ জন শিক্ষককে।সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে এক জন শিক্ষক ও একজন পিয়ন আসে ।
অভিভাবকরা জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. এরফান ইসলাম ও আব্দুল মান্নানের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট হওয়ার দ্বন্দ শুরু হয় ২০১৫ সালের শেষের দিকে। সে থেকে তাদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ গড়ায় কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষা মন্ত্রনালয় পর্যন্ত। ওই দুই শিক্ষকের পক্ষে বিপক্ষে অন্য শিক্ষক কর্মচারীরা অবস্থান নেওয়ায় কেউ কারো কথা মানছেন না। এতে করে প্রশাসনিক অচলাবস্থার সাথে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।
ওই দুই পক্ষের দ্বন্দের কারণেই গত এপ্রিল মাস থেকে বেতন-ভাতা তুলতে পারছে না সেখানে কর্মরতরা।
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট এরফানুল ইসলাম ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত কারণে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। সে সময়ে দ্বিতীয় জেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকারিয়া দায়িত্ব গ্রহনে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় তৃতীয় জেষ্ঠতম শিক্ষক আব্দুল মান্নানকে ওই ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব প্রদান করেন ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ অবস্থায় ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারী ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্টের অব্যহতি ও নতুন ভারপ্রাপ্ত  সুপারেনটেনডেন্টের নিয়োগ প্রসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়। বোর্ড কতৃপক্ষ এরফানুল ইসলামকে জেষ্ঠ ও যোগ্যতর বিবেচনায় পদত্যাগপত্র গ্রহন না করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মতামত প্রদান করেন। দীর্ঘদিনেও সেটির নিরসন না হওয়ায় এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের জেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক ছাদেকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সুপারেনপেনডেন্ট পদটি নিয়ে সৃষ্ঠ জটিলতার কারণে আমরা গত এপ্রিল মাস থেকে কোনো বেতন ভাতা পাচ্ছি না। গত পাঁচ মাস ধরে বেতন ভাতা না পাওয়ায় বিদ্যলয়ের ১৪জন শিক্ষক ও ৭জন কর্মচারী পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই একজন শিক্ষক কর্মচারীর পারিবারিক স্বচ্ছলতা থাকলেও বেশিরভাগ শিক্ষক কর্মচারী ওই বেতন ভাতার ওপর নির্ভরশীল। এখন আমাদের বাচ্চাদের স্কুল কলেজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছি না। অনেকে ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। আমরা চাই এ অবস্থার দ্রুত নিরসন।’
বিদ্যালয়ের ড্রেসমেকিং বিষয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে আমাদের বেতন ভাতা প্রদানে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট এরফান ইসলামকে দিয়ে বিলে স্বাক্ষর করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আব্দুল মান্নানের পক্ষ অবলম্বন করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল বাতেন সরকার, ভবেন্দ্র নাথ বর্মন, ও শিক্ষক প্রতিনিধি ছয়ফল হকের বিরোধীতার কারণে আমাদের আর বিল বেতন হয়নি। তাই ঈদের উৎসব থেকেও আমরা বঞ্চিত ছিলাম।’
বিদ্যালয়েন নবম ও দশম শ্রেণীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন,‘শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে  ক্লাসে খারাপ প্রভাব পড়ছে, বেতন না পেলে ক্লাসে স্যারদের আন্তরিকতা থাকে না। একারণে অনেকেই স্কুলে আসছে না। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
এ বিষয়ে কথা বললে এরফান ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে আমিই ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট। ব্যবস্থাপনা কমিটি সুপারেনটেনডেন্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে বিধি মোতাবেক ওই পদে প্রার্থী হতে ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট পদ থেকে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অব্যহতি চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ড আমার পদত্যাগ গ্রহন করেনি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ব্যবস্থাপনা কমিটি সুপারেনটেনডেন্ট নিয়োগ দেননি।’
তিনি বলেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষ আমার আবেদন গ্রহন না করে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারীতে পত্র দেয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ওই পত্রের অনুলিপি শিক্ষা কমিটির সদস্য তৎকালীন নীলফামারী-৩ আসনের সাংসদ গোলাম মোস্তফাকেও দেওয়া হয়। কিন্তু ওই পত্র উপেক্ষা করে আব্দুল মান্নানের ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্টের পদটি অব্যাহত রাখেন কমিটির সদস্যরা। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল বিদ্যালয় পরিচালনা এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এ অবস্থায় ১৫ এপ্রিল মন্ত্রনালয় ও বোর্ড আমাকে ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট দ্বায়িত্ব প্রদান করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অবহিত করার জন্য সভাপতিকে নির্দেশ দেন। গত ৩ জুন আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমি ২ জুলাই যোগদান করি। এবং ৩ জুলাই ভারপ্রাপ্ত সুপারেণ্টেনডেণ্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করি। কিন্তু আব্দুল মান্নান দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে জোরপূর্বক নিজেকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট দাবি করে আসছেন।’
সহকারী শিক্ষক ছাদেকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আব্দুল মান্নান নির্বাচনী সহিংসতার মামলায় ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত জেল হাজতে ছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত না করে জেলহাজতে থাকার সময়টাকে ছুটি দেখানো হয়েছে।’
এসব বিষয়ে আব্দুল মান্নান বলেন,‘মো. এরফান ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ থেকে সেচ্ছায় পদত্যাগ করার পর ব্যবস্থাপনা কমিটি আমাকে সে দায়িত্ব প্রদান করেছে। সে থেকে আমি ওই দায়িত্ব পালন করে আসছি। বর্তমানে আমি ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট। আমার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটি মিথ্যা। পরে পুলিশ চার্জসিড থেকে আমার নাম বাদ দিয়েছে।’টিফিন খেতে গেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ,তারা কিছুক্ষনের মধ্যেই আসবে ।
বোর্ড কর্তৃপক্ষ এরফান ইসলামের পদত্যাগ এবং ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আব্দুল মান্নানকে দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি গ্রহন করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান দাবি করে বলেন,‘ওই পদের পদত্যাগ গ্রহন এবং দায়িত্ব প্রদানের জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটিই যথেষ্ট।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুল বাতেন সঙ্গে কথা হলে তিনি আব্দুল মান্নানের পক্ষ অবলম্বন করে বলেন, ‘এরফান ইসলাম স্বেচ্ছায় ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট পদ ছেড়ে দেওয়ায় আব্দুল মান্নান ওই পদে যোগদান করেছেন।’
আব্দুল মান্নান নাশকতার মামলায় জেল হাজতে থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তাকে জোর করে ফাঁসানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে কথা বললে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা বলেন, ‘বোর্ডের ও মন্ত্রনালয়ের চিঠি অনুযায়ী আমি এরফান ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সুপারেনটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছি। কিন্তু আব্দুল মান্নান তাকে দায়িত্ব বুঝে দিচ্ছেন না। এ কারণে শিক্ষক কর্মচারীদের বিল বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। আমি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। মতামত পেলে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 4038037539098997122

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item