সৈয়দপুরে বাঙ্গালীপুর হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষক শিক্ষিকা সংকটে ব্যাহত পাঠদান ॥

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
 নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষিকা সংকটে  পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র দুই শিক্ষক দিচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম। আর শ্রেণীকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের বারান্দায় বসে চলছে পাঠদান। আর চলতি বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ ও খেলার মাঠ কাঁদাপানিতে একেবারে একাকার। টিফিন পিরিয়ডেও শ্রেণীকক্ষে অলস বসে সময় কাটতে থাকতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের।
 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার তিন নম্বর বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের খড়খড়িয়াপাড়ায় বাঙ্গালীপুর হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থিত। বিগত ১৯৯৩ সালে বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের প্রামানিকপাড়ার সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী মরহুম আলহাজ্ব নুরুল হক প্রামানিকের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা পায়। তাঁরই নিজস্ব ৩৩ শতক জায়গার ওপর তিনি প্রথমে টিনশেড বিদ্যালয়টি গড়ে তোলেন।  শুরু থেকে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী মানসম্মত পাঠদান করা হচ্ছে। এরপর গেল ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে দুই শিফটে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১৫১জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এদের মধ্যে ছাত্র ৭৬ জন এবং ছাত্রী ৭৫ জন। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে শ্রেণীওয়ারি ছাত্রছাত্রী রয়েছে  শিশুতে ৩৮ জন, প্রথম শ্রেণীতে ৩০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২৭ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ২৬ জন, চর্তুথ শ্রেণীতে ১৭ জন এবং পঞ্চম শ্রেণীতে ১৩ জন। বিদ্যালয়টিতে উল্লিখিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বর্তমানে মাত্র ৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু এদের মধ্যে প্রধান শিক্ষিকা মোছা. শাহানারা রাজিয়া নীলফামারীতে পিটিআই প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন। আর সহকারি শিক্ষিকা নিলুফা জেসমিন বগুড়ায় ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণে রয়েছে। ফলে বর্তমানে মাত্র দুই জন শিক্ষিকা দিয়ে পাঠদান চলছে বিদ্যালয়টিতে। এতে করে পাঠদানে মারাত্মক বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। গতকাল রবিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শিফ্ট চলছে। সহকারি শিক্ষিকা সায়রা বাণু ও সাবিনা বেগম দুইজন মিলে এক সাথে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠদান করছেন।
সহকারি শিক্ষিকা সায়রা বাণু বলেন, এক সাথে দুই শ্রেণীর পাঠদানে মারাত্মক বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে। সময় স্বল্পতার কারণে  সকল শিক্ষার্থীর  প্রতি নজর দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন একটি সেমিপাকা টিনশেড ঘরের তিনটি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অপর দুইটি কক্ষের দুইটি শ্রেণীর পাঠদান করা হয়। ফলে প্রথম শিফটে একটি শ্রেণীর পাঠদান করতে হয় বিদ্যালয়ের বারান্দায়। অনুরূপভাবে  দ্বিতীয় শিফ্টে বিদ্যালয়ের দুইটি শ্রেণী কক্ষে দুইটি শ্রেণীর পাঠদান করা হয়। আর একটি শ্রেণীর পাঠদান চলে বারান্দায়।
 উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের চৌমুহনীবাজার থেকে  পাবর্তীপুরের বেনীরহাট যাওয়ার পাকা রাস্তার পাশে নিচু এলাকায় বিদ্যালয়টি হওয়ার বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ ও খেলার মাঠে পানি জমে মারাত্মক কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাঁদাপানি মাড়িয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে হয়। আর বিদ্যালয়ে মাঠে কাঁদা-পনির কারণে টিফিন পিরিয়ডেও শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ পান না। তখন তাদের শ্রেণীকক্ষে অলস বসে সময় কাটাতে হয়।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি মো. ফজলুল হক মঞ্জু জানান, বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন নির্মাণের জন্য অনেক দৌঁড়ঝাঁপ করেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। শুরুতেই অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিদ্যালয়ের সেমিপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ ও শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক টিউবওয়েল বসিয়েছি, বানিয়েছি আলাদা টয়লেট। বিদ্যালয় মাঠে উঁচু করতে বেশ কিছু টাকা পয়সা ব্যয় করেছি। এখনও মাঠ ভরাট করতে অনেক অর্থ লাগবে। নিজের থেকে আর কত টাকা-পয়সা ব্যয় করবো।
 গতকাল (রোববার) দুপুরে বাঙ্গালীপুর হাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির সার্বিক বিষয় নিয়ে সৈয়দপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহজাহান মন্ডলের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধি। তিনি জানান, গত জুন মাসে আমি সরেজমিনে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়েছি। বিদ্যালয়টি জন্য পাকা ভবন নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। আমার দাপ্তরিকভাবে ওই  বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নির্মাণের জন্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি শিগগিরিই বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনুমোদন মিলবে।   

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 5611860912013455827

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item