ভ্যাপসা গরমে নীলফামারী জেলার হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে রোগীর চাপ

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ১৭ জুন॥ নীলফামারীর হাসপাতালগুলোতে বেশ কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া ও সর্দি-জ্বরসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রচন্ড গরমে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চিকিৎরা মনে করছেন। আজ সোমবার  সরেজমিন দেখা যায়,  ১০০ শয্যার সদর আধুনিক হাসপাতালে তিনগুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ৩৫৮ জন, মহিলা ওয়ার্ডে ৩৪৭ জন, শিশু ওয়ার্ডে ৮৫ জন ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৬৭ জন।
সদর আধুনিক হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট মাস্টার জবেদুল ইসলাম বলেন,গরম শুরু হওয়ার পর থেকে রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ রোগী টিকিট কাটেন। গরমের কারণে এ বাড়তি রোগীর চাপ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে রোগী ও তার স্বজনরা ওষুধ নিচ্ছেন।
জলঢাকা উপজেলা থেকে নীলফামারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নাজমিন বেগম বলেন তার তিন বছরের ছেলে নাজমুল হক কয়েকদিন ধরে জ্বর, বমি আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এ কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন সে অনেকটা ভালো।নীলফামারী সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের চেংমারী গ্রামের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগী রোজিনা বেগম বলেন, ১৩ জুন সকালে দুই মেয়ে মিতু (২) মুক্তিকে (৪) ভর্তি করেছি। গরমে তাদের পাতলা পায়খানা শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
ডাক্তার আপা বলেছেন, ভয়ের কোনও কারণ নেই, স্যালাইন খেলে ভালো হয়ে যাবে। সদর আধুনিক হাসপাতালের স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ মো. আব্দুল বাসেত বলেন, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এসময় শিশুদের প্রতি একটু বাড়তি নজর রাখতে হবে। গরমে শিশুদের নিরাপদে রাখতে মায়েদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ভর্তি শ্বাসকষ্টের রোগী হালিম মোল্লা (৭১) ও জয়নাল আবেদীন (৬৯) বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে অসুস্থবোধ করছি। গত ৯ জুন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখন পর্যন্ত আরাম বোধ করছি না। আরও যে কতদিন থাকতে হবে ঠিক নেই। তার উপর বিদ্যুৎ থাকেনা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, বিশেষ করে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি, ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাবার ও দূষিত পানি পান করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুরা ঘামলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে দিতে হবে। তাহলে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। এ ব্যাপরে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
সদর আধুনিক হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আমিনুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিশুরা জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা ও পরিষ্কার পানিসহ তরল খাবার খাওয়াতে হবে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায় এমন ঘরে রাখতে হবে। যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের বার বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। গরমে শিশুদের চিপস, আইসক্রিম, চকলেট ও জুস জাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো। শিশুদের প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন রোগের প্রদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বড়দের পাশাপাশি শিশুরা, সর্দি-কাশি জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।তিনি বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তাসহ মাঠকর্মীরা প্রতিদিন মাঠ পর্যায়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত  রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, সরকার হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করছে। চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে এইসব সমস্যা কেটে যাবে।#

পুরোনো সংবাদ

স্বাস্থ্য-চিকিৎসা 1051541981708635763

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item