নানা অনিয়মের অভিযোগ। শুক্র ও শনিবার ডোমারে ২৫ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ পরীক্ষা

আবু ফাত্তাহ্ কামাল (পাখি),স্টাফ রিপোর্টারঃ হুমকি,ধামকি, ঘুষবানিজ্য,দলীয় প্রভাব, প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় ২৫ টি স্কুলের  আগামীকাল শুক্রবার (১৪ই জুন ) দুই দিনব্যাপী দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদের নিয়োগ  পরীক্ষা শুরু হয়েছে । শুক্রবার ১৩টি ও শনিবার অনুষ্ঠিত হবে ১২ বিদ্যালয়ের প্রার্থীদের প্রার্থীদের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগেই প্রার্থী চুড়ান্ত, নিয়ম ভেঙ্গে বিদ্যালয়ের ক্যাচম্যান্ট এলাকার বাইরের প্রার্থী এবং ৩০ বছরের বয়সসীমার বাইরে ৪০ ও ৪৪ বছর বয়সের প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ সম্পন্নে মোটা অংকের অর্থের লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে।

দুই দিন ব্যাপী এই নিয়োগ পরীক্ষা পরীক্ষায় ২৭৩ জন  প্রাথী অংশ গ্রহন করছে ।এই নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে পুরো উপজেলায় প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ,ঘুষবানিজ্য ও দলীয় প্রভাবের গুঞ্জনে মুখরিত ।ওই পদের চাকুরী প্রার্থী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসীর পক্ষে এসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়। তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ঠ বিদ্যালয়ের কতিপয় প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি মোটা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার আগেই নিয়োগ প্রদানের প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত করেছেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক বরাবরে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান অনেকে।

উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ডুগডুগি বড়গাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরীর চাকুরী প্রার্থী বিকাশ রায়, গোলাপ হোসেন, ও সোহেল রানা অভিযোগ করে বলেন, যোগ্যতার শর্তাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো বিদ্যালয়ের ক্যাচম্যান্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে প্রার্থীকে। কিন্ত ওই বিদ্যালয়ে ১৩ জন প্রার্থীর মধ্যে  ননী গোপাল নামে একজনের বাড়ি ক্যাচম্যান্ট এলাকার বাইরে হলেও তাকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। উক্ত ননী গোপাল ইউনিয়নের বড়গাছা ডাঙ্গাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির একজন অভিভাবক সদস্যও। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলেও আমলে নেয়নি সে অভিযোগ।
তারা বলেন,‘শর্ত ভঙ্গ হলেও ওই প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেওয়া বিষয়টি প্রমান করে মোটা অংকের অর্থের লেনদেন। এখন পরীক্ষা যেমনই হোকনা কেন ওই প্রার্থীকেই নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত করা হবে বলে আমাদের আশঙ্কা।’
ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফেরদৌসী আজাদ বলেন,‘প্রার্থী ক্যাচম্যান্ট এরিয়ার বাসিন্দা কিনা, এবিষয়ে সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক যৌথ স্বাক্ষরে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করবেন। সেটি যুক্ত করে আবেদনপত্র জমা করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ওই প্রার্থী ক্যাচম্যান্ট এলাকার না হওয়ায় তাকে কোন প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা হয়নি। এরপরও  উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার নামে প্রবেশপত্র ইস্যু করার বিষটি হতবাক করেছে আমাকে সহ এলাকার মানুষকে। এবিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি নিজে ও কয়েকজন প্রার্থী পৃথকভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছি।
তিনি জানান, ননী গোপালের বিষয়ে অভিযোগ উঠলে তদন্ত করেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সামাদ। অজানা কারণে তিনি তার প্রার্থীতা বৈধ করে প্রবেশ পত্র প্রদান করেছেন।
এদিকে হরিণচড়া ইউনিয়নের শালমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৈধ প্রার্থী যোঘণা করা হয়  জনকে। শর্তে আবেদনকারীর বয়সসীমা ৩০ বছর উল্লেখ করা হলেও শেওটগাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমানের বয়স ৪৪ বছর ও সৈয়দ আহমেদ বাবুর বয়স ৪০ বছর। নিয়োগ কমিটি যাচাই-বাছাই করে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করার নিয়ম থাকলেও ওই দুই প্রার্থীকে পরীক্ষার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। বিষটি এলাকায় জানাজানি হলে মিজানুর রহমান তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু বৈধ রয়েগেছেন সৈয়দ আহমেদ বাবু।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী এক সদস্য বলেন,‘যাচাই-বাছাইয়ের সময় বিষটি আমাদেরকে জানানো হলে সঠিক তথ্য প্রদান করা সম্ভব হতো। আমাদেরকে এড়ানোর বিষটি কতৃপক্ষের উদ্দেশ্য প্রনোদিত হতে পারে।
ভোগডাবুরী ইউনিয়নের গহিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই পদে ১৩জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে মো. রেজওয়ান নামের একজন অভিযোগ করে বলেন, ওই বিদ্যালয়ে দপ্তরী নিয়োগ দানের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোফাখ্খারুল ইসলাম ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন তার কাছে। এখন অন্যজনের কাছে বেশি টাকা পাওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোফাখ্খারুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, ‘কেউ বললে বলার ও করার কিছু নেই। অফিস যে ভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সে ভাবে কাজ করছি।’
একই ইউনিয়নের আব্দুর রউফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবেদন করেন ১৩জন প্রার্থী। ওই বিদ্যালয়ে পরীক্ষার আগেই একজন প্রার্থীর নিয়োগ চুরান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অপর প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে তিনজন প্রার্থী জেলা প্রশাসক বরাবরে বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বললে, দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ডোমার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমীর হোসেন অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করে বলেন,‘নিয়োগ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ছয় সদস্যের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, সংশিলষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থপানা কমিটির সভাপতি। আমরা সকলে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবো। এতে অনিয়ম হওয়ার কোন সুয়োগ থাকে না।’
ক্যাচম্যান্ট এরিয়ার বাইরের প্রার্থীকে পরীক্ষার সুযোগ দানের ব্যাপারে তিনি বলেন,‘ননী গোপাল নামের ওই প্রার্থীর পূর্বের একটি প্রত্যয়নপত্র আছে। বর্তমানে তার বাড়ির কাছে যে বিদ্যালয়টি আছে সেটি সে সময়ে ছিল না। একারণে তাকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত ২৪ ফেব্রুয়ারী। পদটিতে আবেদন করেন ৩২০ জন প্রার্থী। যাচাই-বাছাইয়ে ৪৭টি আবেদন বাতিল হলে ২৭৩ বৈধ প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহনর অনুমতি প্রদান করা হয়। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে দুটি ধাপে। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১৩টি এবং শনিবার একই সময়ে ১২টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি বাইরে থাকার কারণে অভিযোগ দেখতে পারিনি। দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 7836838396346578950

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item