সৈয়দপুরে ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে দেড় শ’ একর জমির উঠতি ইরি-বোরো ধান নষ্ট ॥ কৃষকদের হাহাকার


তোফাজ্জল হেসেনস লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে একই মালিকের পাশাপাশি অবস্থিত দুইটি ইটভাটার নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় দেড় শ’ একর জমির ইরি - রোবো ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার ১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত কামারপুকুর এলাকায় অবস্থিত মেসার্স এমজেডএইচ ব্রিকস্ থেকে নির্গত গ্যাসে কৃষকদের ওই ধান ক্ষেত পুড়ে নষ্ট হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা এ অভিযোগ করে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছে। ইটভাটার মালিক শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ার বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. হারুন-অর-রশিদ। গত বুধবার দুুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস. এম. গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোছা. হোমায়রা মন্ডল ক্ষতিগ্রস্থ ধানক্ষেতগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। কৃষকদের চোখের সামনে তাদের কষ্টার্জিত অর্থব্যয়ে ও নিজের শ্রম ঘামে আস্তে আস্তে ধানক্ষেত পুড়ে যেতে দেখে তারা (কৃষকরা) হা -পিত্যেশ করছেন।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত কামারপুকুর এলাকায় মেসার্স এমজেডএইচ ব্রিকস নামে দুইটি ইটভাটা অবস্থিত। বেশ কিছুদিন আগে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. হারুন-অর-রশিদ  সেখানে তিন ফসলি আাবদি কৃষি জমিতে প্রথমে একটি ইটভাটা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে একই এলাকায় পাশাপাশি আরো একটি ইটভাটা স্থাপন করেন। আর ওই ইটভাটার আশপাশের জমির মালিকরা ও বর্গাচাষীরা প্রতি বছরের মতো এবার জমিতে যথাসময়ে বিভিন্ন জাতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করেন। ধান লাগানো পর থেকে কৃষকরা  প্রয়োজন মতো, সার, ওষুধ ও সেচসহ নানা কৃষি উপকরণ দিয়ে ধান ক্ষেত পরিচর্যা ও দেখভাল করে আসছিলেন। কৃষি বিভাগের সার্বিক পরামর্শে আর কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয়ে তাদের লাগনো ধানক্ষেতগুলো বেশ হৃটপৃষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে কোন কোন ধানক্ষেতের শীর্ষ বের হয়েছে, আবার কোন কোন ধানক্ষেতের শীষ বের হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে আগাম জাতে লাগানো কোন কোন ধানক্ষেতে পাক এসে সোনালী বর্ণ ধারণ ধরেছে।

আর ক’দিন পরে ওই সব ধান কৃষকদের ঘরে তোলার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন কৃষকরা। আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ, শ্যামল ও সোনালী বর্ণের ধান ক্ষেত দেখে এলাকার কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দেয়। তারা মনের মধ্যে নানা রকম স্বপ্ন বুনছিলেন। আশা করছিলেন স্বপ্নের ধান কেটে ঘরে তুলে তা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করাসহ পরিবারের যাবতীয় ব্যয়ভার মেটাবেন। কিন্তু এরই মধ্যে তাদের (কৃষক) সেই স্বপ্ন ও আশা যেন গুড়েবালি হতে বসেছে। তাদের জমির ঠিক পূর্ব পাশে অবস্থিত মেসার্স এমজেডএইচ ব্রিকসের নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ে উঠতি ধান ক্ষেতগুলোর শীষ কালো হয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। আর যে সব ধান ক্ষেতের শীষ এখানো বের হয়নি, বা বের হওয়ার উপক্রম, সে সব ধানগাছের পাতা শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের চোখের সামনে শত কষ্টে, পরিশ্রম ও অর্থে চাষাবাদ করা ধানক্ষেত নষ্ট হতে দেখে কৃষকরা হা-পিত্যেশ করছেন। অনেকে আবার ক্ষেতের পাশে বসে বিলাপ করছেন। তাদের মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থান এখন। চরম দুশ্চিন্তায় ও হতাশায় তারা যেন তাদের মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। আর এ মুর্হুতে কি করবেন তা ভেবেচিন্তে কোন কুলকিনারা পাচ্ছেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ও গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স এম জেড এইচ ব্রিকস নামের ইটভাটার পাশে ঠিক পশ্চিম-দক্ষিণ কোনে প্রায় ১৫০ একর জমির উঠতি ইরি-বোরো ধানক্ষেতে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ সময় সেখানে কথা হয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. আজিজুল ইসলাম, মো. শফিকুল আলম,  আব্দুল হামিদ, ন্রু আলম, মো. মুসা, কালু মামুদ, সহিমা খাতুনসহ বেশ কিছু কৃষকের সঙ্গে। এ সময় তাদের চোখে মুখে ছিল হতাশা আর দুশ্চিন্তার ছাপ।
কৃষক আজিজুল ইসলাম জানান, তিনি এবারে প্রায় ১৫ দোন (৩০ শতাংশে এক দোন) জমিতে বিভিন্ন ইরি- বোরো ধান লাগিয়েছেন। গত কয়েক মাস দিনের অধিকাংশ সময়েই তার ধানক্ষেতে অতিবাহিত হয়। আবহাওয়া অনুকূলে ধাকায় ধানক্ষেত ভাল হয়েছে।  ধান চাষাবাদের জন্য তিনি  বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ছাড়াও অনেকজনের টাকা বেশকিছু টাকা-পয়সা ঋণও করেছেন। তাঁর আশা ছিল ধান কেটে ঘরে তুলে তা বিক্রিবাট্টা করে ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে তাঁর ধানক্ষেত পুরোটাই পুড়ে গেছে।
 একই এলাকার কৃষক  মো. জুয়েল জানান, আমি অন্যের  ১০ দোন জমি চুক্তিতে বর্গা নিয়ে ধান লাগিয়েছি। ইতোমধ্যে জমির মালিককে পুরো টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। আর  এনজিও থেকে ঋণ দিয়ে ওই জমি বর্গা নিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি কিভাবে ঋণের টাকা শোধ দিবেন এই চিন্তায় দিশেহারা।
 কৃষক মো. জুয়েলের মতো এলাকার অনেক কৃষকেরই একই অবস্থা। 
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মেসার্স এমজেডএইচ ব্রিকসের  সরেজমিনে গিয়ে এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. হারুন-অর- রশিদকে  পাওয়া যায়নি। এ সময় তার ম্যানেজার জানান, মালিক বিকেলে ইটভাটা আসেন। পরে তাঁর ০১৭১৭-৪৪২১৫৯ নম্বর মুঠোফোনে কল করলে তিনি তা রিসিভ করেন। এ প্রতিনিধি তাঁর পরিচয় দিয়ে ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারণে কৃষকদের উঠতি ধানক্ষেত পুড়ে যাওয়া বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি এতে আমার কোন ব্যক্ত নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। এ সময় এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি  একং এ নিয়ে রিপোর্ট না করার জন্য বলেন তিনি।
 সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ মোছা. হোমায়রা মন্ডল জানান, আমি ওই মাঠে সরেজমিনে গিয়ে  ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের কারণে কৃষকদের ধানক্ষেতগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে তার দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
 সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস. এম. গোলাম কিবরিয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। এলাকার বিপুল সংখ্যক কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে একটি কমিটি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2736943959539451520

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item