মিষ্টি কুমড়ার প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না কৃষক: লাভবান হচ্ছে ফড়িয়ারা

মামুনুর রশীদ মেরাজুল,রংপুর ব্যুরো॥
রংপুরের তিস্তার চরাঞ্চলে পাইকারদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসায়িক সংযোগ গড়ে না ওঠার কারণে মিষ্টি কুমড়ার প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণ করতে হিমাগার না থাকায় বাধ্য হয়েই পানির দরে বিক্রি করছে তারা। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মিষ্টি কুমড়া চাষিরা। অন্যদিকে চাষীদের উৎপাদিত কুমড়া মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা পানির দরে কিনে বিভিন্ন বাজারে তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন। এর ফলে চাষীদের চেয়ে বেশী লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, লালমনিহাট, নীলফামারী, সুন্দরগঞ্জের উপর দিযে প্রবাহিত তিস্তার চরাঞ্চলের প্রতি বর্ষার মৌসুম শেষে জাগে চর। এরপর ৬ মাস শুষ্ক থাকে নদী। পড়ে থাকা বালু চরকে চাষ উপযোগী করতে কঠোর ঘাম ঝরা নদী ভাঙনের শিকার ভূমিহীন বাঁধে আশ্রিত মানুষ। বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ধু-ধু বালুচরে তারা ফলান মিষ্টি কুমড়া। খাঁ খাঁ রোদে ভারে করে পানি এনে গাছে দেন কৃষক।বীজ সংকট ও নিম্নমানের বীজের কারণে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকরা কুমড়ার আবাদ ছাড়েননি। এ চাষের ফলে চরে কমেছে তামাকের আবাদ। কিন্তু কৃষকরা হাড়ভাঙা খাটুনির পর উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে প্রকৃত মুনাফা পান না। পাশাপাশি দেশি পদ্ধতিতে তারা বাড়িতে মাচা করে বেশিদিন কুমড়া সংরক্ষণ করতে পারেন না। উৎপাদন মৌসুমে একসঙ্গে সব কুমড়া বাজারে ওঠায় দামও পড়ে যায়। তাই সংরক্ষণাগারের অভাবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি বাজারজাত ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় ফায়দা লুটছেন মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা। লাভের সিংহভাগই চলে যায় তাদের পকেটে। সরাসরি বাজারজাত করার ব্যবস্থা থাকলে কৃষকের কাছে সোনা হয়ে ধরা দিত মিষ্টি কুমড়া।

কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়ার কৃষকরা দাবি করে বলেন, সম্মিলিতভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় তাদের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া সরাসরি বাজারজাত করতে সরকার যেন ভূমিকা রাখে। আন্তর্জাতিক বাজারে মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা থাকায় ইতিমধ্যে বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে কাউনিয়ার তালুক শাহবাজপুরের কৃষকরা কিছু মিষ্টি কুমড়া সরাসরি মালয়েশিয়ায় বিক্রি করেছেন। চীনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ওই চরে মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত পরিদর্শনও করেছে। গঙ্গাচড়ায় উৎপাদিত কিছু কুমড়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সরাসরি সরকারের মনিটরিং থাকলে আর্থিক মুনাফায় বদলে যেত কৃষকের ভাগ্য।

গঙ্গাচড়ার মহিপুর চর ইছলী গ্রামের কৃষক মহিবুল ইসলাম ও নুর মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে কুমড়া চাষ করেছি। ২-৩ মাসের বেশি বাড়িতে রাখতে পারি না। বাড়িতে রাখলে অনেক কুমড়ায় পচন ধরে, বাধ্য হয়ে সেগুলো গরুকে খাওয়াতে হয়। তাই বিক্রি করে দিয়েছি।

গঙ্গাচড়ার গজঘন্টার মিলন মিয়া ও  কাউনিয়া উপজেলার মানিক মিয়া বলেন, ফসল ওঠার সময় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে কম দামে কুমড়া কিনে অনেক বেশি দামে বাজারে বিক্রি করেন। এতে করে আমরা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাই না। অথচ সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে এই মিষ্টি কুমড়া হতে পারত আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এখানে একটা কোম্পানি তৈরি করে দিলে আমরা কুমড়ার ভালো দাম পাব। বিদেশেও রফতানি করতে পারব।'

একটি সংস্থার তথ্য মতে, ২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ২২ হাজার ১৩০ জন চরের কৃষক ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ২৯ হাজার টন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন করেছেন। মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাজার মূল্য হিসাবে গড়ে ৮ টাকা কেজি দরে ১০৩ কোটি ২০ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। নেদারল্যান্ডস, সৌদি, মধ্যপ্রাচ্য, ইয়েমেন ও সিঙ্গাপুরে রফতানি করা হয়েছে। এ ছাড়া এখানকার উৎপাদিত কুমড়া রংপুরের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের ২১টি জেলায় যাচ্ছে।###

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 6413679442497827369

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item