ঠাকুরগাঁওয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত শতশত জমির মিষ্টি কুমড়া ,ব্যাহত হচ্ছে মৌ চাষ দিশেহারা কৃষক
https://www.obolokon24.com/2019/05/farmer.html
আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ঃ ব্যাপক হারে মোজাইক নামক ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে।শত শত বিঘা জমির কুমড়া গাছ ও সবুজ পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে । ক্ষেতে বালাই নাশক ছিটিয়ে এই ভাইরাস থেকে ফসল বাঁচাতে পারছে না কৃষক । দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে । রোগ সারাতে ব্যর্থ হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক ।
সদর উপজেলার শবদল হাট গ্রামের হাজী আব্দুল হাই বলেন, ২০-২৫ বছর ধরে তিনি মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন । এর আগে কুমড়া ক্ষেতে এ ধরনের মহামারি দেখা দেয়নি । তিনি জানান ক্ষেতে গাছ বড় হয়েছে । ডোগাও ছড়িয়ে পড়েছে । ফুল-ফল আসতে শুরু করেছে । আর এ সময়ে সবুজ ডোগা পাতা ও কুশি হলুদ হয়ে যাচ্ছে । এতে ফুল-ফল টিকছে না । একই গ্রামের বর্গা চাষী আব্দুল আজিজ বলেন, তারা মিষ্টি কুমড়া সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করেন । আলু চাষে খুব একটা লাভ হয় না । কুমড়া চাষ করে তারা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেন । এ ছাড়া আমন ধান ওঠা পর্যন্ত কুমড়া বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ মেটায় তারা । কিন্তু এবার কুমড়া ক্ষেতে রোগ দেখা দেয়ায় বিপদে পড়েছেন এলাকার কুমড়া চাষীরা বলে জানান ওই বর্গা চাষী। বালিয়া গ্রামের সুরুজ আলী অভিযোগ তারা কোম্পানির বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন ।বীজ থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে ধারনা ভুক্তভোগী কৃষকদের । একই গ্রামের শুক জামাল বলেন, কৃষি কর্মকর্তা ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে ওষুধ ছিটিয়ে উপকার পাচেছ না তারা ।রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে।
এ দিকে কুমড়া চাষীদের পাশাপাশি মৌ চাষীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে । ক্ষেতে ফুল না থাকায় তারা মধু আহরণ করতে পারছে না । মৌচাষী মো. সুজন বলেন,কুমড়া চাষীদের পাশাপাশি মৌ খামারীরা ও ক্ষতিতে পড়েছে । তিনি জানান, এ মৌসুমে কুমড়া ক্ষেতে মৌ মাছি মধু সংগ্রহ করে নিজেরা যেমন বাঁচে । তেমনি আমরাও আর্থিক ভাবে লাভ হই । এবার চিত্র উল্টো । মৌ মাছি কে চিনি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে তাদের।
কৃষি বিভাগ জানায় , আলু তোলার পর একই জমিতে মিষ্টি কুমড়া জাতীয় ফসল চাষ করে লাভবান হচেছ এ এলাকার কৃষক । বিশেষ করে কুমড়া একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে সমাদৃত এখন কৃষকদের কাছে । উৎপাদন খরচ কম , লাভ পাওয়া প্রতিবছর কুমড়া আবাদ করছে কৃষক ।
জানা গেছে ,সার-বীজ, কীটনাশক -সেচ ও পরির্চ্চা বাবদ প্রতিবিঘা জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু ফলনে বিপর্যয় দেখা দেয়ায় এ ক্ষতি পোষাবে কী ভাবে এ নিয়ে অনেক কৃষক হাহাজারি করছে ।
গত ২৯ এপ্রিল বীজ কোম্পানীদের বিরুদ্বে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নেয়া সহ ক্ষতিপুরণ চেয়ে সদর উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে আবেদন করেন কুমড়া চাষীরা ।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, মোজাইক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে । এই ভাইরাসের সরাসরি কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই । তবে তিনি বলেন কৃষকদের একটি আবেদন পত্র পেয়েছেন তিনি । কিন্তু এ ব্যাপারে তার করা কিছুই নেই ।
এ বছর জেলায় এক হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ ।