প্রাচীনকালের পেরুভিয়ান পুষ্টিসমৃদ্ধ পার্পল ভূট্টার গবেষণামূলক চাষ সৈয়দপুরে
https://www.obolokon24.com/2019/04/saidpur_19.html
তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
চলতি ভূট্টা চাষ মৌসুমে নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রাচীনকালের উচ্চ পুষ্টিকর পেরুভিয়ান পার্পল ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামের গবেষক,- কৃষক আহসান - উল -হক বাবু তাঁর নিজস্ব গবেষণা প্লটে এ গাঢ় জাম রংয়ের ভুট্টা চাষ করেছেন। এর আগে তিনি বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন জাতের ধান ও গমের কয়েক দফা আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন।
কৃষক আহসান -উল- হক বাবু জানান, প্রাচীন এই রঙিন জাতের ভূট্টা উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং সুস্বাদু - খেতে রাজশাহীর বিখ্যাত পাকা ফজলি আমের সমতূল্য মিষ্টতাবিশিষ্ট (BRIX)|
রঙিন ভুট্টার মিষ্টতা (ব্রিক্স) ২০, আর পাকা ফজলি আমের মিষ্টতা ১৯।
বাবু জানান, শত শত হাজার বছর যারৎ পেরুর আদিবাসীরা এই রঙিন ভুট্টা মুখরোচক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতো। এছাড়াও রঙিন ভুট্টা প্রাচীনকাল থেকে Incan ( ইনকান) সভ্যতার অধিবাসীরা রঙিন ভুট্টার রস বেভারেজ (পানীয়) হিসেবে ব্যবহার আসছে। রঙিন ভুট্টা সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেট সার্চে আরো জানা গেছে, ব্লুবেরীর (blueberries)চেয়েও এই রঙিন ভুট্টা ৫-১০ গুন বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidants) সমৃদ্ধ- যা ডালিমের দানার মত কাঁচাও খাওয়া যায়।
বাবু জানান, প্রথমে তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে রঙিন ভুট্টা সম্পর্কে অবগত হন। পরবর্তীতে সেখান থেকে রঙিন ভূট্টা বীজ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর আমেরিকায় অবস্থানরত তাঁর নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে ক ৮টি রঙের ১০টি করে রঙিন ভুট্টা বীজ সংগ্রহ করেন।
সংগৃহিত ভুট্টা বীজ চারা করার নিমিত্তে একটি পটে একটি করে বীজ বপন করা হয়। পটের গভীরতা হচ্ছে দেড় ইঞ্চি এবং চওড়ায় এক ইঞ্চি। এরপর ১২ দিন বয়সী ভুট্টার চারা “রেইজড বেড ফারো অ্যান্ড টুইন প্লাটেশন” পদ্ধতিতে জমিতে রোপন করা হয়। গত বছরের ২২ নভেম্বর রোপিত প্রতিটি চারা থেকে ৩ - ৪টি কার্যকরী কুঁশি বের হয়। প্রতিটি কুঁশি থেকে ১-২টি কার্যকরী ভুট্টার মোচা বের হয়। আর প্রতিটি ভুট্টা গাছেই ৩-৪ টি ভুট্টার মোচা হয়। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে এই ভুট্টা চাষে ব্যবহার করা হয়েছে বায়োগ্যাস স্লারী, কেঁচো সার, হাড়ের গুঁড়া, শিংয়ের গুঁড়া, কোকো কয়ার ও সামান্য পরিমাণে ডিএপি, এমওপি এবং ইউরিয়া সার। কীটনাশক হিসেবে মেহগনি ও নিমতেল ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে রঙিন ভুট্টা চাষের অর্গানিক প্লটে মোটেও আর্মি ওয়ার্ম পোকার কোন আক্রমন দেখা যায়নি।
গবেষক কৃষক বাবু জানান, তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উন্নত জাতের গম চাষ করে আসছেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩-৪ হাজার বছর আগের দৃষ্টিনন্দন ‘খোরাসান’ জাতের গমও। এছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় কাঠারিভোগ, বালাম, কালোজিরা, রাঁধুনিপাগল, কালাভাত (চাল খয়েরী রং) প্রভৃতি জাতের ধান সংগ্রহ করে চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছি। আমার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য এই সব বিলুপ্তপ্রায় জাতের গম, ভুট্টা ও ধান অর্গানিকভাবে চাষাবাদের মধ্যদিয়ে গবেষণা কার্যক্রম এবং চাষাবাদ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। আর তার এই সব কার্যাবলী জাতীয় পুষ্টি নীতিমালা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জিং হিসেবে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ় আশাবাদী।
তিনি আরো বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং গম ও ভূট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউটের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আমার গবেষণা কার্যক্রম আরো বেগবান এবং সাফল্যমন্ডিত হবে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বাসুদেব দাসের সঙ্গে কৃষক বাবুর চাষকৃত রঙিন ভূট্টা নিয়ে কথা হয়। তিনি কালের কন্ঠকে বলেন আমার কৃষি ব্লকে ওই রঙিন ভূট্টা আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগে আমি দীঘদিন যাবৎ কর্মরত আছি। দেশের নানা জায়গায় কাজ করা সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু চাকুরিজীবনে এ রঙিন ভূট্টা চাষ কোথাও আমার চোখে পড়েনি। রঙিন ভূট্টা নরম অবস্থায় খেতে প্রচলিত ভূট্টার চেয়ে বেশ মিষ্টি। এ ধরনের বিলুপ্তপ্রায় জাতের ভূট্টা সংগ্রহ করে চাষের জন্য এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা আহসান- উল- হক বাবু প্রশংসার দাবিদার।