সৈয়দপুরে প্রাচীনতম খোরাসান গমের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ ॥ আশানুরূপ ফলনের সম্ভাবনা

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রাচীনকালের বিখ্যাত ‘খোরাসান’ জাতের গমের পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়েছে। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামের আদর্শ কৃষক আহসান-উল হক বাবু নিজস্ব গবেষণা প্লটে ওই গম চাষ  করেছেন। আশানুরূপ ফলনের সম্ভাবনা।
কৃষক  আহসান-উল-বাবু জানান, অতি পুরাতন ওই গমের জাতটির দানার আকৃতি অন্যান্য গমের তুলনায় দ্বিগুণ লম্বা, আকর্ষণীয় রং এবং সুগন্ধী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান এক বৈমানিক মিশর থেকে সংগৃহীত খোরাসান গমের কিছু বীজ উত্তর আমেরিয়কায় নিয়ে যান। সম্প্রতি কানাডা থেকে আগত সিলেটের আব্দুল বাসিত সেলিমের কাছ  থেকে খোরাসান গমের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। এবারে দূর্লভ এই গমের প্রদর্শনী প্লট করেছেন সৈয়দপুর কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামে নিজ গবেষণা প্লটে।
তিনি বলেন, কথিত আছে, মিশরের পিরামিডে ফেরাউনের মমির পাশে গম পাওয়া গিয়েছিল। আর সেই গমের জাতটি ছিল খোরাসান। সে হিসেব মতে ওই গমের জাতটি ৩ হাজার বছর পূর্বের।
ওই গম চাষের পদ্ধতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রথমে ট্রেতে তৈরি বীজতলা থেকে ১২ দিন বয়সী গমের চারা জমিতে লাগানো হয়। মূলত “রেইজড বেড ফারো অ্যান্ড টুইন প্লাটেশন ” পদ্ধতিতে ওই চারা লাগানো হয়েছিল গত বছরের ১০ এবং ১১ নভেম্বর। একটি করে চারা রেইজড বেডের ওপর সারিবদ্ধভাবে লাগানো ছিল। দুই রেইজড বেডের মাঝে ফারোতে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। বেড়ের সাইজ প্রস্থে আড়াই ফুট। একটি সারি  থেকে অন্য সারির দূরত্ব দেওয়া হয়েছে ১২ ইঞ্চি। প্রতিটি গমের গাছ থেকে সর্বোচ্চ কুশি আসে ১২৫টি। আর কার্যকরী সর্বোচ্চ গমের শীষ হয়েছে ৯০ টির উপরে। অর্গানিক পদ্ধতিতে এই গমের চাষে ব্যবহার করা হয়েছে বায়োগ্যাস স্লারী, কেঁচো সার, হাঁড়ের গুড়া, শিংয়ের গুঁড়া, কোকো ডাস্ট ও সামান্য পরিমাণে ডিএপি, এমওপি এবং ইউরিয়া সার।
তিনি বলেন, সুগন্ধী এই গমের আটার মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে যে কোন গমের তুলনায় অনেক বেশি। মূলতঃ জাপান এর প্রধান  ক্রেতা।
কৃষক আহসান-উল -হক বাবু চলতি গম মৌসুমে আরও তিনটি উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন গমের জাতের গবেষণামূলক চাষ করেছেন। তন্মধ্যে একটি জাত উচ্চমাত্রায় জিংক সমৃদ্ধ। ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ছয় টন। যা এ যাবৎকালের রেকর্ড পরিমাণ ফলন।
বাবু বলেন, দিনাজপুর গম ও ভূট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. নরেশ চন্দ্র দেব বমর্নের আন্তরিক উৎসাহ ও সহযোগিতায় বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উন্নত জাতের গম চাষ করে আসছি। এ ছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় কাঠারিভোগ, বালাম, কালোজিরা, বাঁধুনিপাগল, কালাভাত (চাল খয়েরী রং) প্রভৃতি জাতের ধান ও বিভিন্ন গমের জাত সংগ্রহ করে চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছি। আমার মূল লক্ষ্য ওইসব বিলুপ্তপ্রায় জাতের ধান ও গম অর্গানিকভাবে চাষাবাদের মধ্যদিয়ে গবেষণা কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দেওয়া। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আমার কার্যক্রম আরো  বেগবান হবে।’
 নীলফামারীর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ  আবুল কাশেম আযাদ বলেন,‘ওই গম চাষের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন জানলাম, খোঁজখবর নিয়ে ওই কৃষককে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা  নেব।’   

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7396090019513656661

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item