নীলফামারীর বিন্যাদিঘিতে স্নানোৎসবে নেমে নিখোঁজ এসএসসি পরীক্ষার্থী॥হাজারো মানুষের আহাজারী

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ৩ এপ্রিল॥ নীলফামারী জেলা সদরে বিন্যাবতীর বিরাট দিঘিতে সনাতন হিন্দু ধর্মের পূণ্য স্নানোৎসবে (বারুনীস্নান) নেমে সুমন চন্দ্র রায়(১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। আজ বুধবার(৩ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ওই নিখোঁজের ঘটনাটি ঘটে।
সুমন জেলা সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের মুসরত গোড়গ্রামের কৃষক সুকুমার চন্দ্র রায়ের ছেলে।এ ঘটনায় পূণ্য স্নানোৎসবে অংশ নেয়া হাজার হাজার মানুষের আহাজারীতে এলাকাটি ভারী হয়ে উঠে। অনেককে মন্তব্য করতেও শোনা যায় দিঘির দেবতা তাকে নিয়ে গেছে। হয়তো ফেরতও দিয়ে যাবে। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দমকাল বাহিনীর ডুবুরি দল দিঘির তলদেশে তল্লাশী চালিয়েও সুমনকে উদ্ধার করতে পারেনি।
ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন সার্বক্ষনিক খোঁজখবর রেখে চলেছেন। সেখানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রতিবছর এসময় জেলা সদরের গোড়গাম ইউনিয়নের অবস্থিত বিন্যাবতীর বিরাট দিঘিতে (নীলসাগর) সনাতন হিন্দু ধর্মের তিনদিনব্যাপী পূণ্য স্নানোৎসব ঘিরে সেখানে ৭ দিন ব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে উৎসবের প্রথম দিন বুধবার ভোর থেকে দিঘি স্থানে হাজার হাজার সনাতন ধর্মের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যুবক-যুবতী, তরুন-তরুনী, কিশোর-কিশোরী, বালক-বালিকা ও শিশুরা সমবেত হতে থাকে। এদের মধ্যে তিন বন্ধুকে নিয়ে দিঘিতে স্নান করতে নামে সুমন চন্দ্র রায়। তারা বিন্যাবতী দিঘির পশ্চিম পার্শ্বের ঘাটের ডাঙ্গায় পড়নের জামা-কাপড় রেখে পানিতে নেতে সাঁতার কেটে পূর্ব প্রান্তের ঘাটের দিকে যাওয়ার পথে দিঘির গভীর পানিতে তলিয়ে নিখোঁজ হয় সুমন। খবর পেয়ে নীলফামারী ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় রংপুর হতে ডুবুরী দলের একটি ইউনিট বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিখোঁজ সুমনকে উদ্ধার অভিযান শুরু। বিকাল সাড়ে ৫ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকলেও উদ্ধার হয়নি সুমন।
সুমনের মামাত ভাই রেবতী রায়(৩০) জানান, তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সুমন সবার ছোট। তার বাবা একজন ক্ষুদ্র কৃষক। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে। আজ বুধবার সকালে প্রতিবেশী বন্ধু বিপুল চন্দ্র রায়(১৬), অনুকুল চন্দ্র রায়(১৭) ও উত্তম কুমার রায়সহ(১৬) স্নানোৎসবে নেমে গভীর জলে নিখোঁজ হয় সুমন।
তিনি বলেন, “সকাল ছয়টার দিকে সে আমাকে ফোনে বলেছিল ‘দাদা আমরা কয়েক বন্ধু মিলে স্নানের জন্য নীলসাগর চলে গেলাম। তুইও স্নানের জন্য আসিস, ওইখানে দেখা হবে।’ কিন্তু এখানে এসে শুনলাম সুমন দিঘির জলে নিখোঁজ হয়েছে।”
সুমনের বন্ধু উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘স্নানে নেমে আমরা চার বন্ধু মিলে সাতরিয়ে পূর্ব প্রান্তে যাওয়া শুরু করলে কিছুদুর গেলে খারাপ লাগার কথা জানায় সুমন। এসময় আমরা তাকে দিঘির পাড়ে ফেরৎ যেতে বলেছিলাম। আমরা দিঘির পড়ে উঠার পর দেখি সুমন ফিরেনি। তার পরনের কাপড়সহ ব্যবহারের অন্যান্য জিনিসপত্র যেখানে রেখেছিলাম সেখানেই পড়ে থাকতে দেখি।’এদিকে এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়লে পূণ্য স্নানোৎসবে অংশ নিতে অংশ নেয়াদের মধ্যে আহাজারী শুরু হয়। নেমে আসে শোকের ছায়া। সেখানে ৮০ বছরের প্রবীন ব্যাক্তি সহ বেশ কয়েকজন মন্তব্য করে দিঘির দেবতা নিয়ে গেছে ছেলেটিকে। তাকে এখন কেউ খুঁজে পাবেনা। দেবতাই তাকে আবার ফেরত দিয়ে যাবে।
এদিকে একমাত্র ছেলে সুমন দিঘির জলে নিখোঁজ হওয়ায় তার বাবা ও মা বার বার মুর্ছা যেতে থাকে। তাদের চিকিৎসকদের পরামর্শে নিজবাড়িতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নীলফামারী দমকল বাহিনীর স্টেশন ইনচার্জ এনামুল হক বলেন, ‘আমরা রংপুর হতে ডুবুরি ইউনিট এনে সকাল ১১টা হতে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দুইজন ডুবুরি তল্লাশী চালায় দিঘির ৩০ ফিট গভীরের তলদেশে। কিন্তু নিখোঁজ ছেলেটির কোন সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন আজ পাওয়া না গেলে আমরা আগামীকাল বৃহস্পতিবারও ছেলেটিকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
নীলফামারী সদর থানার ওসি মমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করে সার্বক্ষনিক নজরদারি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন জানান ঘটনা জানার পর সেখানে আমি দুইজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োজিত করে রেখেছি। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6265321239282752501

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item