মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি।
https://www.obolokon24.com/2019/04/Freedom-of-opinion.html
লেখক: মাহাবুবুর রহমান (বাবলু)
সেদিন হঠাৎ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় চোখ বুলাতে গিয়ে দেখি আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে, শুদ্ধি অভিযান আসছে। তার আগের দিন কালের কন্ঠ পত্রিকায় পড়িলাম জটিল আবর্তে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। খবর দুটি পড়ে একদিকে আনন্দ পেলাম, অন্যদিকে হতাশ হলাম। খবর দুটি যথাক্রমে ২৬/০৩/২০১৯ ইং ও ২৭/০৩/২০১৯ ইং তারিখ কালের কন্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ১ম পাতায় ছাপানো হয়েছিল, শুদ্ধি অভিযানের খবরটি পড়ে আনন্দ পেলাম এ কারণে যে এবারের ঘোষনাটি এসেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আওয়ামী লীগ দলটির সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কালের প্রবাহে আওয়ামী লীগ বর্তমানে আজ আওয়ামী লীগের যায়গায় নেই। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে আওয়ামী লীগে অনেক আগাছা, পরগাছা, হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়ে আসল আদর্শবান, ত্যাগী, পরীক্ষিত আওয়ামী লীগের আজ ভীষণভাবে কোণঠাসা। আবার অনেকে অভিমানে দুরে সরে আছেন, খবরটি পড়ে এ কারণে খুশি হয়েছি শুদ্ধি অভিযানে এবার নেতৃত্ব দেবেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা, জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ উনার প্রতি জনগণের আস্তা আছে ষোলআনা। তাই আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু আদর্শের আওয়ামী লীগকে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জায়গায় নিয়ে আসবে।
আর হতাশ হলাম কালের কন্ঠের খবরটি পড়ে, জটিল আবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা। আমি আশায় ক্লান্ত প্রতিক্ষায় প্রহর শুনছিলাম, দেরিতে হলেও এবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা বাদ পড়বে। তাদের মিথ্যে আস্ফলন বন্ধ হবে। এত কথা বলছি একটি কারণে-৭১ এর রনাঙ্গনে আমিও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাই যখন পড়ি বাদ দেয়া যাচ্ছে না অমুক্তিযোদ্ধাদের। তখন দু:খ পাই! নতুন ২৭ হাজার নাম পাইব লাইনে। ৮০০ মামলা হাইকোর্টে ঝুলছে, বাদ পরা ৩৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা আপিল করেছে জামুকায়। আর বারবার যাচাই-বাছাইয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা হানি হচ্ছে।
আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই আওয়ামী লীগের অনেক চরাই-উতরাই দেখেছি আমার রাজনীতির ৫০ বছরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজও বেঁচে আছি। জীবনে কোনদিন দলচ্যুত হইনি। চাওয়া-পাওয়ার রাজনীতি কোনদিন করিনি। অন্যায় পথে অর্থ উপার্জন- আমার চিন্তা চেতনায় ছিল না। কারণ: আমাদের মহান নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সবচেয়ে বড়কথা উনার আদর্শে আগেও ছিলাম এখন আছি, উনার আদর্শ বুকে ধারণ করে পথচলি। তাই খারাপ কিছু মনে আনতে সাহস করি না। খারাপ কিছু চিন্তা মনে এলে, মনে হয় উনি ছায়ারমত আমাদের পাশে এসে নিষেধ করছে। বলছে, তোরা ওই কাজটি করিস না, ওটা অন্যায়, এই রাজনীতি কি আমি তোদের শিখিয়েছি, ঠিক সে কারণে আমাদের পক্ষে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন সম্ভব ছিল না। সঙ্গত কারণে রাজনীতিতে সে ভাবে এগিয়ে আসতে পারিনি।
আমার রাজনৈতিক জীবনের ৫০ বছর, এই ৫০ বছরের ১ম যাত্রা শুরু হয়েছিল, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। সময়টা ছিল ১৯৬৭ সাল আমাদের বড়ভাইরা এসে আমাদের স্কুলে একটি স্কুল ছাত্রলীগ কমিটি করলেন। সে কমিটিতে আমি সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। সেদিন থেকে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ১৯৬৯ সালে আবার একটি স্কুল ছাত্রলীগ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির যথাক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন জনাব নান্নু খাঁন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই আমি। তার কিছুদিন পর আমাদের স্কুলে একটি আন্দোলন দাঁনা বাঁধে আন্দোলনটি ছিল মূলত একটি বই বাতিলের আন্দোলন। বইটির নাম ছিল “দেশ ও কৃষ্টি” এই বইটি বাতিলের আন্দোলন তখন তুঙ্গে। যদিও নামটা ছিল দেশ ও কৃষ্টি তবে দেশের কোন কৃষ্টি ছিল না, ছিল পাঞ্চাব, সিন্ধু, বেলুচিস্থানের কৃষ্টিতে ভরা। তাই ওই বইটি বাতিলের আন্দোলনে আমরা ভীষণভাবে জড়িয়ে পড়লাম। এলো’৭০ সালের নির্বাচন, আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকে তখন পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু বাঙ্গালীদের ক্ষমতা দিতে চাচ্ছিল না ঐ পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। তখন বঙ্গবন্ধুর দেশে অসযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলো, অবাক করা ব্যাপার সেদিন গোটা দেশ বঙ্গবন্ধুর কথামত চলছিল। এলো ৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর দরাজ কন্ঠের সেই ভাষণে আমরা প্রেরণা খুঁজে পেয়েছিলাম, মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার একটি সবুজ সংকেত আমরা পেলাম এবং মুক্তিযুদ্ধে গেলাম, ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। এটাই আমার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। আমি গর্ব করে বলতে পারি ৭১ এর রনাঙ্গনের আমি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের মসনদে বঙ্গবন্ধু এসে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন এবং দেশ পুনর্গঠনের কাজে সবাইকে নিয়ে মনোনিবেশ করলেন।
এলো ৭৪-৭৫ সাল ওই সময় ক্রান্তিকাল চলছিল ঠিক সেই মুহুর্তে আমি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। অনেক ঝড়-ঝঞ¦া, জেল-জুলুম, অত্যাচার, সামরিক শাসনের মধ্যে দিয়ে আমাদেরকে সংগঠন করতে হয়েছে। ওসব কথা বলতে গেলে লেখার পরিধি বেড়ে যাবে, তাই মুল কথায় ফিরে আসি। ১৯৭৬-৭৭ সালে সিরাজুল ইসলাম (এমপি) ভাইয়ের নির্দেশে সেদিন আনছারুল হক জিন্না ও আমাকে ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের (মহকুমা) দায়িত্ব গ্রহন করতে হয়। আনছারুল হক জিন্না সভাপতি ও আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। আমরা দুজনে সেদিন ঠাকুরগাঁও আওয়ামী যুবলীগের যথাক্রমে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।
বর্তমানে আমি ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। একবুক হতাশা ও ব্যথা নিয়ে সংগঠনের আছি এবং বাকী জীবনটা থাকবো। যখন দেখি আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের জায়গায় নেই, তখন ভীষণ কষ্ট পাই। যখন দেখি আগাছা, পরগাছা এবং হাইব্রিডরা দলের ভিতরে ছুড়ি ঘুরাচ্ছে তখন খুব খারাপ লাগে। যখন দেখি এককালে যারা আমাদের মাথায় লাঠি মেরেছে এবং যুদ্ধ অপরাধিদের তকমা গায়ে নিয়ে জেল খেটেছে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম দলে ঢুকে পদ/পদবী নিয়ে বীরদর্পে সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে আওয়ামী লীগকে কলঙ্কিত করছে তখন ভীষণ কষ্ট পাই। তাই পত্রিকা দুইটির খবরে আশান্বিত হয়েছি, কারণ আমাদের নেত্রী এবার দলের ভিতর শক্ত হাতে ঐসব অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আর হতাশা হয়েছি কালের কন্ঠের ওই খবরটি পড়ে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আপাততঃ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। একজন রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মেনে নিতে পারছিনা।
জননেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে বিন¤্র চিত্তে কয়েকটি অনুরোধ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আপনি না চাইতেই অনেক কিছু দিয়েছেন তাই আমরা কৃতজ্ঞ। আর আমাদের জন্য দু-তিনটি ঘোষনা দিলে আমরা মরেও শান্তি পাবো। যেমন-
১। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে তাদেরকে প্রাইড ফোর্স ঘোষনা দিন।
২। আপনার কাছে অনুরোধ আপনি আমাদের অনেক দিয়েছেন, মনে কিছু নেবেন না আপনি অনেককেই মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দিয়েছেন, আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু আপনার কাছে অনুরোধ আমাদের কাতারে কাওকে আনবেন না, কারণ আমরা ৭১ এর রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। যারা মাঠে যুদ্ধ করেনি, তাদের অবদানকে আমরা খাটকরে দেখছিনা। আপনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ওনাদের ঘোষনা দেন, আমরা আপত্তি করছিনা, তবে আপনার নিকট বিনীত অনুরোধ-
(ক) মুক্তিযোদ্ধা (শব্দ সৈনিক)
(খ) মুক্তিযোদ্ধা (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র)
(গ) মুক্তিযোদ্ধা (বীরঙ্গনা)
(ঘ) মুক্তিযোদ্ধা (স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল)
এভাবে ঘোষনা দিলে, কেউ অ-সম্মানিত হবে না আর কারো আপত্তি থাকার কথা না।
৩। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি আলাদা গোরস্থান চাই, কারণ আমাদের কবরের পার্শ্বে কোন রাজাকারের কবর যেন না থাকে।
৪। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি দিবস চাই, যেমন সেনাবাহিনী দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস, পতাকা দিবস এরকম একটি দিবস চাই।
পরিশেষে বলবো, আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর মত একজন মহান নেতা দিয়েছিলেন বলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। আল্লাহ্ পাক আপনার মত একজন নেত্রী দিয়েছিলেন বলে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তরিত হয়েছে। আপনার মত নেত্রী আছে বলে মুক্তিযোদ্ধারা আজ মাথা উঁচু করে চলছে। সম্মান পাচ্ছে তাই প্রার্থনা করছি আপনি দীর্ঘ জীবন লাভ করুন। আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উনন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাক এই প্রত্যাশা রেখে শেষ করছি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবি হোক। ইতি, তাং- ২৯/০৪/২০১৯ খ্রিঃ
নিবেদান্ত
বীর মুক্তিযোদ্ধা
মোঃ মাহাবুবুর রহমান বাবলু
সহ-সভাপতি
জেলা আওয়ামী লীগ
ঠাকুরগাঁও।