সৈয়দপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করেন না

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
 মো. শাহ্ আলম চৌধুরী । নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)। তিনি বিভিন্ন সরকারি - বেসরকারি ঋণদানকারী সংস্থা থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করেছেন। ওই ঋণের টাকায় তিনি নীলফামারী জেলা শহরের পাঁচতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা থেকে নেয়া  ঋণের মাসিক কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করেন না। ফলে ঋণের কিস্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার লোকজন প্রায় প্রতিদিনই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে ধর্ণা দিচ্ছেন। আর তাদের ভয়ে ওই কর্মকর্তা তাঁর অফিসে আসেন না। তাঁর অফিসে গরহাজির থাকার কারণে উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমেরও তদারকি হচ্ছেনা প্রতিনিয়ত।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. শাহ্ আলম চৌধুরী গেল ২০১৩ সালের ২১ মে সহকারি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে সৈয়দপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর  তিনি গত ২০১৫ সালের ২৩ মার্চে সৈয়দপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পান। সেই সময় থেকে ওই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তাকে তাঁর কর্মস্থলে অবস্থান করার কথা। কিন্তু উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাঁর কর্মস্থলে থাকেন না। তিনি কর্মস্থল সৈয়দপুর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নীলফামারী শহরে নিজের বাসায় অবস্থান করেন। আর সেখান থেকে সপ্তাহের ২/১ দিন এসে অফিস করেন তিনি। তারপরও  কর্মদিবসের পুরো সময় তিনি অফিসে অবস্থান করেন না। শুধুমাত্র কয়েক মিনিট অবস্থানের পরও অফিস থেকে বেরিয়ে যান। আর ওই সময়ের মধ্যেই তিনি পূর্বের তারিখ দিয়ে আগের দিনের দাপ্তরিক কাজে স্বাক্ষর করেন।  নিয়মানুযায়ী কর্মকর্তা হিসেবে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমে তদারকির নিয়ম থাকলে তা তিনি করেন না নিয়মিত। উপরন্ত তিনি নিয়মিত অফিস না করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে কারণে অকারণে দূর্ব্যবহার করেন। অনেক সময় মাঠ কর্মীদের সঙ্গে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতেও দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। তার এহেন দূর্ব্যবহার ও অশ্লীল কথাবার্তার কারণে কর্মীরা অতিষ্ঠ। তারপরও তারা বড় কর্মকর্তার বিভিন্ন  অনিয়ম-দূর্ণীতির বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের মাঠে পর্যায়ে একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, টাকা ছাড়া তিনি কর্মীদের কোন বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেন না।
 গংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দপুরের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা থেকে গত বছরের বিভিন্ন সময় কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করেছেন। এ সব সংস্থার মধ্যে রয়েছে  ব্র্যাক, ব্যুরো বাংলাদেশ, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেন, এনজিও শার্প। ওই টাকায় তিনি নীলফামারী শহরে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। উত্তোলনকৃত ঋণের মাসিক কিস্তি মাসে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো।  অথচ তাঁর বেতন-ভাতা সর্বসাকুল্যে ৩৫ হাজার টাকার বেশি নয়। তাঁর পক্ষে নিয়মিত কোন সংস্থারই ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। ঋণের কিস্তির টাকার জন্য ঋণ প্রদানকারী সংস্থার লোকজন প্রতিনিয়ত ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে ধর্ণা দেন। আর তাই কিস্তির টাকা পরিশোধের ভয়ে ওই কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস আসেন না।
 ঋণ নিয়ে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ না করায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক’র সৈয়দপুর এরিয়া অফিস থেকে ঋণগ্রহনকারী ওই কর্মকর্তাকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সৈয়দপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহ্ আলম চৌধুরী  সংস্থার প্রগতি কর্মসূচি থেকে  এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। এরপর তিনি ৬৪ হাজার ৬ শ’ টাকা পরিশোধ করার পর আর নিয়মিতভাবে কিস্তি পরিশোধ করছেন না।  একই রকম নোটিশ দিয়েছে ব্যুরো বাংলাদেশ নামের একটি ঋণদানকারী আর্থিক সংস্থাও। সংস্থার সৈয়দপুর শাখার সহকারি শাখা ম্যানেজার লক্ষণ চন্দ্র বর্মন স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো.  শাহ্ আলম চৌধুরী গেল  ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই দুই লাখ টাকা ঋণ গ্রহন করেন। যা সার্ভিজ চার্জসহ দুই লক্ষ ৬৫ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে ওই ঋণের পরিমান তাঁর সার্ভিস চার্জসহ ২ লাখ ২৩ হাজার ৮ শ’ টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই নোটিশে ওই ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আরো উল্লেখ করেন ঋণ নেয়ার পর ওই কর্মকর্তা তিনটি কিস্তি দেওয়ার পর আর নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করছেন না। বরঞ্চ কিস্তির জন্য তাঁর অফিসে গেলে খারাপ আচরণ করাসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) ও এর আগে দিন সোমবার অফিস সময়ে কয়েক দফা সৈয়দপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে ওই কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসের এক কর্মচারী ব জানান, গত দুইদিন ধরে স্যার অফিসে আসেননি। তিনি ফোনও করছে না। এদিকে, চলতি মার্চ মাসের প্রায় অর্ধেক দিন গত হতে চলেছে। অথচ গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মচারীরা চলতি মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পাননি। বেতনভাতার জন্য  মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা অফিসে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহ্ আলম চৌধুরীর কাছে নিয়মিত অফিস না আসার বিষয়ে  গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে মুঠোফোনে  জানতে চাইলে তিনি  রাগান্বিত কন্ঠে বলেন, আমি অফিসে আসি কিংবা না অফিসে তা দেখার আপনি কে ? এ বলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।  পরে অনেক চেষ্টা করেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
 এ নিয়ে  মুঠোফোনে  নীলফামারী  জেলা  পরিবার পরিকল্পনা  কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) মোছা. আফরোজা বেগম  ওই কর্মকর্তার অফিসে গরহাজির থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।  তিনি বলেন বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। তারাই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। আর বিভিন্ন সংস্থা কাছ থেকে ওই কর্মকর্তার ঋণ গ্রহনের ব্যাপারে তিনি বলেন, সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়।     

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4484210416206290817

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item