বিরলের ধুকুরঝাড়ীতে দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চালানো হচ্ছে সর্বনাশা র‌্যাফেল ড্র, হাউজি ও নগ্ন নৃত্য

মোঃ আব্দুস সাত্তার,দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পশু মেলার নামে চালানো হচ্ছে সর্বনাশা র‌্যাফেল ড্র, হাউজি ও সার্কাসের নামে নগ্ন নৃত্য। হাটের জায়গায় সবানো হয়েছে মেলা , আর বিদ্যালয়ের মাঠ জবর দখল করে বসানো হয়েছে হাউজির প্যান্ডেল ও হাট। বিদ্যালয়ের ভবনে করা হয়েছে হাউজির কাউন্টার ও অফিস।

প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ ইজি বাইক ও পিকআপে করে মুক্তা র‌্যাফেল ড্র’র টিকিট বিক্রি হচ্ছে দিনাজপুর শহরসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলা গুলোতে। অপরদিকে হাউজি খেলতে আসা সাধারণ মানুষেরা ভোর পর্যন্ত হাউজি খেলে সর্বশান্ত হয়ে বাড়ী  ফিরছে।

জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী ধুকুঝাড়ী পশু মেলা ১ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দিন থেকেই সর্বনাশা মুক্তা র‌্যাফেল ড্র ও সার্কাসের নামে নগ্ন নিত্য শুরু হয়। মুক্তা র‌্যাফেল ড্র দৈনিক মন মাতানো আকর্ষণীয় ও দামি পুরস্কারের নামে টিকিট বিক্রি করছে। আর এসব লটারীর টিকিট কিনে সর্বশান্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী, তরুণ সমাজ ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। থাকছে আকর্ষনীয় পুরস্কারের নামে ৭ থেকে ৮ টি মটরসাইকেল, গরু-বাছুর, ফ্রিজসহ  ৫১টি পুরস্কার। মুক্তা র‌্যাফেল ড্র’র সত্ত্বাধিকারী কাজল ভুইয়া ও তার প্রধান ম্যানেজার আফজালের তত্বাবধানে আরো ১৫-২০ জন ম্যানেজারের মাধ্যমে চলছে মুক্তা র‌্যাফেল ড্র।

অপরদিকে ধুকুরঝাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও ধুকুরঝাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাউজি অফিস ও মাঠে বসানো হয়েছে বিশাল হাউজি প্যান্ডেল। হাউজি পরিচালনায় রয়েছে ৩ নং ধামইর ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দীন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মরত উচ্চমান সহকারী শাহিন ও জুয়েল, বিআরটিসির তরিকুল, দলিল লেখক মমিনুল, ব্যবসায়ী মোস্তফা, ইউপি সদস্য মমতাজ, সেতাবগঞ্জের মানিকুল ও নজরুলসহ আরো অনেকে।

ধুকুরঝাড়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ার পরও প্রধান শিক্ষক স্কুল বন্ধ করে এ আসরের ব্যবস্থা করিয়েছে। সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার যেখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে ধুকুরঝাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে চালানো হচ্ছে হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র এর আসর।

এ ব্যাপারে ধুকুরঝাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল চন্দ্র দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার অসহায়ত্বেও কথা উল্লেখ করে বলেন, মেলার বিষয়ে আমাকে কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয় ভবন ও মাঠ জবর দখল করে হাউজি চালানো হচ্ছে। এখন এসএসসির প্রাট্রিকেল পরীক্ষা চলছে। আগামী সোমাবার থেকে স্কুলে ক্লাস শুরু হবে। বাধ্য হয়ে মেলার কারণে স্কুলের সময় পরিবর্তন করে সকালে করেছি। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আমাকে ডেকে জানতে চাইলে আমি শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহতসহ উপরোক্ত কথা বলেছি। আমি চাকরি করি আমার কি করার আছে।

এ ব্যাপাওে জানতে চাইলে ধুকুরঝাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনা আকতার বলেন, মেলার কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আমি শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি । তিনি যা ব্যবস্থা নিবেন আমরা তাই করব। এ সময় তিনিও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, ধুকুরঝাড়ী মেলা একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। এই মেলা প্রতিবছর এখানে চালানো হয়। এতে করে আমরা খুবই খুশি। কিন্তু আমাদের ছেলে মেয়েদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত রেখে জোর পূর্বক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে জুয়ার মেলায় পরিনত করায় আমরা অত্যন্ত  মর্মাহত। সেই সঙ্গে আমাদের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।

ধুকুরঝাড়ী মেলা কমিটির সভাপতি ৩নং ধামইড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোসলেম উদ্দিনের কাছে হাউজি জুয়া ও মুক্তা র‌্যাফেল ড্র বিদ্যালয় বিল্ডিং ও বিদ্যালয় মাঠে স্থাপন করে জুয়া পরিচালনা করার অনুমতি আছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, সকল নিয়মনীতি মেনে আমরা এ মেলায় হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র চালাচ্ছি। এতে করে কারো অসুবিধা হবে বলে আমরা মনে করছি না।

বিরল থানা অফিসার ইনচার্জ এ টি এম গোলাম রসুল জানান, ধুকুরঝাড়ী মেলার অনুমতি আছে তবে হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র সহ কোন প্রকার জুয়ার অনুমতি নাই

ধুকুরঝাড়ী পশু মেলার নামে সর্বশান্ত হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র বসিয়ে আয়োজক কমিটি কামিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। স্থানীয় প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রভাবশালী নেতাকর্মীর কাছে চলে যাচ্ছে আকর্ষণীয় উপটোকন। পুরস্কারের নামে দেয়া হচ্ছে লক্করঝক্কর মার্কা পুরাতন জিনিসপত্র রং বার্নিশ করে চালিয়ে দিচ্ছে ভাগ্যবান ব্যক্তিদের। হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র বন্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন মহল প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ধুকুরঝাড়ী মেলার হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল আলম জানান, আমরা শুধু পশু মেলার অনুমোদন দিয়েছি, কোন হাউজি বা র‌্যাফেল ড্র এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কখনই এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনা। আমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি স্কুল বন্ধ রেখে এ ধরনের হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার আবু সায়েম জানান, মেলায় হাউজি বা জুয়ার কোন অনুমোদন দেওয়া হয় না। এসব মেলার অনুমোদন জেলা প্রশাসক দিয়ে থাকে। তিনি নির্দেশ দিলেই আমি তাৎক্ষণিক হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র জুয়া বন্ধের ব্যবস্থা নিবো।

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচিত 536282743653596795

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item