পার্বতীপুরে এসএসসির উত্তরপত্রে জালিয়াতি- তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

এম এ আলম বাবলু, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
চলতি বছরের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের উত্তরপত্র জালিয়াতির ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ আজ রোববার বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হারুনুর রশিদ মন্ডলকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য দু’জন সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ মানিক হোসেন ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রেজাউল করীম চৌধুরী। আজ রোববার গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকাল থেকে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের উত্তরপত্রে জালিয়াতির ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম হাসান আলী প্রামানিক। সে উপজেলার বিএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। জানা যায়, এবার উত্তরপত্র জালিয়াতির সহায়তাকারী শিক্ষক হাসান আলী প্রামানিক ইংরেজী ২য় পত্রের উত্তর পত্র দেখার দায়িত্ব পেয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু উত্তরপত্র দেখার পর তা কর্তৃপক্ষের নিকট জমাও দিয়েছেন। উত্তরপত্র দেখার সময় নির্ধারিত পত্র লিখনের নিচের অংশে বেশকিছু পরিক্ষার্থীর নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেখতে পান। এর মধ্যে ৪/৫জন ছাত্রীর নাম ঠিকানা উত্তরপত্রে দেখতে পান। তারা সবাই উপজেলার রোস্তম নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবারে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, নাম ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর জানার পর শিক্ষক হাসান আলী প্রামানিক তার বিদ্যালয়ের কেরানী দিপেশ রায় এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রোস্তম নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সাহার সাথে যোগাযোগ করেন। পরে গত ১১ মার্চ সোমবার প্রদীপ সাহা তার বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে পরীক্ষক হাসান আলীর বাড়িতে যায় বলেও জানা যায়। রোস্তম নগর বালিকা বিদ্যালয়ের সংশিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, প্রধান শিক্ষক সকাল ১১টায় কয়েকজন  শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে যান। ওই দিন প্রধান শিক্ষক আর বিদ্যালয় আসেননি। এদিকে, শিক্ষক হাসান আলী প্রামানিক, গত সোমবার তার বাড়িতে উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে দিনভর উত্তরপত্রের শীট পরিবর্তন করেন বলে একটি সূত্র থেকে জানা যায়।

শিক্ষক হাসান আলী গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, দীর্ঘ ১০বছর যাবত তিনি বোর্ডের পরীক্ষক হিসেবে উত্তরপত্র দেখে আসছেন। এবার ২শ’ উত্তরপত্র পেয়েছেন দেখার জন্য। উত্তরপত্রে যেসব শিক্ষার্থীর নাম ঠিকানা পেয়েছেন তারা সর্বোচ্চ ২০/২৫ থেকে নম্বর পেয়েছে। কোন কোন শিক্ষক এসব পরীক্ষার্থীকে নম্বর বেশি দিয়ে পাশ করিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে তিনি কারো সাথে যোগাযোগ করেননি এবং উত্তরপত্র পরিবর্তন করে দেয়ার সুযোগ দেননি বলে উল্লেখ করেন। নিয়মানুসারে উত্তরপত্রে  নাম ঠিকানা লেখা থাকলে বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার নিয়ম থাকলেও তিনি তা করেননি। তিনি ঘটনার বিষয়ে বিশদভাবে জানানোর জন্য প্রতিনিধিকে শুক্রবার সকালে তার বাড়িতে মুঠোফোনে ডেকে নেন। কিন্তু শিক্ষক হাসান আলী প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাত না করে মোবাইল বন্ধ রেখে নিজেই বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।

উত্তরপত্র জালিয়াতির সহায়তাকারী বিএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন দিপেশ রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মুুখ খুলতে রাজি হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএমএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহীম আলী বলেন, তিনি এঘটনার সাথে জড়িত নন এবং এবিষয়ে কিছু জানেনা বলেও উল্লেখ্য করেন। 

রোস্তম নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, আমার বিদ্যালয় থেকে এবার ৯৮জন ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আমি কোন ছাত্রীকে উত্তরপত্রে নাম ঠিকানা লেখার পরামর্শ দেইনি। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় ও তার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তের জন্য আজ রোববার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে শিক্ষা বোর্ডের সচিব মোঃ আমিনুল হক সরকার নিশ্চিত করেন। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরও বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা রোববার সকাল থেকেই তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। 

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 5832315206190713955

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item