পীরগঞ্জে দু’সমিতির কাছে মাধ্যমিক শিক্ষা জিম্মি,নিষিদ্ধ নোট-গাইড ক্রয়ে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা!

মামুনুর রশিদ মেরাজুল, পীরগঞ্জ থেকে ঃ
পীরগঞ্জের মাধ্যমিকপর্যায়ে সরকার বিনামুল্যে পাঠ্য বই বিতরন করলেও ‘জিনিয়াস প্রকাশনী’র নি¤œমানের ও নিষিদ্ধ গাইড ও নোট বই ক্রয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সরকারের বই বিতরন কার্যক্রম তুলনামুলক কম কাজে আসছে বলে জানা গেছে। পীরগঞ্জের দুটি সমিতিকে মোটা অংকের ডোনেশন দিয়ে কোটি কোটি টাকার নোট-গাইড বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে নোট ও গাইড বই বিক্রি হলেও স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, পীরগঞ্জে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮০টি এবং ননএমপিওভুক্ত ২০টি মোট ১’শ টি বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেনী পর্যন্ত ২০১৯ সালে ২৪ হাজার ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ওইসব শিক্ষার্থীর মাঝে সরকার প্রতি বছর ১লা জানুয়ারী বিনামুল্যে পাঠ্য বই বিতরন করে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাশিস), বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষকে বগুড়ার জিনিয়াস প্রকাশনী মোটা ডোনেশনে ম্যানেজ করে তাদের নোট, গাইড, সহায়ক বই এবং ৬ষ্ঠ ও ৯ম শ্রেনীর বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামার বইয়ের বুকলিষ্টে দিয়েছে। পীরগঞ্জে ৩৬টি লাইব্রেরী থেকে ‘জিনিয়াস প্রকাশনী’র ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত এক সেট বই ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৩’শত টাকায় ক্রয়ে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হচ্ছে। এতে উপজেলার ২৪ হাজার ৮৮৫ জন শিক্ষার্থীকে জিনিয়াসের প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার নোট বই কিনতে হবে। ফলে দরিদ্র-অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী ওই টাকা যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। উপজেলা সদরের এক লাইব্রেরী ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এক সময় আমিও কয়েকটি প্রকাশনীর বই মার্কেটিং করেছিলাম। সেগুলোর মানের চেয়ে জিনিয়াস প্রকাশনীর বইয়ের মান এতই নি¤œমানের যে তা মানতে এবং বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা ভাল কিছু শিখতে পারছে না। একই কথা বলেন একাধিক সচেতন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী। অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৮ টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ৮/৯ বছর ধরে পীরগঞ্জে জিনিয়াসের নি¤œমানের সহায়ক বই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।
জিনিয়াস প্রকাশনীর উপজেলা এজেন্ট ইনসাফ লাইব্রেরীর স্বত্ত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির উপজেলা সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ী হিসেবে বইয়ের মান যাচাই করি না। গ্রাহকের চাহিদামতো বই বিক্রি করি। তার সমিতির ব্যাপারে বলেন, জিনিয়াসের কাছ থেকে কোন ডোনেশন নেইনি। তাদের বইয়ে শতকরা ১০ থেকে ১৫ টাকা কমিশন পাই। পাশাপাশি শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা যাতে লাইব্রেরী থেকে নি¤œমানের বই কিনে প্রতারিত না হয়, সেজন্য সমিতি করা হয়েছে। উপজেলা বাশিস সাধারন সম্পাদক আবু আজাদ বাবলু বলেন, নোট-গাইড নিষিদ্ধ নয়। সরকার তো এগুলোর অনুমোদন দেয়। তিনি আরও বলেন, জিনিয়াস প্রকাশনীর ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ব্যাকরণ ও গ্রামার বই চালানোর জন্য বলেছি। এ জন্য টাকা নেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য প্রকাশনীর নোট-গাইডও চলছে। জিনিয়াসের প্রকাশক আব্দুল গাফ্ফার তোতা বলেন, শুধু সম্পর্ক স্থাপন করেই কয়েক বছর ধরে পীরগঞ্জে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই চালাচ্ছি। আমার চেয়ে বড়বড় প্রকাশনীর বইও আছে। সেগুলোর চেয়ে আমার বইয়ের মান ভাল। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত নোট বই চলছে, এমন অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেব। ইউএনও টিএমএ মমিন বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। দেখি কি করা যায়।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 4736169223065174564

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item