দরিদ্র জয়ী ক্যাম্পবাসী সরফরাজ

মেধায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা উপকরণ কেনা

তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
মো. সরফরাজ। একজন তরুণ শিক্ষাথী। সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ী উর্দুভাষী (অবাঙ্গালী) ক্যাম্পের  অমানবিক গাদাগাদির পরিবেশে বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা দিনমজুর বাবা প্রয়াত হোসেন আনসারী।  চরম অভাব অনটনের সংসারে শুরু হয় শিক্ষা জীবন সরফরাজের। ক্যাম্পের আর দশটা ছেলে- মেয়ে যখন খেলাধুলায় ব্যস্ত,তখন রফরাজ ব্যস্ত স্কুল আর লেখাপড়া নিয়ে। এক সময় শিক্ষায় তার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে ওঠে। সুবিধা বঞ্চিত হয়ে মেধার বিচ্ছুরণ ঘটে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হয়  সৈয়দপুর আল-ফারুক একাডেমিতে। এখানে সে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। মেধার জোরে ভর্তি হয় লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে। এখানে সে এইচএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখে। তার বাবা-মা অনাক্ষর হয়েও ছেলের লেখাপড়ায় ছেদ করতে দেয়নি। বাবা প্রয়াত হলে বোনেরা তার পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নিত্য অভাবের সংসারে সরফরাজ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। বিশেষ করে মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচের কথা ভেবে মুষড়ে পড়ে সে। তার ইচ্ছা একজন চিকিৎসক হওয়ার। তারপরও মনের জোর নিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোচিং করে বিটস-এ। এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক প্রভাষক আব্দুল হাফিজ হাপ্পু বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেয়। নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে সে এ বছর অনুষ্ঠিত মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অবিশ্বাস্য ফল করে। ভর্তি পরীক্ষায় মেধার তালিকায় জায়গা করে নেয় সে। কিন্তু ভর্তি হবে কি করে, তার পরিবারের যে তেমন অর্থ কড়ি নেই। এসব ভেবে হতাশ হয়ে পড়ে সরফরাজ। এ সময় তার পাশে এসে দাঁড়ায় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। তাদের পরামর্শে ভর্তির জন্য অসচ্ছল-দরিদ্র মেধাবী কোটায় গত ২২ নভেম্বর আবেদন করে ঢাকার ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে। এ কোটায় সারাদেশ থেকে ১৫০ জন অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীকে বাছাই করে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৬ জনকে বেছে নেয় কর্তৃপক্ষ। এই ৬ জনের একজন সৈয়দপুরের মেধাবী সরফরাজ। তারা বিনা খরচে তার শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। মেডিকেল কলেজের নিয়মানুযায়ী গত ১৩ ডিসেম্বর মাত্র ১০ হাজার টাকায় সে ভর্তি হয়েছে। তবে থাকা খাওয়ার খরচ নিজেকে বহন করতে হবে। তার ক্লাস শুরু হবে আগামী বছরের ১০ জানুয়ারী। এখন তার সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বইপত্রসহ মানব কংকাল কেনা ও থাকা খাওয়ার জোগান। দিন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় সেই সরফরাজ কি পারবে বইপত্র আর মানব কংকাল কিনতে? হয়ত বিধবা মা তার পথ দেখাবে। তবে সে দমে যাওয়ার পাত্র নয়। তার কথা, কেউ না কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াবে। এ নিয়ে কথা হয় মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং সেন্টার বিট’সর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রভাষক আব্দুল হাফিজ হাপ্পু। তিনি হতদরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী সরফরাজের সাহায্যে দানশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে সরফরাজের সহায়তার জন্য তার বন্ধু ও পরিচিতজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তার মন্তব্য, একজন একজন করে অর্থ দান করলে তা বিশাল অংকের অর্থে পরিণত হতে পারে।
 মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে কথা হয় সরফরাজের সঙ্গে। সে জানায়, দরিদ্রের মাঝে তার বেড়ে ওঠা। দরিদ্রের সঙ্গে নিত্য লড়াই করে সে এ পর্যন্ত এসেছে। পরিবারে তার ৩ বোন ও ২ ভাই রয়েছে। সে সবার ছোট। বাবার অবর্তমানে বোনেরা পাশে থেকে সাধ্যমতো তার খরচ চালিয়েছে। তার এখনও তারা সাহায্য দিয়ে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এখন বড় দুশ্চিন্তায় মেডিকেলের বইপত্র ও মানব কংকাল সংগ্রহ করা নিয়ে। এর জন্য মোটা অংকের অর্থ দরকার। তার পরিবারের পক্ষে এক সঙ্গে মোটা অংকের টাকা যোগাড় করা দুরুহ। এ নিয়ে হতাশা তাকে অস্থির করে তুলেছে। এরপরও তার আশা, তার চলার পথে কেউ হয়ত এগিয়ে আসবেন। সরফরাজ তার স্বপ্ন পূরণে সমাজের দানশীল হৃদয়বান মানুষের কাছে অর্থ সহায়তা কামনা করেছেন।                                                     

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 3219881978458021432

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item