রামগঞ্জ এলাকায় সারাদিন কাটালেন নুর

বিশেষ প্রতিনিধি ১৪ ডিসেম্বর॥ ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর। দিনটি আজও ভুলতে পারেন না নীলফামারী-২ (সদর) আসনের একাধারে তিনবারের সংসদ সদস্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। এই দিনে নুর কে হত্যার চেষ্টা করা হয় নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে। ভাগ্যক্রমে নুর সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও নুরকে বাঁচাতে ঝাপিয়ে পড়া আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের চার নেতা ও এক পথচারী সহ ৫ জন জামায়াত শিবিরের হাতে হত্যার শিকার হয়েছিল। ঘটনার ৫ বছর আজ শুক্রবার(১৪ ডিসেম্বর) ছিল। ওই দিনকে স্মরন করে এবার সারাদিন রামগঞ্জ,টুপামারী ও নিহতদের বাসায় কাটালেন নুর। দিনটি ছিল মর্মগাঁথা বেদনায় ভরা ।



যুবলীগ নেতা ফরহাদ শাহ ও ছাত্রলীগ কর্মী মুরাদ শাহ। দুই ছেলের শোকে মা মেরিনা বেগম এখনও কাতর। দুই ছেলের ছবি হাতে নিয়ে চলছে তার আহাজারী। কৃষকলীগ নেতা খোরশেদ চৌধুরী স্ত্রী কন্যা ও আর আওয়ামী লীগ কর্মী লেবু মিয়া বৃদ্ধা মার গগন বিদারক আহাজারী। এই চারজন সহ পথচারী আবু বক্কর সিদ্দিক ওই দিন হত্যার শিকার হয়। এলাকায় এটি রামগঞ্জ ট্রাজেডি হিসাবে স্থান পেয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে চতুর্থবারে নৌকার মাঝি নুর। তিনি ওই দিনটি স্মরন রেখেই নিহতদের গ্রামে হাজির হয়ে কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন। এ সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।



বিকালে টুপামারী আওয়ামী লীগ ও তার সকল অঙ্গসংগঠন শোক র‌্যালি, স্মরনসভার,মিলাদ মহফিল ও দোয়ার মধ্য দিয়ে রামগঞ্জ ট্রাজেডি প্রথম বছর পালন করে। রামগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরন সভা ও মিলাদ মহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যে বলেন আমরাও বিরোধী দলে ছিলাম। সেদিন মানুষ হত্যা করিনি। আমরা থানা আক্রমণ আর পুলিশ হত্যা করিনি। নূর বলেন, সেদিন আমাদের কী অপরাধ ছিল। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলাম। সেটিই কি ছিল আমাদের অপরাধ?



দিনটিকে স্মরণ করে নূর বলেন,১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। আর ২০১৩ সালের এই দিনে রামগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল জামায়াত-শিবির। তারা ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধকে হারমানায়। আমাকে ভালবেসে যারা পরাজিত শক্তির হাতে আমার জীবন বাঁচিয়ে নিজের জীবন বির্সজন দিয়েছেন তাদের ঋন আমি জীবনেও পরিশোধ করতে পারবোনা।



আসাদুজ্জামান নুর জানান মানববতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কাদের মোলার ফাঁসীর রায় কার্যকর হওয়ার পর সেই রাতে (১২ ডিসেম্বর/২০১৩) জামায়াত শিবির নীলফামারী জেলা সদরের বিভিন্ন গ্রামে তান্ডবলীলা চালায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সব ঘটনা সরেজমিনে দেখতে তিনি ১৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে পলাশবাড়ির তরুনীবাড়ি,হরতকীতলা লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের কাছারীবাজার শীশাতলী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যাম চরন রায়ের বাড়ি পরিদর্শন ও পথসভা শেষে বিকাল সাড়ে ৪টার দিয়ে নীলফামারী শহরে ফিরছিলাম। এ সময় জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ হাট হয়ে আসার পথে দেখা যায় রামগঞ্জ ব্রীজের কাছে রাস্তা কাটা হয়েছে। ফলে তার বহনকারী মাইক্রোবাসটি সেখানে আটকা পড়ে। এ সময় পেছন দিক থেকে জামায়াত শিবির ও বিএনপির নেতা কর্মীরা তার গাড়ী লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এরপর হামলাকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৪০ টি মটরসাইকেল ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীদের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।সে সময়ে তাদের হাতে নিহত হয় আওয়ামী লীগের ৪ নেতা কর্মী সহ ৫ জন হন।এ সময় নুরের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ,সাধারন সম্পাদক মমতাজুল হক সহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।



মামলার ২৬ আসামী আজো অধরা

২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরের ওই হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১১ মার্চ ২০৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজার রহমান। মামলাটি নীলফামারী জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, এখনও স্বাক্ষী শুরু হয়নি। ওই ২০৬ জনের মধ্যে ১৭৮ রয়েছেন জামিনে। মৃত্যু হয়েছে দুই আসামীর। অপর ২৬ জন আজো অধরাই রয়েই গেছে।নীলফামারী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অক্ষয় কুমার রায় বলেন, ‘মামলাটি চার্জ গঠনের অপেক্ষায় আছে।’#

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1181719065339938997

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item