অধ্যক্ষের বাড়িতে লাশ হলো চৌদ্দ বছরের গৃহপরিচালিকা রোকসানা

বিশেষ প্রতিনিধি ৩০ নভেম্বর॥ নীলফামারী সদরের চওড়াবড়গাছা ইউনিয়নের আরাজি দোলুয়া বটেরতল গ্রামের রিক্সাচালক রফিকুল ইসলামের চৌদ্দ বছরের মেয়ে রোকসানা এক কলেজ অধ্যক্ষের বাড়িতে লাশ হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃস্টি করেছে। ময়না তদন্ত শেষে আজ শুক্রবার (৩০ নভেম্বররু বিকালে রোকসানার মরদেহ দাফন করা হয় গ্রামের মসজিদপাড়ের কবরস্থানে। এ সময় উপস্থিত মুসল্লিরা এ ঘটনার বিচার দাবি করে। সকলের অভিযোগ শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে রোকসানাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে অধ্যক্ষের পক্ষ বলা হয়েছে রোকসানা গলায় ওড়না দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি রহস্যজনক হয়ে উঠেছে।
অভিযোগে জানা যায়, রোকসানা এই শিশু মেয়েটি গত ৪ নবেম্বর হতে গৃহপরিচালিকার কাজ করতো  সম্প্রতিকালে জাতীয়করন হওয়া বীরগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর দিনাজপুর শহরের বাড়িতে। অধ্যক্ষ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন দিনাজপুর শহরের সুইহারী মহল্লায়। তার স্ত্রী কামরুন্নাহার সহকারী শিক্ষিকা পদে চাকুরী করেন দিনাজপুরের গাওসিয়া দাখিল মাদ্রাসায়। দিনাজপুরে ওই অধ্যক্ষের বাড়িতে লাশ হয় রোকসানা।
এদিকে রোকসানার দাদা আফসার আলী অভিযোগ করে জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের বাড়িতে আসে বীরগঞ্জ সরকারী কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, রোকসানা খুব অসুস্থ তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। আপনাদের নিয়ে যেতে গাড়ী নিয়ে এসেছি। ওই কথা শোনার পর আমি, আমার স্ত্রী (রোকসানার দাদী) রশিদা খাতুন, রোকসার খালা ময়না বেগম ও রোকসানা চাচতো ভাই রহিদুল সহ আমরা চারজন দিনাজপুর যাই। আমাদের দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে জানানো হয় রোকসানা ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমরা রোকসানার লাশ দেখে বুঝতে পারি তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করলে গলায় দাগ থাকবে জ্বিব বের হয়ে যাবে। কিন্তু এর কোন আলামত আমরা দেখতে পাইনি। পরে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ এসে হাসপাতালে লাশের সুরতহাল ও ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় আমাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। আমরা রাতেই রোকসানার লাশ নীলফামারীর গ্রামে নিয়ে আসি। লাশ দাফন ও লাশ নিয়ে আসার গাড়িভাড়া বাবদ তারা আমার হাতে ২০ হাজার টাকা দেয়।
তিনি অভিযোগ করে জানায়, কলেজের প্রিন্সিপাল অনেক প্রভাবশালী। তার পক্ষে অনেক নেতা। রোকসানাকে শারিরিক নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে আমি মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই প্রিন্সিপালের পক্ষের নেতারা মামলা করতে বাধা দেয়। পরে জানতে পারি দিনাজপুর থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের হয়েছে। তার কোন কাগজপত্র আমাদের দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, ওই প্রিন্সিপালের বাড়ির সুইহারী মহল্লার মানুষজন তাকে বলেছে প্রিন্সিপালের স্ত্রী রোকসানাকে মারধর করতো খুব।
রোকসানার বাবা রফিকুল ইসলাম জানায়, আমার তিন মেয়ে ও ২ ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আমি ঢাকায় রিক্সা চালাই। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে আজ শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) সকালে বাড়ি এসেছি। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই বলে তিনি হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন। এ সময় রোকসানা মা রশিদা খাতুন অভিযোগ করে জানায়, তাদের গ্রামের জ্যামাউল্লার বউ শেফালী বেগম আমার মেয়ে রোকসানাকে জোড় করে কাজ করার জন্য দিনাজপুরে প্রিন্সিপালের বাড়িতে যায়। গত ৪ নবেম্বর আমার মেয়ে রোকসানাকে নিয়ে যায় শেফালী। তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা বলা হয় বীরগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি রোকসানাকে শারিরিক নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার (২৯ নবেম্বর) সকালে আমার মেয়ে কোচিং এ যায়, আমি কলেজে ও আমার স্ত্রী মাদ্রাসায় চলে যাই। রোকসানা বাড়িতে একাই ছিল। বাসায় ছিল তালা লাগা। বেলা ১০টার দিকে কোন এক কাজে আমার স্ত্রী কামরুন্নাহার বাড়ীতে ফিরে এসে দেখে ড্রইংরুমের সিলিংফ্যানে গলায় ওড়না পেচানো রোকসানা ঝুলছে। তার হাত পা নড়তে দেখে আশেপাশের লোকজনের সহায়তায় রোকসানাকে নামিয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন পুলিশি আইনী প্রক্রিয়া ও লাশের ময়না তদন্ত শেষে ২০ হাজার টাকা দিয়ে রোকসানা  লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।
বীরগঞ্জের একাধীক সুত্র অভিযোগ করে জানায়, কলেজটি বেসরকারী থাকাকালিন অধ্যক্ষ খয়রুল ইসলাম চৌধুরীর  বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৭৯ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৬৫ দশমিক ৭০ টাকা আতœসাত করেন। এই দুর্নীতির অভিযোগে দিনাজপুর সিনিয়র ¯েপশাল জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা  বাদী বীরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যুৎশাহী সদস্য মোঃ আব্দুল্লাহেল কাফী।
অপর দিকে মুঠোফোনে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ওসি রেজওয়ান বলেন এ ঘটনায় একটি ইউডি মামলা (২০২) দায়ের করে লাশের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোটের উপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। # 

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7620260154146974126

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item