নীলফামারী ৪- মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ আওয়ামী লীগে ॥ তিনজন করে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির


তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর(নীলফামারী)প্রতিনিধি:
 আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি দিন দেরী নেই। নির্বাচনের সময় একেবারে ঘনিয়ে এসেছে। শুরু হয়েছে ক্ষণ-গণনাও। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে নীলফামারী - ৪ আসনের সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বড় তিন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচার-প্রচারণায় তৎপর রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (এ) মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের অবস্থান জানান দিতে গোটা নির্বাচনী এলাকা জুড়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ঝুলিয়েছেন। গোটা নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র চলছে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। দলগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। অনেকেই আবার ঘন ঘন দৌঁড়াচ্ছেন ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। তবে এবারে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা দীর্ঘ আওয়ামী লীগের। ক্ষমতাসীন এ দলটি থেকে এক ডজন মনোনয়ন  প্রত্যাশী প্রার্থী রয়েছেন। আর বিএনপি ও  জাতীয় পার্টির (এ)  তিন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।
এ আসনের দুই উপজেলার নির্বাচনী এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কি শহর কি গ্রাম, সর্বত্র এখন আলাপ-আলোচনা বিষয়বস্তু একটিই। আর তা হচ্ছে আসন্ন সংসদ নির্বাচন এবং কে কোন দল থেকে পাচ্ছেন মনোনয়ন। সেই সাথে কোন দল থেকে কে প্রার্থী হলে কে কি রকম ভোট পাবেন ? সর্বত্র হিসাব-নিকাশ চলছে মূলতঃ আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে।
আর এ সব আলাপ-আলোচনা নিয়ে এখন নীলফামারী -৪ আসনে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাপা পার্টির(এ) মনোনয়ন প্রত্যাশীরা চালিয়ে যাচ্ছেন সভা, সমাবেশ ও গণসংযোগ। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দলটি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ১২ জন। এতো বিপুল সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কারণে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা রয়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দে¦। মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের গণসংযোগে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা এখন অনেকটাই দ্বিধাবিভক্ত। যদিও দলটির একাধিক সূত্রের দাবি দলে মনোনয়ন লাভের জন্য প্রতিযোগিতা চলছে, কোন দ্বিধা দ্বন্দ¦ নেই। প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে সব কিছুই ঠিক হবে যাবে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই কাজ করবে দলের নেতা কর্মীরা। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, তারা হচ্ছেন সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রংপুর বিভাগীয় কমিটির সভাপতি প্রখ্যাত পরিবহন শ্রমিকনেতা মো. আখতার হোসেন বাদল, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ সৈয়দপুর পৌর শাখার শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এবং সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী আমেনা কোহিনুর আলম, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম সরকার, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা প্রকৌশলী সিকান্দার আলী, ব্যারিস্টার মো. মোকছেদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মো. সাখাওয়াৎ হোসেন খোকন, কেন্দ্র্রীয় আওয়ামী কর আইনজীবী পরিষদের প্রকাশনা সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমীর, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, কিশোরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বাবুল,কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটির সদস্য মো. মোশারফ হোসেন। উল্লিখিতদের ছাড়াও নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এ সব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা সমাবেশ, গণসংযোগসহ ওয়ার্ডে, ইউনিয়নে রাজনৈতিক বৈঠক করছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও। তবে এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী আমেনা কোহিনুর আলম, সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আখতার হোসেন বাদলের প্রচার-প্রচারণা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আরো প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্র্রীয় আওয়ামী কর আইনজীবী পরিষদের প্রকাশনা সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমীর, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কলাণ সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা, প্রকৌশলী সিকান্দার আলী, কিশোরগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বাবুল ও ব্যারিস্টার মো. মোখছেদুল ইসলাম। বাকিরা তেমন গণসংযোগে না থাকলেও তাদের পোষ্টার,ব্যানার ও বিলবোর্ড দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী এলাকায়।
অপর দিকে, নীলফামারী -৪ আসনে বর্তমান সাংসদ জাপার (এ) আলহাজ্ব মো. শওকত চৌধুরী। তিনি (শওকত চৌধুরী) জাপা (এ) থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে  ৭০ হাজার ৪৪ ভোট পেয়েছিল। আর ৮৭ হাজার ৩১৯ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কর্ণেল (অবঃ) এ, এ, মারুফ সাকনাল। সে সময় এ আসনটি  জাপা ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত ছিল। তাই এবারও এ আসনটি উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর দশম সংসদ নির্বাচনে শওকত চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। এবারও তিনি জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. শওকত চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন জাপা (এ) চেয়ারম্যান  আলহাজ্ব হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ভাগনে ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম ড. আসাদুর রহমানের এবং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা রহমানের পুত্র আলহাজ¦ আহসান আদেলুর রহমান (আদেল)। এতে করে জাতীয় পার্টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমন কি পবিত্র ঈদুল আযহার আগের দিন সাংসদ শওকত চৌধুরী ও আদেল সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় উভয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন নেতা কর্মী পর্যন্ত আহত হন। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির মধ্যে শওকত চৌধুরী ও আদেল গ্রুপে চলছে ঠান্ডা লড়াই। এছাড়া জাপা (এ) থেকে এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন কিশোরগঞ্জ উপজেলা জাপা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রশিদুল ইসলাম।
এদিকে, বিএনপি প্রার্থী থেকে নীলফামারী - ৪ আসনে এবারেও মনোনয়ন প্রত্যাশী সৈয়দপুর রাজনৈতিক বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন সরকার। তিনি অষ্টম নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে ৬০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রথম শ্রেণীর সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র এবং সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। এর আগে তিনি দুইবার সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র, একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ আসনে বিএনপি থেকে আরো যারা মনোনয়ন চাইছেন তারা হলেন,কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও বিএনপি’র নির্বাহী সদস্য নেত্রী বিলকিস ইসলাম। অবশ্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এ দুইজন নাম শোনা যাচ্ছে এবং নির্বাচনী এলাকায় তাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড শোভা পাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাঠে আমজাদ হোসেন সরকারই সক্রিয় রয়েছেন। যদিও মনোনয়ন প্রত্যাশী কন্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা  বিএনপিতে কিছুটা আভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তারপরও সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন সরকার নীলফামারী - ৪ আসনের সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জে সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। দলকে শক্তিশালী করতে দলের বিভিন্ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে তৃণমূলে সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন তিনি। আর কয়েক মাস আগে কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনের পক্ষে ব্যানার, বিলবোর্ড লাগানোসহ কয়েকটি উঠোন বৈঠক করা হলেও, এখন সেটি দেখা যাচ্ছে না।  সেদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন সাবেক সাংসদ অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন সরকার।
নীলফামারী - ৪ আসন সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। দুই উপজেলায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭১ হাজার ৭১জন। এর মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৪ জন এবং কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ২২৭জন। এর আগে কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নীলফামারী -৪ আসনে সংযুক্ত ছিল। ২০১৮ সালের পুনর্বিন্যাসে কিশোরগঞ্জ উপজেলার আরো তিনটি ইউনিয়নকে এ আসনের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
দশটি নির্বাচনে নীলফামারী - ৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের ফল বিশ্লেষন : বিগত ১০ টি সংসদ নির্বাচনে প্রথম ও নবম সংসদে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয়, ষষ্ঠ (১৫ ফেব্রুয়ারী) ও অষ্টমে বিএনপি, তৃতীয়, সপ্তম ও বর্তমান ১০ সংসদে জাতীয় পার্টি, পঞ্চম সংসদে ন্যাপ (মোজাফফর) ও চতুর্থ সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।   

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4504327792419008839

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item