তাজরীন ট্র্যাজেডির ৬ বছর : শেষ হয়নি বিচার কাজ

অনলাইন ডেস্ক
তাজরীন ট্র্যাজেডির ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১২ সালের এ দিনে রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১২ শ্রমিক মারা যান। আহত হন অর্ধশতাধিক।
এ ঘটনার ৬ বছর পার হলেও শেষ হয়নি মামলার বিচার কাজ। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় অনেকটা থমকে আছে বিচার।
তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম একটি মামলা করেন। ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক একেএম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এর পর থেকে আসামিপক্ষের লোকজনের আর্থিক প্রলোভনের কারণে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এখন পর্যন্ত ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আর সাক্ষীদের মধ্যে দুজন মালিকের পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি কাজী শাহানারা ইয়াসমিন বলেন, মামলায় সাক্ষীদের প্রতি অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ মামলায় অধিকাংশ সাক্ষীরা হলেন ওই তাজরীন ফ্যাশনের কর্মচারী। আর তারা ছিল ওই এলাকার ভাড়াটিয়া। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন তদন্ত করেছেন, তখন তিনি সাক্ষীদের বর্তমান ঠিকানা লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা নেননি। যে কারণে বর্তমান ঠিকানায় অর্থাৎ সাভারের ঠিকানায় কোনো সমন গেলে পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না। এ জন্য আমরা কিছু সাক্ষী আনতে পারিনি। তবে যাদের স্থায়ী ঠিকানা রয়েছে, তাদের পর্যায়ক্রমে আমরা সাক্ষ্য দিতে আদালতে নিয়ে আসব।
এদিকে আয়েশা বেগম নামের তাজরীন ফ্যাশনের একজন আহত শ্রমিক জানালেন, সন্ধ্যা ৬টার কিছু আগে একবার ফায়ার বেল বেজে ওঠে কারখানায়। তখন শ্রমিকরা বের হয়ে যেতে চান। কিন্তু কিছুই হইনি বলে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন উৎপাদন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে কারখানার নিচ তলার তুলার গোডাউনে আগুন লাগে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই আবার শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে বাহিরে বের হতে চান। কিন্তু এবার নির্দয়ের মত কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে দাউ দাউ করে। প্রাণে বাচঁতে শ্রমিকরা সিড়ি বেয়ে কারখানার ছাদে ওঠেন। ছাদ থেকে লাফিয়ে এবং দেয়াল বেয়ে অনেকেই নামতে সক্ষম হন। কিন্তু এদের মধ্যে শত শত শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করেন। আয়শা বেগমও তাদের মধ্যে একজন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ১১১ জন পোশাক শ্রমিক ও কর্মী নির্মমভাবে নিহত হন। আহত হন ১০৪ জন শ্রমিক। গার্মেন্টস কারখানাটিতে এক হাজার একশ’ ৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন। নিহত ১১১ জনের মধ্যে তৃতীয় তলায় ৬৯ জন, চতুর্থ তলায় ২১ জন, পঞ্চম তলায় ১০ জন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যান ১১ জন। লাশ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকী ৫৩ জনের লাশ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। ওই ঘটনায় আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারা যুক্ত করা হয়। মামলাটি তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পুলিশের ইন্সপেক্টর একেএম মহসীনুজ্জামন।
ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা অগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপার ভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল।
আসামিদের মধ্যে মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনোয়ারুল ও মো. শামিম মিয়া পলাতক রয়েছেন।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 8335785168118257162

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item