রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন-আওয়ামীলীগকে ছাড় দিতে চায় না বিএনপি -জাপা

শেখ হাসিনাতেই পীরগঞ্জবাসীর ভরসা

রংপুর ব্যুরোঃ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে রংপুরের পীরগঞ্জ-৬ আসনটি অত্যান্ত গুরুত্বপূন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনবার ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন রংপুর-৬ আসন থেকে। সে কারনে  নির্বাচনে এ আসনটি ভি আইপি আসন হিসেবে পরিচিত । একসময় জাতীয় পাটির দুর্গও বলা হতো এ আসনকে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এখানে নৌকার হাল ধরে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মেরু করণ সৃষ্টি করেন। প্রধানমন্ত্রী এই আসনটি ছেড়ে দিয়ে ২০০৮ সালে উপনির্বাচনে শিল্পপতি  মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদকে নৌকা প্রতিকে মনোয়ন দিলে তিনি ধানের শীর্ষ প্রতিক নূর মোহাম্মদ মন্ডলকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে উপনির্বাচনে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড.শিরিন শারমিন চৌধূরীকে মনোয়ন দিলে তিনি বিনা- প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তারপর তিনি জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষনার পর এ আসন থেকে  ভোটে অংশ গ্রহনের উদ্দেশে আওয়ামীলীগ  দলীয় সভাপতি  ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধূরী, সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি থেকে রংপুর জেলার সভাপতি সাইফুল ইসলাম, তারেক রহমান পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান, জাতীয় পাটি থেকে উপজেলা সাধারন সম্পাদক নুরে-আলম যাদু , কমিউনিষ্ট পাটির (সিপিবি) উপজেলা সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক কামরুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা বেলাল হোসেনসহ বেশ কয়েক জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনায়ন সংগ্রহ করেছেন।
একটি পৌরসভা ও ১৫টি  ইউনিয়ন  নিয়ে গঠিত  পীরগঞ্জ আসনটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেত্বেতের দিক থেকে ক্ষমতাসীন দলের অবস্থান খুবই সুদৃঢ়।  সেই ধারাবাহিকতায় এবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকেই, প্রার্থী হিসেবে পেতে চাইছেন। তাদের কেউই এখান থেকে নির্বাচনে অংশ না নিলে স্থানীয় কোনো প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী তারা। তবে আওয়ামীলীগ জাতীয় পাটির মহাজোটের সমিকরণেও যদি জাতীয় পাটির কাউকে মনোনায়ন দেয়া হয় তাকে ছাড় দিতে নারজ স্থানীয়রা।  অন্য কোনো দলের প্রার্থীর মনোনয়ন মেনে নিতে রাজি নন তারা। সব মিলিয়ে এ আসনে রয়েছে নৌকার  সম্ভাবনা। জর্জরিত বিএনপি এখানে কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে নেই বললেই চলে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত সাবেক এমপি নূর মোহাম্মদ মন্ডল বিএনপিতে থাকলেও সম্প্রতি তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করায় ভোটের হিসাব নিকাশ পাল্টে যায়।
উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের সুলতান মিয়া জানান, এটি ম্যালা কাম হচ্ছে কিন্তু হামরা স্পীকারের সাথে দেখা করবা পারি না।   দ্যাখা করবা গেল্যি ঢাকাত যাওয়া  নাগে তাতে ২ হাজার টাকা খরচ হয় । হামরা স্থীনীয় মানুষক এমপি চাই।
মাদারগঞ্জ এলাকার বাসেত আলী জানান, স্পীকার ভালো ছিল কিন্তু তাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আরও পীরগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন করে নিতে পারতাম।
টুকুরিয়া গন্ধবপুরের শিক্ষার্থী শাপলা আক্তার জানান,  স্পীকারের আমলে নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ  অগ্রধিকার ভিত্তিক সকল কাজে অংশ গ্রহন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
রামনাথপুর ইউপির কৃষক হাবিবুর রহমান জানান,  এক সময় এই ইউনিয়নে এরশাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিলো। তার মুক্তির জন্য বহিরাগত প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেমকেও ভোট দিয়েছিলো লাঙ্গলে। তিনি ভোট নেয়ার পরে এলাকাতে একদিনো আসেনি। আর এরশাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথার কারণে তার ভোট ব্যাংক অনেকটাই কমে গেছে।
বাংলাদেশ কৃষক লীগ পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মামুনুর রশিদ মেরাজুল বলেন, ২০১৪ সালে ড. শিরিন শারমিন এমপি নির্বাচিত হন। তারপর তিনি জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন। স্পীকার নির্বাচিত হয়ে শুরুতে পীরগঞ্জে ঘন ঘন যাতায়াত করলেও পরবর্তীতে তা ভাটা পড়ে যায়। আবার বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া বইতে থাকলে তিনি এ আসনে নির্বাচনের জন্য ব্যাপক গনসংযোগ শুরু করেন।  এবং উন্নয়নের ধারা অব্যহৃত রাখলেও  তৃণমুল আওয়ামীলীগের নেতা কমী ও সাধারন মানুষ তার কাছে ভীড়তে না পারায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও আওমীলীগের সুবিধা বাদী কিছু নেতা তাকে সব সময় ঘিরে রাখায় পুরাতন ত্যাগী আওয়ামীলীগের নেতা ও সাধারন মানুষের সমস্যা মন খুলে বলতে না পারায় দিন দিন সাধারন ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে তিনি অত্যান্ত ভালো লোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তিনি এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ আসনে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী হলে স্থানীয় ভোটাররা খুশি হবেন।

রায়পুর ইউনিয়নের জাতীয় পাটির নেতা ও ইউপি সদস্য মোস্তাফিজার রহমান গোলাপ বলেন, আমরা মহাজোটের অংশিদার হিসাবে আওয়ামীলীগের কিছু সুবিধা বাদীর নেতার দাপটের কারনে পীরগঞ্জ উপজেলার এমপি জাতীয় সংসদের স্পীকারের ধারের কাছে যেতে পারেনি। তবে  শুনেছি তিনি অত্যান্ত ভালো লোক।
২০১৮ সালের নির্বাচনেও এ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী হবেন বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কারণ, পীরগঞ্জ মানেই শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি ও তার ছেলে জয়ের দাদার বাড়ি। তাদের কেউ প্রার্থী হলে আগামী নির্বাচনে এ আসন যেমন দখলে থাকবে, তেমনি আশপাশের নির্বাচনী আসনগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা। তবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে পরোক্ষভাবে এ আসন থেকে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আবার দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলেও সম্প্রতি প্রায়ই গণসংযোগ করতে এলাকায় আসছেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টিও আসন্ন নির্বাচনে এ আসনটিকে কব্জায় নিয়ে হারানো গৌরব পুনঃ রুদ্ধারে মরিয়া। দলটির নীতিনির্ধারকদের মতে, জাতীয় পার্টিতে শক্তিশালী প্রার্থীর অভাব রয়েছে। কোনো কারণে এ আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন না করলে  স্থানীয় প্রার্থী চাইছেন  আওয়ামীলীগ।
এ আসনটিতে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফল পর্যালোচনায় বলা যায়, এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ইউপি নির্বাচনে এখানকার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের ১২টিতেই আওয়ামী লীগ, দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে এ আসনের বর্তমান সাংসদ ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ নির্বাচনী এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে এ এলাকার মানুষ নৌকাকেই জয়ী করবে। তিনি জানান, এ আসনে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী হলে স্থানীয় ভোটারদের মতো তিনিও খুশি হবেন। কে এ আসনের হাল ধরবেন, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজিমুল ইসলাম শামীম এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান রাঙ্গা বলেন, এ আসনের মনোনয়ন সম্পর্কে দলের সভাপতিই চূড়ান্ত  সিদ্ধান্ত দেবেন। তারপরও যদি নেত্রী নির্বাচনে আসেন তাহলে এলাকার মানুষ খুশি হবে। বিকল্প হিসেবে স্পিকারকেই তারা সমর্থন করবেন। কারণ, শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তিনি এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
এ আসনে বিএনপির যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালিত হয়, তা রংপুর জেলা ও পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার মতো ভিত্তি তিনি তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু পীরগঞ্জের গ্রাম গঞ্জে অলি-গলিতে রংপুর  জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের পোষ্টার ছেয়ে গেছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির অবস্থানও এ আসনে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। উপজেলা সদর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দলের বিলাসবহুল নিজস্ব কার্যালয় ‘এরশাদ ভবন’ও এখন আর আগের মতো জমজমাট নয়। মাসে একদিনও এখন এটি খোলা পাওয়া যায় না। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাপা মাত্র দুটিতে প্রার্থী দিতে পারলেও শেষ পর্যন্ত শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয় তাদের। তবে এরই মধ্যে এখানে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম যাদু ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন টানিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। উপজেলা সদর থেকে তার বাড়ি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে হলেও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে জাপার রাজনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম যাদু বলেন, প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে স্যার (এইচএম এরশাদ) তাকে সবুজসংকেত দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তিনি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তার লক্ষ্য এ আসনটিকে পুনঃরুদ্ধার করা।
রংপুর জেলা ও পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশা ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপিই জয়ী হবে। নেতা-কর্মীদের ধর-পাকড়, হাজতবাসসহ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করে তরুণ এ নেতা বলেন, বিএনপির নির্বাচনী মাঠ সাজানো আছে, এখন দরকার শুধু সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন। রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বিএনপির দুঃসময়ের বন্ধু সাইফুল ইসলাম নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে জেলা বিএনপির পাশাপাশি উপজেলা বিএনপিকেও নির্বাচনমুখী করে সাজিয়েছেন। 

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 4967011791825664382

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item