একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরব রংপুর-৬ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন

রংপুর ব্যুরো-একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সরব রংপুর-৬ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনী এলাকায় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ি। এ আসন থেকে বিভিন্ন সময় নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান এ আসনের সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। উপ-নির্বাচনখ্যাত এ আসনটি নিয়ে মানুষের মাঝে কৌতূহলের কমতি নেই।
পীরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচিত হন এবং উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালেও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নির্বাচিত হয়ে তার ছেড়ে দেয়া আসনে উপ-নির্বাচনে জাপা’র নূর মোহাম্মদ মণ্ডল নূরু নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে জাপা’র নূর মোহাম্মদ মণ্ডল আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং ২য় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে জাপা থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া নূর মোহাম্মদ মণ্ডলকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন। তার ছেড়ে দেয়া আসনে উপ-নির্বাচন হলে আওয়ামী দলীয় প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন পীরগঞ্জের পুত্রবধূ শেখ হাসিনা। উপ-নির্বাচনে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে জাতীয় সংসদের স্পিকার।
১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রচারণা শুরু করেছেন। স্ব স্ব দলের নেতা কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে গণসংযোগসহ উঠান বৈঠকে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় প্রধানদের বড় বড় ছবির পাশে নিজেদের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা উপজেলা। মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা, ওয়াজ মাহফিল ও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। সাধারণ ভোটাররাও আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কষছেন নানা হিসাব-নিকাশ। এ আসনে বরাবরই উপ-নির্বাচনে এলাকার বাহিরের প্রার্থী নির্বাচিত হন। অনেক ভোটার তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, বাইরের কেউ সংসদ সদস্য হলে এলাকার মানুষ তাদের কাছে পায় না। সুখ-দুঃখের কথা বলার সুযোগও থাকে না। জরুরি প্রয়োজনে সাক্ষাৎ করতে ঢাকায় যেতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। তার পরও সময় মতো তাদের দেখা মেলে না। সার্বিক উন্নয়নের পরও তো সাধারণ মানুষের স্বস্তির জন্য কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকে। সে কারণে স্থানীয় কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন- এমনটাই চাইছেন এলাকার সাধারণ ভোটার ও দলের নেতাকর্মীরা। আলোচনায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও। এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান রাঙ্গা বলেন, এই সরকারের আমলে পীরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সুতরাং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও এই আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী হবেন- এমনটাই আমাদের চাওয়া। বিগত দিনের তুলনায় পীরগঞ্জের আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ। তিনি আরো বলেন, ‘কোনো কারণে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী না হন তাহলে তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় প্রার্থী হবেন এটাই দাবি। তবে পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগ সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়নের কাণ্ডারী বর্তমান এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রার্থী যে-ই হোক এ আসনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ জিতবে- এমনটাই আশা দলীয় নেতাকর্মীদের।
এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে দুজনের দৌড়-ঝাঁপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা হলেন রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য, সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল। দুইভাগে বিভক্ত বিএনপির রাজনীতিতে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম শুরু থেকেই বেশ সক্রিয়। রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বিএনপির দুঃসময়ের বন্ধু সাইফুল ইসলাম নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে জেলা বিএনপির পাশাপাশি উপজেলা বিএনপিকেও নির্বাচনমুখী করে সাজিয়েছেন। ফলে মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিনি শতভাগ আশাবাদী। নেতা-কর্মীদের ধর-পাকড়, হাজতবাসসহ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করে তরুণ এ নেতা বলেন, বিএনপির নির্বাচনী মাঠ সাজানো আছে, এখন দরকার শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের। পক্ষান্তরে দু-দুবারের সাবেক এমপি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দলীয় রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় না হলেও তার রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। তিনি দু’দফা সংসদ সদস্য থাকাকালে পীরগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন করেছেন। জনমত আমার পক্ষে আছে দাবি করে নূর মোহাম্মদ মণ্ডল বলেন, দলীয় সমর্থনে ধানের শীষ মার্কা পেলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপিকে এ আসনটি উপহার দেবেন।
এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নূরে আলম যাদু দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সবুজ সংকেত পেয়ে অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে চলছে নির্বাচনী পরিকল্পনা।
নূরে আলম মিয়া যাদু একজন ব্যবসায়ী। এলাকার মসজিদ, মন্দির, স্কুল-মাদরাসা নির্মাণে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনেই কোনো না কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক কর্মকাণ্ডে উপস্থিত থেকে ভোটারদের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে তিনিই প্রার্থী হবেন- এটা প্রায় চূড়ান্ত করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। নূরে আলম যাদু মিয়া বলেন, রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনটি মূলত জাতীয় পার্টির। মহাজোটের কারণে এ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। আবারও সেই দিন ফিরে আসবে। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নূরে আলম মিয়া যাদু বলেন, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে মহাজোটের শরিক হিসেবে প্রার্থীদের পক্ষে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। সে টাকা পরিশোধ করা তো হয়নি বরং মহাজোট সরকারের অংশ হিসেবে পীরগঞ্জের জাতীয় পার্টিকে ন্যূনতম মূল্যায়ন পর্যন্ত করা হয়নি। গত উপ-নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি। পীরগঞ্জে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা এখন শুধু ভোটের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 7111031782093899194

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item