নির্বাচনী হালচাল-রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে জাপাকে ছাড়া দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ

রংপুর ব্যুরো-গঙ্গানদী এক সময় গঙ্গাচড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে একসময় নদীটি চরে পরিনত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর এই গঙ্গানদীর নামে পরবর্তীতে গঙ্গাচড়া উপজেলার নাম করণ করা হয়। এই উপজেলাটি ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের ভোটের হিসাব-নিকাশ আগের মতোই থাকার সম্ভাবনা বেশি। মহাজোট না থাকলেও পট পরিবর্তনের আভাস স্পষ্ট নয়। কারণ, ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে। এবার মহাজোটের সুতো ছিঁড়ে গেলে ভোটযুদ্ধ হবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। মহাজোট বহাল থাকলে সহজ জয় পেতে পারে জাতীয় পার্টি। তবে এ আসনে জামায়াতের ভোট হয়ে উঠতে পারে ফ্যাক্টর। কারণ প্রতিটি নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ছিল দ্বিতীয় স্থানে। তাছাড়া ময়েন উদ্দিন সরকার বাদে স্থানীয়ভাবে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোন স্থানীয় নাগরিক এমপি না হওয়ায়  এবার এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ ইতিমধ্যে ‘ভাড়াটিয়া প্রার্থী খেদাও’, ‘বহিরাগত প্রার্থী চাই না’, ‘স্থানীয় প্রার্থী চাই’ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।

জাতীয় সংসদের ১৯নং আসন রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া)। মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৯৭ হাজার। এ আসনটিতে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ময়েন উদ্দিন সরকার, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী করিম উদ্দিন ভরসা জয় লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মসিউর রহমান রাঙ্গা, ২০০৮ সালে জাতীয় পাটির প্রার্থী এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন মসিউর রহমান রাঙ্গা। ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন হলে এবারও রংপুর-১ আসনটি ছেড়ে দিতে হতে পারে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গাকে।

এ কারণে স্থানীয় জনগণ বলছেন, চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গাতেই আস্থা রাখতে হবে গঙ্গাচড়াবাসীকে। জোটের প্রার্থী হলে ফল তার পক্ষেই যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। গঙ্গাচড়া উপজেলা জাতীয় পাটির সাংগঠনিক কোন্দল ও গ্রুপিংয়ের কারণে দুর্বল হলেও জনপ্রিয়তা রয়েছে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী হিসেবে মসিউর রহমান রাঙ্গার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। তাই উন্নয়ন কাজ এবং নিজের ও পার্টি চেয়ারম্যানের ইমেজের কারণে জয়ের মালা তারই হতে পারে।

গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের বয়োঃবৃদ্ধ তবারক আলী বলেন, ‘গঙ্গাচড়া থেকে এমপি নির্বাচিত হলে প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গা যে কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হতে পারেন, সে যোগ্যতা তার আছে। একজন মন্ত্রী পেলে গঙ্গাচড়াবাসীর দুঃখ থাকবে না।’

এনজিওকর্মী রওনক জাহান বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গা গঙ্গাচড়া উন্নয়নে খুব চেষ্টা করছেন। আমরা তো দেখছি তার প্রচেষ্টাগুলো। সামষ্টিক উন্নয়নে রাঙ্গা এমপির তুলনা হয় না।’

উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শামসুল আলম বলেন, ‘গঙ্গাচড়ায় জাতীয় পার্টি ৯০ দশকের মতো আবার ফিরে এসেছে। জাতীয় পাটির্র প্রার্থী ১০০ শতাংশ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। জোট হলে নিশ্চিত বিজয় ঠেকাবার মতো কেউ নেই।

এ আসনটিতে জাতীয় পাটির প্রার্থী সঙ্গে ভোটের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব সময় তৃতীয় অবস্থানে থাকতেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জোরেসোরে মাঠে নেমেছেন। নিজ নামে সেঁটেছেন রঙিন ব্যানার পোস্টার। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এবারও এ আসন ছেড়ে দিতে হবে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বস্তি ও অস্বস্তি দুটিই দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের দাবি, জাতীয় পার্টি নয়- এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে রাখতে হবে গঙ্গাচড়া আসনে।
তাদের মতে, সরকারি দলের এমপি ছাড়া কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আগেই নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য রবিউল ইসলাম রেজভী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন। মহাজোট না থাকলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ভোটযুদ্ধ জমে উঠবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রুহুল আমীন বলেন, ‘আমি পরপর দুইবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তা প্রত্যাহার করেছি। এবার আবার দলীয় মনোনয়ন চাইব।’

আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলাম রেজভী বলেন, ‘এবার দলীয় প্রার্থী হলে রেকর্ড পরিমাণ ভোটে নৌকা প্রতীকের ভোট নিশ্চিত করবেন গঙ্গাচড়ার জনগণ। আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব। মহাজোট বহাল থাকলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কাজ করব।’

জামায়াতের শক্ত প্রার্থী রুহুল ইসলাম সুজা মিয়া পীর সাহেব মৃত্যুর পর এ আসনে জামায়াতের কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে প্রায় ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতারা ও বসে না থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢিলেঢালাভাবে।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এবার তারা দলীয় প্রার্থী দিতে পারবে না। তাই বিএনপির আড়ালে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে জামায়াত। অথবা তাদের ভোট বিভক্ত হতে পারে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু ও যুগ্ম সম্পাদক মোকাররম হোসেন সুজন, জামায়াত থেকে অধ্যক্ষ আব্দুল গণি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। জেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক খায়রুল আলম বাবু, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশ (এনসিবি) কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ সম্পাদক ইছা মো. সবুজসহ (ইছাহাক), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মোতাবেরুল ইসলাম মিঠুসহ কয়েকজন জেলা পর্যায়ের নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।

গঙ্গাচড়া উন্নয়নে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে অনড় স্বতন্ত্র প্রার্থী শিল্পপতি সিএম সাদিক নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার দাবি ভাড়াটিয়া এমপি নয়, গঙ্গাচড়ার স্থানীয় নাগরিককে এমপি নির্বাচিত করতে হবে।

অন্যদিকে, এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেন। গেল রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাপা চেয়ারম্যানের আদেশ অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 1828987742235259251

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item