নির্বাচনী হালচাল-নীলফামারী-২ সদর আসনে আ.লীগে নুর অপ্রতিদ্বন্দি॥ জোটের ভাগে বিএনপি-জামায়াতে টানাটানি

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,  নীলফামারী ॥
নীলফামারী জেলার সদর উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন ১৩ এর নীলফামারী-২ আসন। আসনটিতে রয়েছে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। এই আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৭৫ হাজার ৩০৯। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৯৪ এবং নারী এক লাখ ৩৭ হাজার ৫১৫।
এবার নীলফামারী জেলা নির্বাচন অফিসের চলতি বছরের গত ২০ সেপ্টেম্বরের সর্ব শেষ হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮০। এতে ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৪ হাজার ৫৭১। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৫ ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫৭৯।

দেশ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বর্তমানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এ আসনের একাধারে তিনবারের নির্বাচিত এমপি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসাদুজ্জামান নূরের নির্বাচনী এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশার প্রতিদ্বন্দিতায় নেই কেউ। বিএনপি, জামায়াতেও একক মনোনয়ন প্রত্যাশি। ওই দুই দলে রয়েছে জোটের ভাগাভাগির অস্বস্তি। বিএনপির পক্ষে আসনটি আর জামায়াতের প্রার্থীকে ছাড় দিতে নারাজ। অপরদিকে মহাজোটের শরীক জাতীয় পাটি আগাম হাল ছেড়েছে আসনটি। প্রতিটি নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী দিলেও একটিবারের জন্য জয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি। এবারো তাদের এক প্রার্থী জোড় কদমে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে বিএনপির পক্ষেও একক প্রার্থীর জনসংযোগ চলছে। রয়েছে সিপিপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও ন্যাপের প্রার্থী।

১০টি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণঃ-আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রথম, দ্বিতীয়, অষ্টম, নবম, দশম নির্বাচনে বিজয়ী হয়। সিপিবি পঞ্চম নির্বাচনে (আওয়ামী লীগেরসাথে সমঝোতায়), জাতীয় পাটি তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম নির্বাচনে, বিএনপি ষষ্ঠ নির্বাচনে (১৯৯৬, ১৫ ফেব্রয়ারী) ক্ষমতায় আসে।

আওয়ামী লীগে নূর অপ্রতিদ্বন্দীঃ- জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির অভিভাবক নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের আসনে দলের অন্য কোন নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন না। জেলা শহরে বাড়ি হলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ ও সাধারন সম্পাদক এ্যাডঃ মমতাজুল হক মনোনয়ন চাচ্ছেন আসাদুজ্জামান নূরের আসন বাদে তিনটি আসনের যে কোন একটিতে। শুধু দলীয় নেতাই নয়, জাতীয় পাটির কোন নেতাই মনোনয়ন চাচ্ছেন না এ আসনে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের দেওয়ান কামাল আহম্মেদ উত্তরবাংলাডটকমকে বলেন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আমাদের মুরুব্বি, আমাদের অভিভাবক। তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি আবার এই আসনের এমপি হয়ে এলাকার আরো ব্যাপক উন্নয়ন করবেন। নুর ভাই যতোদিন নীলফামারী-২ (সদর উপজেলা) আসনে নির্বাচন করবেন, ততোদিন আমি এ আসনে মনোনয়ন চাইব না। সদর আসন বাদে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মমতাজুল হক বলেন, নীলফামারী-২ বাদে যেকোন আসন থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছি। জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির অভিভাবক নুরভাই যে আসনের প্রার্থী আমি সেখানো মনোনয়ন চাওয়ার সাহস রাখি না।
এদিকে জেলা জাতীয় পাটির সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদ পারভেজ মনোনয়ন চাচ্ছেন নীলফামারী-৩ আসন থেকে। তিনি বলেন, নীলফামারী সদর আসাদুজ্জামান নূরের নির্বাচনী এলাকা। তিনি দীর্ঘ দিনের এমপি, সরকারের একজন শক্তিশালি মন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক আছে জাপার। আগামীতে জোটগত নির্বাচন হলে তিনিই (নূর) মনোনয়ন পাবেন। একারণে জাপা থেকে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করছেন না এ আসনে।
অতি পুরাতন সংগঠন এ আসনে আওয়ামী লীগের রয়েছে অতীত ঐতিহ্য। সে ঐতিহ্য আরো অর্থবহ হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জান নূরের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে। কিন ইমেজের ব্যক্তি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের আদর্শের নেতৃত্বের প্রভাব পড়েছে গোটা জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাঁর গ্রহনযোগ্যতা সকল স্তরের মানুষের কাছে। এই কা নে উন্নয়ন, নিজস্ব উদ্যোগে বিভিন্ন জনহিতকর কাজ আরো গ্রহনযোগ্য করেছে তাঁকে।
এ ব্যাপারে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর উত্তরবাংলাডটকমে বলেন একাধারে আমি এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসছি। এবারো আমি এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।

বিএনপি জোটঃ- এ আসনে দলীয় একক মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মো. সামসুজ্জামান। তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
পেশা জীবনে তিনি একজন শিল্পপতি। আসনটি থেকে বিএনপি-জামায়াতের জোটগত নির্বাচনে জোটের হয়ে নির্বাচন করে জামায়াতের প্রার্থী। সে সময়ে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় জোটের আসন ভাগাভাগি।এব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুজ্জামান বলেন,‘এ আসনে একাধিকবার জামায়াতের প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। বর্তমানে জামায়াতের চেয়ে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালি। নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত রয়েছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীই প্রয়োজন আসনটিতে।’ আসনটিতে আমরা জামায়াতকে আর ছাড় দিতে চাই না।
জামায়াতের পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মনিরুজ্জামান মন্টু। তিনি জোটের প্রার্থী হয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন।এ আসনের প্রার্থী নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন,‘জোটগত নির্বাচনে আসনটিতে বরাবরই জামায়াতের ভাগে ছিল। এবারেও থাকবে।

ন্যাপ সহ অন্যান্য দলঃ-বিএনপি জামায়াত জোট ও ব্যারিষ্টার কামাল হোসেনের ঐক্য হতে বেরিয়ে আসা এই আসনে ন্যাপের পক্ষে প্রার্থী দেয়া হবে। দলটির জেলা সভাপতি ফরহানুল হক ন্যাপের পক্ষে প্রার্থী হতে পারেন। এই আসনে বাম দলগুলোর তেমন উল্লেখযোগ্য প্রার্থী মাঠে না থাকলেও সিপিবির পক্ষে শ্রীদাম দাস প্রার্থী হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই আসনটিতে তাদের প্রার্থী হিসাবে জহুরুল ইসলামের নাম ঘোষনা দিয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3461130763037258986

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item