ঠাকুরগাঁও-৩ আসন ‘ছাড় দিতে কেউ রাজি নয়’

জে.ইতি ঘুরে হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ

: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। এ আসনটি নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রত্যেকটি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কেউ ছাড় দিতে রাজি নয় এ আসনটি।

স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও মহাজোট ও জোটের কারণে দলটির সমর্থনে কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও জাতীয় সংসদের ৫ নম্বর আসনটিতে জোট বা মহাজোটের সমীকরণ সামনে চলে আসতে পারে। সেই ক্ষেত্রে মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কার্যত লড়াই হবে শরিক দলের নেতাদের। 

অন্যদিকে বিএনপি এ আসনে কখনোই জয়ী হতে পারেনি। তবুও আশা ছাড়েনি দলটি। এখন পর্যন্ত দলের একজন নেতাকে মাঠে তৎপর থাকতে দেখা যাচ্ছে।

জানা যায়, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হককে পরাজিত করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ। আর তখন থেকেই আসনটি হাতছাড়া হয় আ.লীগের। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক, জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল¬াহ শহীদ। কিন্তু মহাজোট হওয়ার কারণে সেইবার কেন্দ্রের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয় আ.লীগ প্রার্থী ইমদাদুল হককে। তবে মাঠে থেকে যান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী।

নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ওই নির্বাচনে বিএনপিকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন মহাজোটের জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ। তবে বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমান অন্যবারের চেয়ে সেবার প্রায় ছয় গুণ ভোট পেয়েছিলেন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান ইমদাদুল হক, জাতীয় পার্টি থেকে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। আবারও কেন্দ্রের নির্দেশনায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয় আ.লীগের ইমদাদুল হককে। আবারও মাঠে থেকে যান ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দীনের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ান ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সমর্থন দেওয়ায় ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জয়লাভ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী।

এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও রাণীশংকৈল উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা জাহান লিটা, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক ও রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক সহিদুল হক।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক আবারো দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় এলাকার তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না। তাই আওয়ামী লীগের হাতকে আরো শক্তিশালী ও এলাকার উন্নয়ন করতে সাধারণ মানুষ তাঁকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। তিনি প্রার্থী হলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলেও আশাবাদী ইমদাদুল হক।

মাঠে বসে নেই ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের রয়েছে নানা অভিযোগ।

দলটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, বর্তমান ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি ইয়াসিন আলী স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেন। তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করে এবং বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দের টাকার ভাগ নিচ্ছেন। নিজের আখের গোছাতে তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষতি করে যাচ্ছেন। আর তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট।

স্থানীয়রা জানান, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ইয়াসিন আলী ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু এলাকার জনগণের কি লাভ হয়েছে। এলাকায় কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন নেই। এমপি সাহেব নিজের পকেট ভর্তে ব্যস্ত থাকেন; তাই এলাকার জনগণ এমন একজন এমপি চান, যার দ্বারা এলাকার উন্নয়ন হবে। 

অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী অস্বীকার করে বলেন, সততার সঙ্গে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য ক্ষমতাসীন দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা করতে না পেরে তাঁর নামে বিভিন্নভাবে কুৎসা রটাচ্ছেন। 

ইয়াসিন আলী বলেন, তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে এলাকার উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আগে থেকেই তিনি খুব স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি জানান, ১৯৮০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে সময় তিনি দীর্ঘদিন ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮২ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। বর্তমানে তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির সভাপতি।

ইয়াসিন আলী বলেন, তিনি সাধারণ মানুষের পাশেই রয়েছেন এবং তাদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামীতে দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেলে তিনি আবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশা করছেন।

অন্যদিকে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন দলীয় কোন্দল ও বিভেদ না থাকায় সাংগঠনিক অবস্থান বেশ মজবুত। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই মাঠ গুছিয়ে রেখেছে দলটি।

দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা বলেন, তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির পদে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালে বিপুল সমর্থন নিয়ে তিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর একই সময় তিনি ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হন। তিনি নিজ এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন। সাধারণ মানুষের আপদে-বিপদে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছেন। আর এ কারণেই নিজ দলের নেতাকর্মী ও এলাকার সাধারণ মানুষের সমর্থনে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন তিনি।

সেলিনা জাহান লিটা আরো বলেন, তাঁর বাবা প্রয়াত আলী আকবর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের একজন আদর্শবান, সৎ ও বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। এছাড়া ২০০১ সাল থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ও সরকারদলীয় সংসদ সদস্য না থাকায় এলাকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর বর্তমানে যিনি সংসদ সদস্য তিনি বিশেষ একটা পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই নির্বাচিত হয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি রাজনীতিতে একেবারেই নতুন। তাঁকে দিয়ে এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সব দিক বিবেচনা করে এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবেন।

অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জাহিদুর রহমান জাহিদকে মাঠে তৎপর থাকতে দেখা যাচ্ছে। দলীয় কর্মীদের নিয়ে চায়ের দোকানে আড্ডা থেকে শুরু করে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, তিনি পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। অনেক কষ্ট করে এই উপজেলায় তিনি দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এবার তাঁর হয়ে নির্বাচন করবে। গ্রামে অনেক ভোট রয়েছে বিএনপির। বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন পেলে এবার এ আসনে দলের বিজয় সুনিশ্চিত। তাই তিনি দলের মহাসচিবের কাছে মনোনয়ন চাইবেন।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার একটু আগে থেকেই দলকে সুসংগঠিত ও কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগ করছেন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ। এবার তিনি এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত প্রাণ। দলের ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে আসছেন তিনি। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি তাঁর এ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও এ অঞ্চলের মানুষ তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসে। এ আসনে তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচিত হলে আবারও এ এলাকার শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে হাফিজ উদ্দীন আহম্মদ দাবি করেন।

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচন 3927495815806200046

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item