চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেলপথের নির্মান কাজে অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দিলেন প্রধানমন্ত্রী




ইনজামাম উল হক নির্ণয় ॥
প্রায় ৫ দশক ধরে বন্ধ হয়ে যাওয়া নীলফামারীর চিলাহাটি -হলদিবাড়ি রেলপথে ভারতের সঙ্গে সরাসরি রেলযোগাযোগ পুনরায় স্থাপনের হতে যাচ্ছে। এ জন্য  জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ বরাদ্দের অনুমোদনে জেলা জুড়ে আনন্দ ও খুশীর বন্যা দেখা দিয়েছে।

 আনন্দ খুশীতে এখন আতœহারা উত্তরের নীলফামারী জেলার মানুষজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ বুধবার সন্ধ্যার পর ডোমার উপজেলার চিলাহাটিতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সরকার ফারহানা সুমীর আয়োজনে শেখ রাসেল শিশু পরিষদের পক্ষে আনন্দ মিছিল করা হয়।
এদিকে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ জানান আগামী রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা শহরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশাল আনন্দ শোভার আয়োজন করা হয়েছে।

              
                 উত্তরবঙ্গের শেষ সীমান্ত নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ষ্টেশনের ওপারে ভারতের সীমানা হতে হলদীবাড়ি হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত রেলপথের নির্মানকাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এবার বাংলাদেশ অংশের সাড়ে ৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মান হতে যাচ্ছে। এরপর চালু হবে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি রেলযোগাযোগ।ভারতের সঙ্গে রেলসংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় উক্ত একনেকের সভায়। পাঁচ দশক আগে  বন্ধ হয়ে যাওয়া নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগটি ফের সচল হলে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ট্রেনে জলপাইগুড়ি,কোচবিহার, শিলিগুড়ি ও  দার্জিলিংয়ে যাওয়া যাবে। চলাচল করবে হিমালয় মৈত্রী ট্রেন।
বর্তমানে চিলাহাটি হতে ঢাকা,খুলনা ও রাজশাহী পথে আন্তনগর ট্রেন সরাসরি চলাচল করছে। ভারতের সঙ্গে রেলযোগাযোগ হলে এ এলাকার আমুল পরিবর্তন হবে।
জানা যায় বাংলাদেশের  অংশে প্রায় সাড়ে ৭  কিলোমিটার ও ভারতের হলদীবাড়ি অংশে ৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ পুনরায় স্থাপনের লক্ষে  ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই  পরিত্যক্ত রেলপথটি  পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতা এটি বলে জানা গেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বাংলাদেশের চিলাহাটির অংশে ২০১৯ সালে  মধ্যে রেলপথটি নির্মাণের কাজ শুরু করে ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে শেষ করা হবে।

অপর দিকে ভারতের অংশের নির্মান কাজ ইতোমধ্যেই শেষ করা হয়েছে। সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের অংশের এই রেলপথ নির্মানে ৩১ কোটি রুপি বরাদ্দ দেয়। সেই বরাদ্দে ঠিকাদার নিয়োগ করে হলদিবাড়ি অংশের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের কাজ ২০১৭ সালের ৫ নবেম্বর শুরু করা হয়।  যা ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ  সমাপ্ত করে বাংলাদেশের সীমানা পর্যন্ত  পরীক্ষামূলকভাবে রেলের ইঞ্জিন চালানো হয়। এখন চলছে ভারতের হলদীবাড়ি রেলস্টেশনটিকে আন্তর্জাতিক মানের নির্মান কাজ।

বাংলদেশের চিলাহাটি রেলষ্টেশন হতে ভারতের সীমান্ত অংশের প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মান  প্রকল্পে যে ৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে  রেলপথ স্থাপন,বেশ কয়েকটি  ব্রীজ নির্মান ও চিলাহাটি রেলষ্টেশনকে আন্তর্জাতিক মানের স্টেশনে রূপান্তর করা হবে।
     
  ১৪৯ বছর আগের কথা। আজকের বাংলদেশের উত্তরের  নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শুরুটা ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েকে ঘিরে।  পলাশীর যুদ্ধে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ার পর ব্রিটিশরা এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স¤পদ আহরণের জন্য নির্মাণ করতে থাকে রেলপথ। আর সেই রেলপথগুলো পুরো ভারত উপমহাদেশকে একসঙ্গে বেঁধেছিল। সেই সময়ে ইংরেজ বেনিয়ারা সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠা করে বিশাল রেলওয়ে কারখানা, যা আজো বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা হিসেবে পরিচিত। আসাম-বেঙ্গল রেলপথকে ঘিরে ততকালীন ব্রিটিশ সরকার ১১০ একর জায়গার ওপর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিল।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট ভারত ভাগের পরও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি  মধ্যে এই ইন্টারচেঞ্জ চালু ছিল। সে সময় চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি স্টেশনের উজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করে এখনও গর্ববোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত হলদিবাড়ির সঙ্গে তদানীন্তর পাকিস্তানের রেল যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতার আগে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি দিয়ে সরাসরি কলকাতার যোগাযোগ ছিল। দার্জিলিং মেল ট্রেনটি তখন এই পথে দর্শনা হয়ে  যাতায়াত করতো।সেই সময় চিলাহাটি হলদিবাড়ির গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল।

 দেশ ভাগের পরেও চিলাহাটি থেকে একটিমাত্র ট্রেন হলদিবাড়ি চিলাহাটি। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তাও বন্ধ হয়ে যায়।এরপর এটি আর চালু হয়নি।
দীর্ঘ ৫ দশক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ির পরিত্যক্ত রেলপথ কে পুনরায় চালু করতে যাচ্ছেন। যা বদলে দিবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ির চেহারা।#

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2615512833763950049

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item