১১ বছরে কুড়িগ্রামে ১৪ হাজার পরিবার গৃহহারা

হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ


উজানে অপরিকল্পিত বাঁধ, নদীর সঙ্গে যুক্ত খাল-বিল-জলাধারগুলো ভরাট অথবা নিষ্কাশন পথ বন্ধ করার কারণে দেশের নদ-নদীগুলোয় পানিপ্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে অতিরিক্ত পলি জমে কমছে গভীরতা, বিপরীতে বাড়ছে প্রস্থ। স্বাভাবিক বর্ষাতেও সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ভাঙন।

কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলাসহ সবক’টি নদ-নদীর অবস্থা এমন। প্রতি বর্ষায় দুই পাড় ভেঙে প্রস্থে বাড়ছে। গ্রাস করছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও জনপদ।সরকারি হিসাবে, গত ১১ বছরে কুড়িগ্রামের নয় উপজেলায় নদীভাঙনে গৃহহারা হয়েছে ১৪ হাজার ২২৪টি পরিবার। আর গত দুবছরে এ ভাঙন দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়েছে সাত হাজার পরিবার। চলতি অর্থবছরের হিসাব এখনো নিরূপণ করা হয়নি।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পার্বত্য অরণ্য ধ্বংস করে চা ও রাবার বাগান করে ধসে
যাওয়ার ব্যবস্থা; উজানে পানির পুনঃসঞ্চালন ও সারা বছর পানি সরবরাহের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করার কারণে ব্রিটিশ আমলেই শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার মতো নদ-নদীর তলদেশ ভরাট। যে অনুপাতে ভরাট হয়, ঠিক সে অনুপাতে
দুকূল ভাঙতে থাকে। ফলে ঐতিহাসিক চিলমারী নদীবন্দরের মতো অনেক কালের সাক্ষী মুছে গেছে।

এক হিসাবে জানা যায়, গত ১০০ বছরে গভীরতা কমে, গ্রামগঞ্জ খেয়ে ব্রহ্মপুত্রের প্রস্থ বেড়েছে ১০ গুণ। একই অবস্থা তিস্তারও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, ১৫-২০ বছরের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার প্রস্থের ব্রহ্মপুত্র হয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার, দেড় কিলোমিটারের তিস্তা ও ধরলা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। ফলে স্বাভাবিক বর্ষায়ও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা,দুধকুমার, ফুলকুমার, গঙ্গাধর, জালছিঁড়াসহ ১৬টি নদ-নদী। এর মধ্যে সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ ব্রহ্মপুত্র। এর পরই আছে ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার। গতবারের মতো
চলতি বছরও এসব নদ-নদীর পাড়ে চলছে ভয়াবহ ভাঙন।সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা গ্রামে প্রায় এক কিলোমিটার ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিস্তার ভাঙন অব্যাহত আছে। ধরলা নদী ভাঙছে ফুলবাড়ী উপজেলা শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাইকাজী,ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের প্রাণকৃষ্ণ গ্রাম ও সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। আর ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্রভাঙন অব্যাহত রয়েছে রৌমারী উপজেলার বন্দবের ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
এছাড়া ভাঙছে রাজিবপুর, চিলমারী, কুড়িগ্রাম সদর ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে। অন্যদিকে দুধকুমার নদের ৫০ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে।

চলতি মৌসুমে নদ-নদী ভাঙনের কোনো হিসাব পাউবোর কাছে না থাকলেও ভাঙনকবলিত এলাকার দুই সহস্রাধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত দেড় হাজার ফসলি জমি।এদিকে তিস্তার তীব্র স্রোতে উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুড়ায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের বৃহত্তম টি-বাঁধের একটি অংশে ও রাজারহাট উপজেলার ডাংরাহাট এলাকায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বালির বস্তা ফেলে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে স্থানীয় পাউবো। যদিও অন্যান্য এলাকায় পাউবোর কোনো তত্পরতা চোখে পড়ছে না।এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,

তিস্তার ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে দুটি ও ধরলার ভাঙন রোধে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পগুলো পাস হলেই স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভিন জানান, ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলায় নদ-নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে ১৪ হাজার ২২৪টি পরিবার। এদের মধ্যে ঘর বাড়ি হারানো ৬ হাজার ৯৬৬ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ঢেউটিন ও নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে।ভাঙনকবলিত মানুষের দাবি, বাঁধ দেয়া এলাকায় ভাঙন বন্ধ হয়েছে। তারাও চান সরকার ত্রাণ না দিয়ে গ্রামরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করুক। তবে নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মত, নদী তীরবর্তী অধিবাসীদের প্রতিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। পাউবোর বাঁধ থাকার কারণে মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দারা ভিটা উঁচু করার কথা ভুলেই গেছে। ফলে হঠাৎ বাঁধ ধসে গেলে তারা অকূলপাথারে পড়েন। তাদের উচিত বসবাসের ঘর উঁচু করে নির্মাণ করা।


পুরোনো সংবাদ

কুড়িগ্রাম 689296287289941789

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item