চিরিরবন্দরে ভিক্ষুক পল্লী -ভূমিদস্যূদের অত্যাচার - নির্যাতনে উচ্ছেদ আতঙ্কে ১৪ পরিবার

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

  নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের উপকণ্ঠে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের দেবীগঞ্জবাজার সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি ভিক্ষুক পল্লী। এক সময় ওই পল্লীতে ১৬ টি ভিক্ষুককে পূনর্বাসন করা হয়। এবার ওই ভিক্ষুক পল্লীতে শকুনি দৃষ্টি পড়েছে এলাকার ভূমিদস্যুদের। এরই মধ্যে দুই নারী ভিক্ষুককে বিতাড়িত করে তাদের বসতভিটা জবর দখলে নিয়েছে দুই ভূমিদস্যু। এলাকার ওই ভূমিদস্যুরা ভিক্ষুক পল্লীর অপর ১৪ ভিক্ষুক পরিবারকেও উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সময়ে - অসময়ে কারণে অকারণে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নানা রকম অত্যাচার-নির্যাতন। তাদের ওপর চড়াও হয়ে হামলা চালিয়ে মারপিট করাসহ দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। ভূমিদস্যূদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দিয়েও  কোন রকম প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অমানবিক এ ঘটনায় ওই ভিক্ষুক পল্লীতে বসবাসরত পরিবারগুলো চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন।
ভিক্ষুক পল্লীর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় ওই ভিক্ষুক পল্লীতে বসবাসকারী পরিবারগুলোর সদস্যরা দিনের বেলা বাণিজিক শহর সৈয়দপুরে দিনের বেলা ভিক্ষা করতেন। আর রাতের বেলা  সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন ও শহরের ফুটপাতে রাত কাটাতেন। তাদের দুঃখ দুর্দশার বিষয়টি নজরে আসে সৈয়দপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও সাবেক এমপি  অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন সরকারের। তিনি ওই সব ছিন্নমূল পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র মো. আমজাদ হোসেন সরকার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮৬ সালের দিকে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা লাইফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় সৈয়দপুর শহরের কোলঘেঁষা দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ বাজারের পাশে ৪৪ শতাংশ জমি কিনে ১৬ ছিন্নমূল ভিক্ষুকদের পরিবারকে পুনর্বাসন করেন। সে সময় প্রত্যেক ভিক্ষুককে পৌণে তিন শতক জমি নিজ নিজ নামে কবলা দলিলমূলে করে দেওয়া হয়।  সেই থেকে ভিক্ষুক পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে সেই ভিক্ষুক পল্লীতে শকুনি দৃষ্টি পড়েছে ওই এলাকার কতিপয় ভূমিদস্যুর। ভূমিদস্যুরা তাদের উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পল্লীর ভিক্ষুক কমলা বেওয়া (৬৫) ও ছমিনা  বেওয়া (৬৮) জানান, একই এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে একরামুল হক ও আলিমুদ্দিনের ছেলে আফজাল হোসেন ভূমিদস্যূ  আমাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের উঠেপড়ে লেগেছেন। তাদের ভয়ে কিছু দিন আগে পল্লীর ভিখারিনী হেনা বেওয়া ও ছমিরন নেছা জীবনের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে চলে গেছেন। এ সুযোগে তারা ওই দুজনের বসতভিটা দখল করে নিয়েছে।
 সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখতার হোসেনের উপস্থিতিতে মৃত লাইলী বেগমের  বসতভিটায় ঘর তোলে একরামুল হক। এ সময় একরামুল হক ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বলেন মৃত লাইনীর ছেলের কাছ থেকে বসতভিটাটি তিনি তাঁর মেয়ে জামাইয়ের জন্য আট হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন। তাই সেখানে মেয়ে-জামাইয়ের জন্য ঘর তৈরি করছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। 
তাঁর এ কাজে পল্লীর অন্যরা বাধা দিলে তাদের বেদম মারধর করা হয়। গুরুতর আহত নুরুন নাহার (৪৫), ময়জান (৫৫) ও রফিকা (৪৮) বলেন, থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ আসেনি। বর্তমানে আমরা ১৪ পরিবার আতঙ্কে আছি। আমাদের  প্রাণনামেরসহ বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে ঘটনাস্থলে কথা হলে ফতেজংপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আখতার হোসেন ঘর তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এলাকায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে ওসির নির্দেশে আমি এখানে এসেছি। তিনি বলেন মৃত. লাইলীর ওয়ারিশ কেউ ফিরে এলে ঘরসহ জমি তাকে হস্তান্তর করা হবে।
 চিরিরবন্দর উজেলার ফতেজংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ লুনার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান।
চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  মো. হারেছুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ থানায় কোন অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।             

পুরোনো সংবাদ

দিনাজপুর 1790726002996394736

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item