কলেরা স্যালাইনের আবিষ্কারক ডঃ লতিফ মিয়ার জন্ম শতবার্ষিকী আজ

মামুনুর রশীদ মেরাজুলঃ

ডঃ আব্দুল লতিফ মিয়া। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক কৃতিমান ব্যক্তিত্ব। তিনি কলেরা স্যালাইনসহ টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, কলেরা ও গুটি বসন্তের টিকা এবং টিটেনাস টক্সয়েড তৈরি করে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেন। এই কৃতি সন্তানের বাড়ী রংপুরের পীরগঞ্জে। আজ ১ সেপ্টেম্বর তার শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কানাডা, ঢাকা ও পীরগঞ্জে বিশেষ দোয়া ও আলোচনা সভা করা হবে।
পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জের রায়পুর ইউনিয়নের কানঞ্চগাড়ী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ড. আব্দুল লতিফ মিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম তাসীর মামুদ সরকার, মাতা মরহুম আছিরন নেছার ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। পীরগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৪০ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১ম বিভাগে ম্যাট্রিক, ১৯৪২ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৪৪ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন। ১৯৫০-১৯৫১ শিক্ষাবর্ষে কলিকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ (রংপুরে প্রথম), ১৯৫৯-১৯৬০ শিক্ষাবর্ষে লাহোর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপিএইচ এবং ১৯৬৬ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেন। তিনিই পূর্ব পাকিস্থানে প্রথম মাইক্রোবায়োলজিতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী। কানাডায় ব্যাকটেরিওলজিতে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
১৯৫২ সালে সরকারি চাকুরিতে যোগ দিয়ে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং জাপানসহ অনেক দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি ব্যাকটেরিওলজিষ্ট, ভাইরোলজিষ্ট, প্রধান মাইক্রোলজিষ্ট এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতালে অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৮০ সালে অবসর গ্রহনের পর ১৯৮২-১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকায়
ICDDRB তে কনসালটেন্ট, মাইক্রোবায়োলজিষ্ট হিসেবে কাজ করেন।
ICDDRB হাসপাতালে থাকাকালীন ১৯৮৪ সালে এক বছরের জন্য সৌদি আরবের দাম্মামে
ICDDRBশাখায় উদারাময় নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কাজ করেন।
দেশে প্রথমবারের মত তিনি স্যালাইন ও টিটেনাস টক্সয়েড তৈরি করেন। এ ছাড়াও এ্যাসিটেট স্যালাইনসহ (কলেরা স্যালাইন) বিভিন্ন ধরনের স্যালাইন, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, কলেরা, গুটি বসন্তের টিকা ও টিটেনাস টক্সয়েড তৈরি করে দেওেশর ওষুধ শিল্পে অনবদ্য ভুমিকা রাখেন। এছাড়াও তিনি খাদ্য-পানি ও ঔষধ পরীক্ষা যাতে মানসম্পন্নভাবে তৈরি; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-এর আর্থিক সাহায্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে
Laboratory Technicians -এর জন্য 
Repressor Training -এর ব্যবস্থা; সরকারি হাসপাতালে
Pathologyতে মানসম্পন্ন
Reagent, Chemical সরবরাহ এবং মহামারী রোগ যাতে বিস্তার না করে তার প্রতি নজরদারী করেন।
তাঁর ১১টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ দেশি-বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে আহত এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধাহতদের সেবা করে তিনি সবার সুনজরে আসেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৮০ সালে তার অবসরের পর সরকার তার ২ বছর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।
ডঃ লতিফ মিয়ার ১ ছেলে, ২ মেয়ে। ছেলে ডাঃ তৌফিকুর রহমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা, বড় মেয়ে তৌফিজা খাতুন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা এবং ছোট মেয়ে ডা. তহমিনা খাতুন কানাডায় ডাক্তারী পেশায় রয়েছেন। তার স্ত্রী হাসনা আরা খাতুন (৮৫) বর্তমানে ঢাকায় নিজবাসভবনে ছেলের সাথে আছেন। আলোকিত মানুষটির জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ কানাডা, তার ঢাকাস্থ বাসভবন ও পীরগঞ্জে গ্রামের বাড়ীতে বিশেষ দোয়া ও আলোচনা সভা করা হবে। ডঃ লতিফ মিয়ার ছোট মেয়ে কানাডা প্রবাসী ডা. তহমিনা খাতুন বলেন, আমার বাবা বেশকিছু রোগের ওষুধ আবিস্কার করে দেশ এবং বিদেশের মানুষের জন্য উপকার করেছেন। তার জন্য পীরগঞ্জ, ঢাকা এবং কানাডায় পারিবারিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া করা হবে। তার কর্মকান্ডের উপর গবেষণা করার জন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। আলোকিত এই কৃতিমান ৯৬ বছর বয়সে ২০১৪ সালের ১৪ জুন বনানীস্থ নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

পুরোনো সংবাদ

স্বাস্থ্য-চিকিৎসা 5341157701870306791

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item