নীলফামারীতে ভিজিএফের চাল পাচারের ঘটনায় তদন্ত শুরু॥ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের মারপিটের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি ১২ আগষ্ট॥
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের ভিজিএফের চাল পাচারের ঘটনায় তদন্ত টিমের কাছে সাক্ষী দিতে এসে ইউপি চেয়ারম্যানের লোকদের লাঠিসোডায় হামলার শিকার হয়েছে বেশকিছু সাক্ষী। নিজেদের আতœরক্ষার জন্য সাক্ষীরা ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক’এ আশ্রয় নিতে গেলে সেখান হতে তাদের টেনে হিচড়ে বের করে বেধরক মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। এসময় কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজা জানালা ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। আজ রবিবার (১২ আগষ্ট) দুপুরে এই ঘটনাটি ঘটে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে। এ সময় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনায় তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাব বিস্তার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী আওতায় কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে ভিজিএফ কার্ডধারীরা এবার ১০ কেজির পরিবর্তে ২০ কেজি করে চাল পাবে। নীলফামারী জেলার ছয় উপজেলার ৬০ ইউনিয়ন ও ৪ পৌরসভায় ভিজিএফের চাল বিতরনের জন্য ৪ লাখ ৪ হাজার ৩১৫ কার্ডধারী পরিবারের জন্য ৮ হাজার ৮৬ দশমিক ৩০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়।
এরমধ্যে জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের জন্য ৬ হাজার ৩৭৫ কার্ডের বিপরিতে ১২৭ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার (৯ আগষ্ট) জলঢাকা উপজেলার সরকারী খাদ্যগুদাম হতে ধর্মপাল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান উক্ত ভিজিএফের চাল উত্তোলন করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসার পথে চাল বহনের একটি ট্রাক্টরের ট্রলি ৩০ কেজি ওজনের ২৪৬ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রির জন্য পাচারে পাশ্ববর্তী ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী বাজারে যায়।
সেখানে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তা আটক করে। খবর পেয়ে ডোমার থানা পুলিশ ট্রাক্টরের ট্রলিতে থাকা উক্ত চালের বস্তা গুলো জব্দ করে থানায় নেয়। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকায় তা প্রকাশ পেলে প্রশাসনের পক্ষে একটি তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে দেয়া হয়।
তদন্ত টিমের আহবায়ক জলঢাকা উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী হারুন আর রশীদ ও অপর দুই সদস্য একই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর গণি ওসমানী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান আজ রবিবার (১২ আগষ্ট) বেলা ১২টার দিকে ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদে ঘটনা তদন্তে  উপস্থিত হন।
এলাকাবাসী জানায় ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধর্মপাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান ও তার ছেলে বাবু পার্শ¦বর্তী গোলনা ইউনিয়ন হতে বিভিন্ন যানবাহনে প্রায় দেড় হাজার নারী পুরুষ নিয়ে এসে ধর্মপাল ইউনিয়নে সমবেত করে। এরা সকলে একই সুরে বলতে থাকে চেয়ারম্যান ভিজিএফের চাল পাচার করেনি। চেয়ারম্যান ৩০ মেট্রিক টন চাল বৃহস্পতিবার (৯ আগষ্ট) বিকালে দেড় হাজার কার্ডধারীর কাছে বিতরন করেছে। আমরা কার্ডধারীরা সকলে চাল পেয়েছি। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা ওই সকল নারী পুরুষদের নাম ঠিকানা ও ওয়ার্ড জানতে চাইলে তারা সেটি বলতে অস্বীকৃতি জানায়। তবে তাদের বহন করে নিয়ে আসা ইজিবাইক,ট্যাম্পু,ভ্যান চালকরা জানায় তারা ওই সকল নারী পুরুষদের গোলনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম হতে নিয়ে এসেছে ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদে।

এ সময় তদন্ত টিমের কাছে ইউপি চেয়ারম্যানের ওই চাল পাচারের ঘটনার সত্যতার সাক্ষী দিতে স্থানীয় যুবলীগ নেতা এরশাদ হোসেন সহ প্রায় ২০ জন ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদে আসে। এ সময় তাদের তদন্ত টিমের সামনে যেতে বাধা দিয়ে ধাওয়া করা হয়। এলাকাবাসী জানায় ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে বাবুর নেতৃত্বে তার বাহিনী লাঠিসোডা সহ তাদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকের ভেতর আশ্রয় নেয়। সেখানে চড়াও হয়ে হামলাকারীরা কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে তাদের টেনে হেচড়ে বের করে কিলঘুষি মারতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের রক্ষা করে নিরাপদে সরিয়ে দেয়।
এ সময় চেয়ারম্যানের ছেলে ও তার বাহিনীর লোকজন উপস্থিত বেশ কিছু সাংবাদিকদের বলেন ওরা মিথ্যে সাক্ষী দিতে এসেছিল তাই তাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। চেয়ারমান চাল পাচার করেনি আপনারা পেপারে লিখে দিবেন।
ধর্মপাল ইউনিয়নের সাধারন মানুষজন অভিযোগ করে জানায় যে সকল মানুষজনকে চেয়ারম্যানের পক্ষে সাফাই গাইতে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের ভিজিএফে চালের নামের তালিকা পরীক্ষা করলে স্পষ্ট হবে তারা ধর্মপাল ইউনিয়ন এলাকার না গোলনা ইউনিয়নের লোকজন। এক প্রশ্নের জবাবে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানায় গোলনা ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের শ্বশুড়বাড়ি ও অনেক প্রভাবশালী আত্বীয় স্বজন রয়েছে।

এদিকে তদন্ত টিমের কাছে সাক্ষী দিতে এসে তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়া যুবলীগ নেতা এরশাদ হোসেন ও ছাত্রলীগ নেতা আপেল মাসুদ সহ অনেকে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, দরিদ্রদের মাঝে ভিজিএফসহ বিভিন্ন সরকারী উপকরণ বিতরনে সবসময় চেয়ারম্যান অনিয়ম ও কালো বাজারে বিক্রি করে। এবার ভিজিএফের চাল উত্তোলনের সময় চেয়ারম্যানকে অনুসরন করা হয়। এজন্য জলঢাকা উপজেলা এলএসডি গোডাউন হতে জামিনুর চেয়ারম্যান যখন ভিজিএফের চাল উত্তোলন করে আমরা এলাকাবাসী অনুসরন করি। এতে দেখা যায় বৃহস্পতিবার (৯ আগষ্ট) রাতে দুটি চালের ট্রলি ইউনিয়ন পরিষদে না নিয়ে পাশ্ববর্তী ডোমার উপজেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আমরা বোড়াগাড়ি হাটে একটি ট্রলি আটক করে পুলিশে খবর দেই। পুলিশ ট্রাক্টক সহ ২৪৬ বস্তা চাল সহ ট্রলিটি আটক ও জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। আরেকটি ট্রলি চাল নিয়ে পালিয়ে যায়। রাতে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে পালিয়ে যাওয়া ট্রলির চাল গভীর রাতে চেয়ারম্যান তার ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে এসে গুদামে সেই চালের বস্তা সংরক্ষন করে।
তারা আরো জানায় আমরা প্রায় ২০ জন তদন্ত টিমের কাছে সাক্ষী দিতে গেলে ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে বাবুর নেতৃত্বে তাদের সন্ত্রাসীবাহিনী আমাদের মারধর ধরে তাড়িয়ে দেয়। তারা চাল পাচারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তদন্ত টিমের কাছে দাঁড়িয়ে সত্য ঘটনার সাক্ষী দিতে পারলাম না।  তারা আহত হয়ে এখন চিকিৎসা গ্রহণ করছে বলে জানায়।

তদন্ত টিমের কাছে ইউপি চেয়ারমান জামিয়ার রহমান চাল উত্তোলনের হিসাব ও বৃহস্পতিবার (৯ আগষ্ট বিকালে ৩০ মেট্রিক চাল বিতরনের নামের তালিকা দাখিল করে। তদন্ত টিমকে দেখা যায় ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে রক্ষিত চালের বস্তা বাহিরে বের করে বস্তা গণনার জন্য গুদাম হতে বাহির করে তা খামাল করতে। হিসাবে দেখা যায়, ধর্মপাল ইউনিয়নের জন্য ৬ হাজার ৩৭৫ কার্ডের বিপরিতে ১২৭ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চালের বরাদ্দের বিপরিতে ধর্মপাল ইউপি চেয়ারম্যান জামিয়ার রহমান ৯টি ওয়ার্ডের ৯ জন ইউপি সদস্যকে ৩০০টি করে ২হাজার ৭০০টি ও  সংরক্ষিত আসনের তিনজন নারী সদস্যকে ৩২৫টি করে ৯৭৫ টি সহ মোট ৩ হাজার ৬৭৫ ভিজিএফ কার্ড ভাগ করে দেন। বাকী দুই হাজার ৭০০ কার্ড ইউপি চেয়ারম্যান তার জিম্মায় রাখে।২৭০০ কার্ডের মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে ১ হাজার কার্ড ও বাকী ১৭০০ কার্ড তার ভাগে রয়েছে। সেই কার্ডের চাল তিনি বৃহস্পতিবার (৯ আগষ্ট) বিতরন করেছেন।

এ ব্যাপারে তদন্ত টিমের আহবায়ক জলঢাকা উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী হারুন আর রশীদ সাংবাদিকদের জানান তদন্ত করতে সময় লাগবে। আমরা ভিজিএফের চাল বিতরনের মোট চাল ও গুদামে সংরক্ষিত বস্তা গননা করতে সময় লাগবে। এর বেশী কিছু আমরা এখন বলতে পারবোনা।

এ ব্যাপারে ধর্মপাল ইউপি চেয়ারম্যান জামিনুর রহমান বলেণ আমি চাল পাচার করিনি। একটি পক্ষ আমাকে ফাসাতে মিথ্যে গজব ছড়িয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে সকল লোক এসেছে তারা সকলেই আমার ইউনিয়নের। যুবলীগ ছাত্রলীগের উপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন ওরা কারা আমি জানিনা। এলাকার লোকজনের সঙ্গে তাদের কোন সমস্যা হয়েছে হয়তো। এখন প্রশ্ন উঠেছে সরকারী খাদ্যগুদামের সিল মারা ৩০ কেজি ওজনের ২৪৬ বস্তা চাল যদি ধর্মপাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাচার না করে তাহলে ওই চালগুলো কার। এই চাল গুলোর ভবিষ্যত কি?তবে বোড়াগাড়ী এলাকার অনেকে জানান চাল ব্যবসায়ী মমিনুরকে আটক করলে বেরিয়ে আসবে পাচারকৃত চাল গুলো কার কাছে ক্রয় করেছেন তিনি।
জলঢাকা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান ঘর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মারামারির ঘটনার খবর পেয়ে এক প্লাটুন পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়।
নীলফামারীর নবাগত জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, ভিজিএফের চাল আত্মসাধের ঘটনায় তদন্ত টিম তদন্ত করছে। সেখানে স্বাক্ষীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে থাকলে পুলিশ ও ইউএনও বিষয়টি দেখবে। #






পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 3823869328104549815

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item