গংগাচড়ায় শিক্ষা চলে যাচ্ছে ক্লাসের বাইরে, কোচিং সেন্টারে

গংগাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধিঃ রংপুরের গংগাচড়ায় শিক্ষাব্যবস্থা নানা কঠিন রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে কোচিং বাণিজ্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী। শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদন্ড হয় তাহলে শিক্ষকরা সেই মেরুদন্ডের কারিগর। অথচ শতকরা ৫০ জন শিক্ষকের জন্য বদনাম হচ্ছে পুরো শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শিক্ষকরা যদি ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করতেন, তাহলে আলাদাভাবে কোচিং বা প্রাইভেটের প্রয়োজন হতো না। এখন বিদ্যালয়ে উপস্থিতির চেয়ে, কোচিংয়ে মনোযোগী হওয়াটাই মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ আছে, গংগাচড়ার প্রায় ৬০ ভাগ বিদ্যালয়ে পুরো সিলেবাস শ্রেণীকক্ষে শেষ হয়না। তাই শিক্ষা চলে যাচ্ছে ক্লাসের বাইরে। সেখানে চলছে কোচিং নামের শিক্ষা বাণিজ্য। কোচিং বাণিজ্য এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে,এখন নাকি শিক্ষকরা নৈতিকতা ছুড়ে ফেলে ক্লাসেই নিজের প্রচারণা চালান। পরীক্ষায় নাম্বার কম দেন, শ্রেনীকক্ষে ভালো না বুঝিয়ে তড়িঘড়ি পাঠ শেষ করে দেন।বাধ্য হয়েই ঐসব শিক্ষকদের কাছে টাকা দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কিংবা তাদের পছন্দের কোচিং সেন্টারে পড়তে চায় ছাত্র-ছাত্রীরা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে,গংগাচড়ার বেশিরভাগ কোচিং সেন্টারগুলো পরিচালিত হয় ভাড়া করা বাড়িতে। কোচিং সেন্টার নিয়ন্ত্রণ করেন একজন থেকে কয়েকজন পরিচালক।ক্লাস নেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো কোচিং সেন্টার শুধুমাত্র কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। সচেতন অভিভাবকদের প্রশ্ন তাদের পরিচালিত এসব কোচিং সেন্টার কতটুকু বৈধ? 

গংগাচড়া উপজেলা শহরের ভিতরেই রয়েছে সাইনবোর্ড লাগানো ১৩টি কোচিং সেন্টার রয়েছে। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত প্রাইভেট ব্যাচ এবং সাইনবোর্ড ছাড়াও ৫ থেকে ৭টি কোচিং সেন্টার। কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে,আরএ(প্রস্তুতি ব্যাচ) কোচিং সেন্টার, আল-ফালাহ্, কনফিডেন্স, নুরগৃহ বিদ্যাপীঠ, প্রতিভা, ড্যাফোডিল, নবগৃহ, প্রতিশ্রুতি,আলোকিত, অভিযান, বাবুল-ফালাহ্, নুরগৃহ, জ্ঞানগৃহ কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ড দৃশ্যমান।গোপন সূত্রে জানা যায়, এসব কোচিং সেন্টার পরিচালকরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গগণ কে ম্যানেজ করেই অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজ নিজ কোচিং সেন্টার। সকাল ৭টা এবং বিকেল ৫টার দৃশ্য দেখে মনে হয় একেকটি কোচিং সেন্টার যেনও একেকটি স্কুল। এসব কোচিং সেন্টারের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা বলে, "ক্লাসে স্যাররা ঠিকমতো পড়ান না। তাই কোচিংও করি আবার তাদের কাছে আলাদাভাবে প্রাইভেটও পড়ি।তাছাড়া তো ভালো রেজাল্ট করা যাবে না।" এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন অসহায়-গরীব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তারাও আটকা পড়েছে কোচিং কিংবা প্রাইভেট নামের নিয়মের ফাঁদে। সচেতন শিক্ষকরা বলছেন, কোচিং সেন্টার এখন অলিতে-গলিতে। আপনারা কয়েকটি বিষয় অনুসন্ধান করলে অনেক বিষয় জানতে পারবেন। নামকরা কোচিং সেন্টারগুলোতে কারা পড়ান?অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা? না,তাদের কোনো অভিজ্ঞ শিক্ষক নেই। যারা সেখানে পড়ান, তারা ‘ভাইয়া ও আপা’। অতি সহজলভ্য ডিগ্রি নিয়ে বেকার যুবক-যুবতীরা শিক্ষা বাণিজ্যে যোগ দিয়ে শহরে কোনোরকমে টিকে থাকেন কোনো কর্মের সন্ধানে। নামমাত্র ‘মজুরি’ তাদের দেওয়া হয়। মানবেতর জীবনযাপন করেন তারা। কিন্তু নিরুপায় হয়ে তারা এই কাজ করেন। তাদের হাতে গৎবাঁধা নোট।সেসব শিট শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে নানা কিসিমের টেস্ট নেওয়ার মচ্ছব। সে শিট শুধু মুখস্থ করতে হয়, সেখানে শেখার কিছুই নেই। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এই কোচিং বাণিজ্যের অপকর্মের সঙ্গী সরকারের অভ্যন্তরে সুবিধাভোগী কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের একাংশ। এখন দৈনিকের পৃষ্ঠাজুড়েও কোচিংয়ের বিজ্ঞাপন। এসব বেআইনি কাজ যাদের বন্ধ করার কথা সেই শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উঁচু পদের লোকেরাও চোখ বন্ধ করে থাকেন।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 2332183403918985104

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item