আগামীকাল নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার


ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট॥
আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হচ্ছে নীলফামারীর নবরূপে সাজানো শেখ কামাল স্টেডিয়ামের। আগামীকাল বুধবার (২৯ আগষ্ট) নবনির্মিত শেখ কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। এ ম্যাচটি দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হচ্ছে এ স্টেডিয়ামের। নীলফামারী জেলা ফুটবল অ্যসোসিয়েশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্বাবধানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন(বাফুফে) ওই আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচ ঘিরে নীলফামারীতে যেন এখন উৎসবের পরিবেশ। এই ম্যাচ ঘিরে তুমুল হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে নীলফামারী ছেড়ে রংপুর বিভাগের উত্তরের জেলাগুলোতে। এই হাওয়ায় শেষ হয়ে গেছে  ২১ হাজার টিকেট। টিকেটের জন্য হাহাকার চারিদিকে। এ মুহুর্তে যদি আরো ১ লাখ টিকেট ছাড়া হতো তাহলে হয়তো নিমিষেই তা শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু সে আশা ফুটবল প্রেমিদের গুড়িবালি। শেখ কামাল স্টেডিয়ামেই ধারনা ক্ষমতা ২১ হাজার।
গতকাল সোমবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে শ্রীলঙ্কা ও আজ মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) মঙ্গলবার সকালে বিমানে ঢাকা হতে বাংলাদেশ দল এসে পৌছে। তারা অবস্থান করছে রংপুর বিভাগীয় শহরের নর্থভিউ হোটেলে।
নর্থভিউ হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আজকের ম্যাচ নিয়ে দুই দলের কোচ ম্যানেজার ও অধিনায়ক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল রংপুর স্টেডিয়ামে নামে অনুশীলনে। অপর দিকে শ্রীলঙ্কা জাতীয় ফুটবল দল রংপুর হতে নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামে এসে অনুশীলন শেষে সন্ধ্যায় ফিরে যায় রংপুরে। আগামীকাল বুধবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে উভয় দল রংপুর হতে এসে নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মুখোমুখি হবে।

অন্যদিকে এই ম্যাচ ঘিরে বসে নেই শিশুরাও। প্রিয় নীলফামারী শহরকে সাজাতে রং তুলি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। শেখ কামাল ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন সড়কের দুই পাশে মনের মাধুরি মিশিয়ে ছবি আঁকছেন। এতে শোভা পেয়েছে ফুটবল ও ক্রিকেটের বড় বড় খেলোয়ারদের ছবি। এ ছাড়াও জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ছবি, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্র নাথ ও সুকান্তের ছবি।

ভিশন-২০২১ এর প্রধান সমন্বয়কারী ওয়াদুদ রহমান বলেন, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা একদিনের প্রীতি ম্যাচকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একশত কিশোর কিশোরী প্রিয় শহর নীলফামারীকে রাঙিয়ে দিতে তারা রং তুলি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। তিনি বলেন, আমরা সাজ সজ্জার প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ করে ফেলছি।
পুরো শহর ছেয়ে গেছে ফেষ্টুন ও ব্যানার দিয়ে। সাজ সাজ রব পড়ে গেছে নীলফামারী শহরে। ধুয়ে মুছে পরিস্কার করছে পুরো শেখ কামাল ষ্টেডিয়াম। খেলার শত ভাগ প্রস্ততি শেষ। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। আর এ সব কাজের তদারকি করছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থা। বাজারে কোন টিকিট নেই। ইতিমধ্যে সবটিকেটি বিক্রি হয়ে গেছে।

ওই দলের শিক্ষার্থী অদিতি রায় উর্মি ও শতাব্দী রায় দিপা বলেন, আগামীকাল (বুধবার-২৮ আগস্ট) আমাদের শহরে দুই দেশের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে জেলা শহরকে সাজাতে আমরা একশত শিক্ষার্থী ছবি আঁকার কাজ করছি।

এদিকে এই ম্যাচের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষ হলেও দম ফেলার সময় নেই নীলফামারী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক আরিফ হোসেন মুনের। সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং নীলফামারী জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফএ) সভাপতি ।
বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচ ঘিরে নীলফামারীতে যেন এখন উৎসবের পরিবেশ। ম্যাচ নিয়ে মধুর সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় ফুটবল সংগঠকরা। বিশেষ করে, আরিফ হোসেন মুন। সমস্যাটা হচ্ছে টিকিট। টিকিট প্রত্যাশিদের চাপে পারলে লুকিয়ে থাকেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
নীলফামারীর ফুটবলের বড় কর্তা হিসেবে আরিফ হোসেন মুনের ওপর দিয়েই ঝড়টা যাচ্ছে বেশি।চারদিকে টিকিটের জন্য হাহাকার। বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচের একটি টিকিট যেন সোনার হরিণ। টিকিটের অবস্থা জানতে চাইলে  আরিফ হোসেন মুন বললেন, যদি স্টেডিয়ামের দর্শকধারণ ক্ষমতা এক লাখ হতো, তাহলে কিছু মানুষ খেলা দেখতে পারতো।
বোঝাই যাচ্ছে, বুধবারের ম্যাচ ঘিরে টিকিট প্রত্যাশিদের চাপ কতোটা! আরিফ হোসেন মুন জানিয়েছেন, স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২১ হাজারের কিছু বেশি। টিকিট ছাপানো হয়েছে ২১ হাজার কয়েকশ। ২৬, ২৭ ও ২৮ আগস্ট টিকিট বিক্রির জন্য নির্ধারিত দিন ছিল; কিন্তু ইতোমধ্যেই টিকিট  শেষ। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ হোসেন মুন বেশ উল¬সিত ম্যাচটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ দেখে, আমার অনেক ভালো লাগছে, মানুষ যেভাবে আগ্রহ নিয়ে ম্যাচটি দেখার অপেক্ষা করছে। সবার সহযোগিতা চাই, যাতে ভালোভাবে ম্যাচটি আয়োজন করতে পারি।
গ্যালারিরের টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা, ভিআইপি এক হাজার। জেলা শহরের জন্য মূল্যটা কম নয়। তারপরও টিকিটের জন্য কাড়াকাড়িতে প্রমাণ করে, ঢাকার বাইরে ফুটবলের জনপ্রিয়তা এখনো আকাশচুম্বী।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, আমরা শহর জুড়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলায় তৈরী করা হবে। আইনশৃংখলা রক্ষাসহ সফল ভাবে খেলাটি শেষ করতে যাবতীয় প্রস্তুতির নেয়া হয়েছে। এতে র‌্যাব ও বিজিবি টহলে থাকবে।

প্রসঙ্গতঃ দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে শ্রীলঙ্কা খুবই পরিচিত এক নাম। এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর যশোরে ও ২৭ অক্টোবর রাজশাহীতে লঙ্কানদের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। যশোরে ১-১ গোলে ড্র করলেও রাজশাহীতে ১-০ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এ ছাড়া ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি যশোর শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৪-২ গোলের জয়টি ভুলে যাওয়ার কথা নয়। অনেক দিন বাদে বাংলাদেশের সামনে আবার লঙ্কানরা। দুই দলের জন্যই উত্তরবঙ্গের নীলফামারী শেখ কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হতে যাচ্ছে সাফ ফুটবলের ড্রেস রিহার্সাল। কারণ এর পাঁচ দিন পরেই ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সাফ মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ। পরের দিনেই ভারতের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা। ফলে প্রীতি ম্যাচের আড়ালে দুই দলের জন্যই ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সাফে গ্রুপ-এ-তে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান। গ্রুপ বি-তে শ্রীলঙ্কার সঙ্গী ভারত ও মালদ্বীপ।#


পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1960001117271663091

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item