ছিটমহল মুক্ত দিবসের তৃতীয় বর্ষ পালিত

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয় সাবেক ছিটমহল থেকে (১ আগস্ট)॥
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের তৃতীয় বর্ষপূর্তি পালনে মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮ টি মোমবাতি ও তিনটি করে মশাল প্রজ্বলন করা হয় প্রতিটি সাবেক ছিটমহলে। মোমবাতি ও মশাল প্রজ্বলনের সময় ৬৮ বছরের সেই অন্ধকার স্মৃতিকে মনে করতে নিভিয়ে নেয়া হয় ঝলমলে বিদ্যুতের আলো। সেই সঙ্গে নারী পুরুষ ও শিশুদের কন্ঠে মুখরিত হয়ে উঠে জয় বাংলার শ্লোগান-“জয় বাংলা বাংলার জয়”। শেখ হাসিনা এগিয়ে চলো সাবেক ছিটবাসীরা আছে তোমার সাথে। ছিটবাসীর মা জননী-শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা। মোমবাতি আর মশালের আলোয় এমন শ্লোগানে শ্লোগানে কম্পিত হলো নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সাবেক চারটি ছিটমহলে। দেখা মেলে বিলুপ্ত চার ছিটমহলের ১৫৭টি পরিবারের ৬৪৫ জন নারী পুরুষ শিশুর চোখে মুখে আনন্দের ঝলক।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার চারটি সাবেক ছিটমহলবাসীদের নেতা মিজানুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ফরহাদ হোসেন ও জয়নাল জানান কি পেলাম বা কি পেলাম না এটি বড় কথা নয়। যা পেয়েছি তা ঋণ সুধবার মতো নয়। আমরা ৬৮ বছর বন্দী জীবনে ছিলাম পরিচয়হীন। এখন বড় কথা আজ আমরা পেয়েছি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। পেয়েছি মা জননী শেখ হাসিনাকে। এর চেয়ে আর চাওয়া পাওয়ার কি থাকতে পারে। মা জননী আমাদের দেখবেন।
এদিকে ছিটমহল বিনিময়ের তৃতীয় মুক্ত দিবসের প্রথম প্রহরে মোমবাতী ও মশাল প্রজ্বলনের পর রং খেলা আর পিকনিকের আয়োজন চলে রাতব্যাপী।ওই চার ছিটমহলের আওতায় থাকা তিনটি ইউনিয়নের ইইপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম শাহীন, শরীফ বিন ফয়সাল ওরফে মুন ও রবিউল ইসলাম লিথন সাবেক ছিটবাসীদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে  পহেলা আগষ্ট সকাল হতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে করে দেয়। সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। পতাকা উত্তোলনে পর শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরন রাখা হয় সন্ধ্যা পর্যন্ত।
ছিটমহল বিনিময়ের তৃতীয় বর্ষপূর্তি পালনের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ স¤পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরের ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষ নানা আয়োজনে ছিটমহল বিনিময়ের তৃতীয় বর্ষপূর্তি পালন করছে। ছিটমহলগুলো বিলুপ্ত হয়ে মূল ভূখন্ডে যুক্ত হওয়ায় বদলেছে বাংলাদেশের মানচিত্র। ভাগ্য বদলেছে নতুন নাগরিকদেরও। মাত্র তিন বছরেই সব সুযোগ সুবিধা মেলায় উচ্ছসিত এই নতুন বাংলাদেশিরা। আমরা ছিটমহল বাসীরা দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দিত্ব জীবন যাপন করেছিলাম। ৬৮ বছরের বন্দী জীবনের অবসান ঘটে ছিটমহলবাসীর। নাগরিকত্ব মেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের প্রায় ৩৭ হাজার মানুষের। ভারতের নাগরিকত্ব পায় ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৪ হাজার মানুষ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সরকারের কটুনৈতিক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটমহল বিনিময় হওয়ায় আমরা এখন বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখন্ড পেয়েছি। আমরা গত ৩ বছর ধরে মুক্ত পাখির মতো জীবন কাটাচ্ছি। আমরা দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর নানা কর্মসূচি পালন করছি।
উল্লে¬খ্য, বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২ ছিটমহলের বাসিন্দাদের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশার তথ্যবহুল সংবাদ গণমাধ্যম কর্মীরা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পর ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির বাসতবায়ন আলো মুখ দেখতে শুরু করে।
পরে ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে মানবিক দৃঢ়তা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা ও মোদি সরকার। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বিনিময় হয় ভারত-বাংলাদেশের ১৬২ ছিটমহল।
ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকে ১৮১ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে ১১১টি ছিটমহলে উন্নয়ন কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সরকার।পাশাপাশি বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের এগিয়ে নিতে কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পাশাপাশি তারা পেয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকা সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, মসজিদ-মন্দির। নিশ্চিত করা হয়েছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, ভিজিডি, ভিজিএফ, নলকুপ, স্যানিটারী ল্যাট্রিনসহ সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা। #










পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 672646827970656892

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item