ডিমলায় দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের অতিরিক্ত টাকার চাপে এক ভ্যান চালকের আত্মহত্যা

বিশেষ প্রতিনিধি ৪ আগস্ট॥ এক নারী সহ দুই দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে ৩০ হাজার টাকার ঋন নিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার পরও আরো সুদের টাকার দাবির চাপ সহ্য করতে না পেরে  আব্দুল আজিজ(৪৮) নামের এক ভ্যান চালক বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নে ছাতনাই গ্রামে গতকাল শুক্রবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় এই ঘটনায় পুলিশ ওই ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করে আজ শনিবার (৪ আগস্ট) জেলার মর্গে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে। নিহত ভ্যান চালক উক্ত গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃস্টি হয়েছে। সাধারন মানুষজন দাদন ব্যবসায়ী দুইজনকে গ্রেফতার দাবি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ভ্যান চালক আব্দুল আজিজ গত আট মাস আগে একই উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের মধ্যছাতনাই গ্রামের সহির উদ্দিনের স্ত্রী দাদন ব্যবসায়ী সালেহা বেগমের(৩৫) কাছ থেকে ২০ হাজার ও একই গ্রামের অপর দাদন ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী ছেলে হাবিবুল্লাহ(৩৪) কাছ হতে  ১০ হাজার সহ মোট ৩০ টাকা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চার্জার ভ্যানগাড়ি ক্রয় করে। ইতোমধ্যে দাদনের মুল টাকা ফেরত ও ওই টাকা সুদ বাবদ সালেহাকে ৩০ হাজার ও হাবিবুল্লাহকে ১৫ হাজার, মোট তাদের ৪৫ টাকা বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু ওই দুই দাদন ব্যবসায়ী, ভ্যান চালক আব্দুল আজিজের কাছে আরো সুদের টাকা দাবি করে। কিন্তু ভ্যান চালক আব্দুল আজিজ ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শুক্রবার (৩ আগস্ট) দুপুরে দাদন ব্যবসায়ী সালেহা বেগম ও  হাবিবুল্লাহ দুইজন মিলে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল ইসলামকে নিয়ে হাজির হয় ভ্যান চালক আব্দুল আজিজের বাড়িতে। তারা সুদের আরো ১০ হাজার টাকা প্রদানের জন্য ভ্যান চালক আব্দুল আজিজকে প্রচন্ড ভাবে চাপ সৃস্টি করতে থাকে। এমন কি টাকা দিতে না পারলে তারা একটি  ৩শ টাকার স্টামে ভ্যানচালক আব্দুল আজিজের বাড়ির সঙ্গে লাগানো সুপারী বাগানের ৮ শতক জমি লিখে নেয়ার চেস্টা চালায়। এক পর্যায় ভ্যান চালক আব্দুল আজিজ ৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়ে ৭ দিন সময় চায়।

কিন্তু নাছরবান্দা দুই দাদন ব্যবসায়ী ৫ হাজার টাকা নিতে রাজি নয়। তারা ওই সুপারী বাগানটি লিখে দেয়ার জন্য পুনরায় চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে দাদন ব্যবসায়ী সালেহা বেগম চিৎকার করে বলতে থাকে টাকা দিবিনা। আজ  তোর (ভ্যান চালক আব্দুল আজিজ) বাড়িতে সারা রাত থাকবো। পরের দিন থানায় দিয়ে তোর বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দায়ের করবো। ঘটনাটি দুপুর হতে বিকাল গড়িয়ে গেলে ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ দাদন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকা ৩০০ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেই ঘরে থাকা কিটনাশক পান করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাৎক্ষনিকভাবে উক্ত দুই দাদন ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্য পালিয়ে যায়।

এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন ভ্যান চালক আব্দুল আজিজকে বাঁচানোর চেষ্টায় ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে সন্ধ্যা নাগাদ তার মৃত্যু হয়। তারা মরদেহ বাড়ি ফিরে নিলেও পুলিশ খবর পেয়ে রাতে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয় ও শনিবার (৪ আগস্ট) দুপুরে জেলার মর্গে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে।

এ ব্যাপারে ভ্যান চালক আব্দুর আজিজের স্ত্রী হাফিজা বেগম কান্নাবিজরিত কন্ঠে তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য উক্ত দুই দাদন ব্যবসায়ীকে দায়ি করে সাংবাদিকদের জানায় ৭ মাস আগে তার স্বামী চার্জার ভ্যান ক্রয়ের জন্য সুদের উপর সালেহার নিকট ২০ হাজার ও হাবিবুল্লাহ নিকট ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল। ইতোমধ্যে সুদ ও আসল মিলে তাদের  ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। দাদন ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ সুপারী বাগানে ৮ শতক জমি দাবী করে। আবার সালেহা ধর্ষন মামলার হুমকী দেয়। ফলে তার স্বামী বিষপানে আতœহত্যা করতে বাধ্য হয়। আমি তাদের গ্রেফতার ও  বিচার চাই।

এদিকে ইউপি সদস্য বাবুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন আমি সালেহা ও হাবিবুল্লাহসহ আজিজের বাড়ীতে গিয়েছিলাম। দাদনের সুদের ও আসল টাকা ফেরত নিয়ে সেখানে গন্ডগোল হয়। ওদের গোন্ডগোল দেখে  আমি চলে আসি। পরে জানতে পারি ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ বিষপান করেছে।

পুর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন ঘটনাটি মর্মান্তিক। দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

ডিমলা থানার ওসি মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন মামলা হয়েছে। ওই দুই দাদন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারে চেস্টায় অভিযান চলছে। তবে আজ শনিবার (৪ আগস্ট) বিকাল ৬টা পর্যন্ত তাদের পাওয়া যায়নি। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5238575634321458499

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item